সংস্কৃত শতৃ ও শানচ্ প্রত্যয়

এখানে আমরা সংস্কৃত শতৃ ও শানচ্ প্রত্যয় নিয়ে আলোচনা করবো। সংস্কৃত ভাষা অধ্যয়ন ও শিক্ষা তথা অনুবাদ শিক্ষার জন্য সংস্কৃত শতৃ ও শানচ্ প্রত্যয়ের জ্ঞান থাকা বাঞ্ছনীয়। সংস্কৃত শতৃ ও শানচ্ প্রত্যয়ের যথাযথ ধারণা না থাকলে, সংস্কৃত ভাষায় অনুবাদ করা সম্ভব নয়। সংস্কৃত শতৃ ও শানচ্ প্রত্যয় সপ্তম, অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এছাড়াও স্নাতক ও স্নাতকোত্তর , WBSSC(SLST) পরীক্ষার্থীদের এই ধাতুরূপ কন্ঠস্থ করতে হবে।

সংস্কৃত শতৃ ও শানচ্ প্রত্যয়

বাংলা ভাষায় আমরা এক ধরনের বাক্য প্রয়োগ করি— সে হাসতে হাসতে আসছে। সে নাচতে নাচতে যাচ্ছে। আমি বালকটিকে কাঁদতে দেখলাম। আমি একটা সাপকে ঘরের মধ্যে ঢুকতে দেখলাম, ইত্যাদি। এইসব বাক্যে হাসতে হাসতে মানে হাসিরত, নাচতে নাচতে মানে নৃত্যরত, কাঁদতে মানে ক্রন্দনরত, ঢুকতে মানে প্রবেশরত। এইসব ক্রিয়াগুলিকে বোঝাতে সংস্কৃত ভাষায় ধাতুর পর শতৃ ও শানচ্ প্রত্যয়ের ব্যবহার হয়। এখানে আমরা এই সঃস্কৃত শতৃ ও শানচ্ প্রত্যয় নিয়ে আলোচনা করব। সংস্কৃত শতৃ ও শানচ্ প্রত্যয়।

শতৃ ও শানচ্ প্রত্যয়ের কিছু নিয়ম

1)লটঃ শতৃ-শানচাবপ্রথমাসমানাধিকরণে :— লট্ বিভক্তির স্থানে পরস্মৈপদী ধাতুর পর ‘শতৃ’ এবং আত্মনেপদী ধাতুর পর ‘শানচ্’ প্রত্যয় হয়। আর উভয়পদী ধাতুর উত্তর ‘শতৃ’ ও ‘শানচ্’ উভয় প্রত্যয়ই হয়। শতৃ প্রত্যয়ের অৎ হয়। আর শানচ্-এর সাধারণত আন বা মান হয়।

সুত্রে একটা নিয়ম বলা হয়েছে—এই শতৃ ও শানচ্ প্রত্যয় দুটো ব্যবহার হবে ‘অপ্রথমাসমানাধিকরণে’ অর্থাৎ অপ্রথমা বিভক্তিতে সমানাধিকরণে। উদাহরণের সাহায্যে ব্যাপারটা বোঝানো যেতে পারে। পঠন্তং বালকং পশ্য। পাঠরত বালকটিকে দেখো। এখানে, পঠন্তং পদে দ্বিতীয়া বিভক্তি রয়েছে অর্থাৎ অপ্রথমা বিভক্তি আর পদটির অর্থ হল, যে পড়ছে তাকে। আর যে বালকটিকে দেখতে বলা হচ্ছে, সেই বালকটি পাঠরত, তাই সমানাধিকরণ হয়েছে।

পঠন্তং পদে শতৃ প্রত্যয় হয়েছে। আর যদি বলা হয়, শয়ানং শিশুং পশ্য, তবে সেক্ষেত্রে শয়ানং পদে শানচ্ প্রত্যয় হয়। অর্থ সেই আগের মতো অপ্রথমা বিভক্তিতে এবং সমানাধিকরণে।

কিন্তু পাণিনি এমন নিয়ম করলেও প্রথমা বিভক্তিতে সমানাধিকরণেও শতৃশানচের ব্যবহার সংস্কৃত ভাষায় হয়েছে। যেমন— হসন্ আয়াতি বালকঃ। এখানে হসন্ প্রথমা বিভক্তিতে রয়েছে এবং যে বালক আসছে সেই হাসছে। তাই সমানাধিকরণও হয়েছে।

2) ধাতুসম্বন্ধে প্রত্যয়াঃ :— আগের সূত্রে বলা হয়েছে যে বর্তমান কালে শতৃ ও শানচের প্রয়োগ হয়। কিন্তু এই নিয়ম একটি সাধারণ নিয়ম। তাই অন্য ক্ষেত্রেও প্রয়োগ দেখা যায় এবং সেই ক্ষেত্রটির উল্লেখ রয়েছে বর্তমান সূত্রটিতে। সমাপিকা ক্রিয়াটি যদি বর্তমান ভিন্ন অন্য কালেও প্রযুক্ত হয়, তাহলেও সেই ক্রিয়ার সঙ্গে সম্বন্ধ হয়ে শতৃ শানচ্ প্রত্যয় দুটি ভিন্নকালেও প্রযুক্ত হতে পারে। যেমন, ভট্টিকাব্যে রয়েছে— “শ্রিয়ং দধানাং শরদং দদর্শ।” দধানাং পদে শানচ্ প্রত্যয় হয়েছে আর দদর্শ পদে রয়েছে লিট্। বর্তমানকালীন শরৎকে অতীতকালে দেখেছিলেন এটার অর্থ সংগত হয় না। তাই শানচ্ প্রত্যয়টিকে এখানে অতীতকালেই ধরতে হবে। এরকম আরও প্রয়োগ রয়েছে। যেমন, শিশুপালবধে রয়েছে, “বসন্ দদর্শবিতরন্তমম্বরাৎ।” বসে বসে তাকে আকাশ থেকে নামতে দেখেছিলেন। বর্তমান কালে বসে বসে অবতরণরত কাউকে অতীত কালে দেখেছিলেন এই অর্থ অসংগত। তাই সমাপিকা ক্রিয়ার কালের সঙ্গে বিশেষ্য-বিশেষণভাবে প্রযুক্ত হবে শতৃ শানচের কালটি।

3) আনে মুক্‌ :— ‘অ’কারযুক্ত ভ্বাদি, দিবাদি ও তুদাদিগণীয় ধাতুর পরবর্তী ‘আন’ (শানচ্) প্রত্যয়ের পূর্বে ‘ম’কার আগম হয়। আত্মনেপদী ধাতুর ক্ষেত্রে লট্-এর ‘তে’ বিভক্তিতে যে পদ হয়, সেই পদে ‘তে’র ঠিক আগে যদি ‘অ’ থাকে, তাহলে সেই ‘তে’ স্থানে ‘মান’ শব্দ বসালেই সেই ধাতুর শানচ্ প্রত্যয়ান্ত প্রাতিপদিকের রূপটি পাওয়া যায়। যেমন, সেব্‌—সেবতে— সেবমান, লঙ্— লভতে—লভমান, বৃৎ—বর্ততে—বর্তমান। এইরকম, দীপ—দীপ্যমান, বিদ্‌—বিদ্যমান, — ম্রিয়মাণ ইত্যাদি। কিন্তু কৃ—কুর্বাণ, শী—শয়ান, অধি-ই (to read) শানচ্—অধীয়ান ইত্যাদি।

4) লক্ষণহেত্বোঃ ক্রিয়ায়াঃ :— ক্রিয়ার লক্ষণ এবং হেতু অর্থে ধাতুর পরে শতৃ ও শানচ্ প্রত্যয় হয়। লক্ষণ মানে পরিচায়ক বা জ্ঞাপক। অর্থাৎ অন্য ক্রিয়ার জ্ঞাপক অর্থে শতৃ শানচ্ প্রত্যয় হয়। আর হেতু মানে কারণ। অর্থাৎ কার্যকারণভাবে অন্য ক্রিয়ার যে কারণ, সেই অর্থে শতৃ শানচ্ প্রত্যয় হয়। এখন যথাক্রমে উদাহরণ দেওয়া যাক। লক্ষণার্থে—

  • আসীনঃ করোতি। কীভাবে করছে, এই প্রশ্নে উত্তর হল বসে বসে করছে।
  • শয়ানঃ ভুঙ্ক্তে। কীভাবে খাচ্ছে, এই প্রশ্নে উত্তর হল শুয়ে শুয়ে খাচ্ছে

হেতু অর্থে—

  • অর্জয়ন্ বসতি। উপার্জন করছে বলেই বাস করছে। এখানে উপার্জনই বাস করার হেতু।
  • অনুরূপ – হরিং পশ্যন্ মুচ্যতে। পঠন্ বালকঃ পরীক্ষায়াং উত্তীর্ণঃ ভবতি।

5) মাঙ্যাক্রোশে :— নিন্দা অর্থে মাঙ্ শব্দের প্রয়োগে ধাতুর পরে শতৃ ও শানচ্ প্রত্যয় হয়। যেমন, “মা জীবন্ যঃ পরাবজ্ঞাদুঃখদগ্ধোঽপি জীবতি” (মাঘের শিশুপালবধে)। অন্যের অবজ্ঞায়, দুঃখে দগ্ধ হয়েও যে বেঁচে থাকে, তার বেঁচে থাকা নিন্দনীয়।

6) ঈদাসঃ :— অদাদিগণীয় আস্ ধাতুর পর শানচ্ (আন) প্রত্যয়ের আ-কার ঈ-কার হয়। যেমন— আস্ — আসীনঃ, উদাসীনঃ।

7) বিদেঃ শতুর্বসুঃ :— অদাদি গণীয় বিদ্ ধাতুর পরবর্তী শতৃ প্রত্যয়ের স্থানে বিকল্পে বস্ আদেশ হয়। যেমন— বিদ্‌+শতৃ—বিদ্বস্‌ বিদ্বান্, বিদ্বাংসৌ, বিদ্বাংসঃ। বিকল্পে বিদৎ বিদন্, বিদন্তৌ, বিদন্তঃ।

8) ইঙ্-ধার্যোঃ শত্রকৃচ্ছ্রিণি :— অধিপূর্বক ই-ধাতুর এবং ধারি ধাতুর অনায়াসে অর্থে শতৃ প্রত্যয় হয়। অধীয়ন্ সকলং শাস্ত্রম্ আজগামঃ দশাননঃ। অনায়াসে সব শাস্ত্র অধ্যয়ন করে দশানন ফিরে এলেন। ধারয়ন্ কুণ্ডলম্। মানে অনায়াসে কুণ্ডল ধারণ করে। যদি কষ্ট করে পড়েছে বা কষ্ট করে ধারণ করেছে—এরকম অর্থ বোঝায় তাহলে শতৃ প্রত্যয় হবে না। এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে অধিই ধাতু আত্মনেপদী, তাই শানচ্ প্রত্যয় হওয়া উচিত। কিন্তু অনায়াস অর্থ বোঝাতে শত প্রত্যয় হয়েছে। নিয়ম অনুসারে যদি পঠনরত এই অর্থ হয় তাহলে শানচ্ প্রত্যয়ই হবে— “অধীয়ানঃ” ইত্যাদি।

9) দ্বিষোঽমিত্রে :— শত্রু অর্থে ‘দ্বিষ্’ ধাতুর পর শতৃ প্রত্যয় হয়। যেমন— দ্বিষন্ মানে শত্ৰু । স্ত্রীলিঙ্গে— দ্বিষতী।

10) অর্হঃ প্রশংসায়াম্ :— প্রশংসা অর্থে অর্হ্ ধাতুর পর শতৃ প্রত্যয় হয়। যেমন— মুনিঃ পূজাম্ অর্হন্ ন স হননম্ অর্হতি। মুনি পূজার যোগ্য, তাঁকে কখনও হত্যা করা উচিত নয়। “ত্বমহতাং প্রাগ্রসরঃ স্মৃতোঽসি নঃ” (কালিদাসের অভিজ্ঞানশকুন্তলে)—আপনি পূজনীয়দের মধ্যে প্রধান, আমাদের স্মরণীয়।

শতৃ প্রত্যয়ান্ত কয়েকটি শব্দ

কয়েকটি ধাতুর সংস্কৃত শতৃ ও শানচ্ প্রত্যয় এর রূপ।

ধাতুধাতুর অর্থব্যুৎপত্তিপ্রত্যয়ান্ত শব্দ
অস্হওয়াঅস্ + শতৃসৎ
পঠ্পড়াপঠ্ + শতৃপঠৎ
প্রচ্ছ্প্রশ্ন করাপ্রচ্ছ্ + শতৃপৃচ্ছৎ
অদ্‌খাওয়াঅদ্‌ + শতৃঅদৎ
অশ্খাওয়াঅশ্ + শতৃঅশ্নবৎ
ক্রম্যাওয়াক্রম্ + শতৃক্রামৎ, ক্রাম্যৎ
ক্রীক্রয় করাক্রী + শতৃক্রীণৎ
ইষ্ইচ্ছা করাইষ্ + শতৃ ইচ্ছৎ
ক্রীড়্খেলা করাক্রীড়্ + শতৃক্রীড়ৎ
কুপ্রাগাকুপ্ + শতৃকুপ্যৎ
ক্ষম্ক্ষমা করাক্ষম্ + শতৃক্ষাম্যৎ
গ্ৰন্থ্গ্রথিত করাগ্ৰন্থ্ + শতৃগ্রন্থয়ৎ
মন্থ্মন্থন করামন্থ্ + শতৃমন্থৎ
পাপান করাপা + শতৃপিবৎ
দাদান করাদা + শতৃযচ্ছৎ
দৃশ্দেখাদৃশ্ + শতৃপশ্যৎ
স্থাথাকাস্থা + শতৃতিষ্ঠৎ
চিচয়ন করাচি + শতৃচিন্বৎ
জিজয় করাজি + শতৃজয়ৎ
জাগৃজাগাজাগৃ + শতৃজাগ্রৎ
ক্ষিপ্ছুঁড়ে ফেলাক্ষিপ্ + শতৃক্ষিপৎ
গম্যাওয়াগম্‌ + শতৃগচ্ছৎ
গৈগাওয়াগৈ + শতৃগায়ৎ
গর্জ্গর্জন করাগর্জ + শতৃগর্জৎ
বস্বাস করাবস্ + শতৃবসৎ
ব্রূ বা বচ্বলাব্রূ বা বচ্ + শতৃব্রূবৎ
বদ্বলাবদ্ + শতৃবদৎ
শম্উপসমশম্ + শতৃশাম্যৎ
শাস্নিয়ন্ত্রন করাশাস্ + শতৃশাসৎ
শ্রুশোনাশ্রু + শতৃশৃণ্বৎ
ভীভয় পাওয়াভী + শতৃভিভ্যৎ
ভক্ষ্খাওয়াভক্ষ্ + শতৃভক্ষিত
ভুজ্রক্ষা করাভুজ্ + শতৃভুঞ্জৎ
হ্বেডাকাহ্বে + শতৃহ্বয়ৎ
হন্হত্যা করাহন্ + শতৃঘ্নৎ
হস্হাসাহস্ + শতৃহসৎ
হ্রীলজ্জা পাওয়াহ্রী + শতৃজিহ্রিয়ৎ
রুদ্কাঁদারুদ্র + শতৃরুদৎ

শানচ্ প্রত্যয়ান্ত কয়েকটি শব্দ

ধাতুধাতুর অর্থব্যুৎপত্তিপ্রত্যয়ান্ত শব্দ
অধি-ইপড়াঅধি-ই + শানচ্অধীয়ান
আস্থাকাআস্ + শানচ্আসীন
কৃকরাকৃ + শানচ্কুর্বাণ
ক্রীক্রয় করাক্রী + শানচ্ক্রীণান
জন্জন্মগ্রহণ করাজন্ + শানচ্জায়মান
দাদান করাদা + শানচ্দদান
ধাধারণ করাধা + শানচ্দধান
বিদ্বিদ্যমান থাকাবিদ্ + শানচ্বিদ্যমান
ভুজ্খাওয়াভুজ্ + শানচ্ভুঞ্জান
বৃৎবর্তমান থাকাবৃৎ + শানচ্বর্তমান
বৃধ্বর্ধিত হওয়াবৃধ্ + শানচ্বর্ধমান
মৃমারা যাওয়ামৃ + শানচ্ম্রিয়মাণ
রুচ্রুচি হওয়ারুচ্ + শানচ্রোচমান
লভ্লাভ করালভ্ + শানচ্লভমান
শীশয়ন করাশী + শানচ্শয়ান
সহ্সহ্য করাসহ্ + শানচ্সহমান
সেব্সেবা করাসেব্ + শানচ্সেবমান
সূপ্রসব করাসূ + শানচ্সুবান
স্তুস্তুতি করাস্তু + শানচ্স্তুবান

অনুরূপ পাঠ

একইধরণের বিষয় জানতে নিম্নের LINK এ CLICK করুন । সংস্কৃত শতৃ ও শানচ্ প্রত্যয়।

শতৃ ও শানচ্ প্রত্যয় থেকে জিজ্ঞাস্য

1) শতৃ ও শানচ্ প্রত্যয়কে পাণিনি ব্যাকরণে কী বলা হয় ?

সৎ বলা হয়।

2) পরস্মৈপদী ধাতুর উত্তর কোন্ প্রত্যয় হয়?

শতৃ প্রত্য়য়।

3) আত্মনেপদী ধাতুর উত্তর কোন্ প্রত্যয় হয়?

শানচ্ প্রত্যয়।
ধন্যবাদ

আমাদের www.sanskritruprekha.com সাইট Visit করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সংস্কৃতের আরো অনেক তথ্য পাওয়ার জন্য Home Page আসুন। Home Page পৌঁছানোর জন্য CLICK HERE👈

আমদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে CLICK HERE

Leave a Comment