সংস্কৃত ছন্দ

এই অধ্যায়ের আলোচ্য বিষয় সংস্কৃত ছন্দ । এখানে সংস্কৃতের লৌকিক ছন্দের লক্ষণ ও উদাহরণ সহ আলোচনা করা হয়েছে। সংস্কৃত ছন্দ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। Bankura University এর Major Course এবং Minor Stream এর Syllabus অনুসারে বাংলা ভাষায় ও দেবনাগরী হরফে সংস্কৃত ভাষায় আলোচিত হয়েছে।

ছন্দ শব্দের অন্যতম অর্থ বেদ। লৌকিক ছন্দগুলির মূল বৈদিক ছন্দ। আচার্য গঙ্গাদাস প্রণীত “ছন্দোমঞ্জরী” গ্রন্থে প্রত্যেক ছন্দের লক্ষণই সেই বিশেষ ছন্দে রচিত। তাই ঐ লক্ষণকেই ছন্দের উদাহরণ হিসেবেও ধরা হয়।

ছন্দঅক্ষরসংখ্যাছন্দের লক্ষণ
ইন্দ্রবজ্রা 👈একাদশাক্ষরাস্যাদিন্দ্রবজ্রা যদি তৌ জগৌ গঃ
উপেন্দ্রবজ্রা 👈একাদশাক্ষরাউপেন্দ্রবজ্রা প্রথমে লঘৌ সা
উপজাতি 👈একাদশাক্ষরাঅনন্তরোদীরিতলক্ষ্মভাজৌ
পাদৌ যদীয়াবুপজাতয়ন্তাঃ
শালিণী 👈একাদশাক্ষরামাত্তৌ গৌ চে চ্ছালিনা বেদ লোকৈঃ
বংশস্থবিল 👈দ্বাদশক্ষরাবদন্তি বংশস্থবিলং জতৌ জরৌ
দ্রুতবিলম্বিতম্ 👈দ্বাদশক্ষরাদ্রুতবিলম্বিতমাহ নভৌ ভরৌ
বসন্ততিলক 👈চতুর্দশাক্ষরাজ্ঞেয়ং বসন্ততিলকং তভজা জগৌ গঃ
মালিনী 👈পঞ্চদশাক্ষরাননমযয যুতেয়ং মালিনী ভৌগিলোকৈঃ
শিখরিণী 👈সপ্তদশাক্ষরারসৈ রুদ্রৈশ্ছিন্না যমনসভলাগঃ শিখরিণী
মন্দাক্রান্তা 👈সপ্তদশাক্ষরামন্দাক্রান্তাম্বুধিরসনগৈর্মোভনৌ তৌ গযুগ্মম্
শার্দূলবিক্রীড়িতম্ 👈ঊনবিংশত্যক্ষরাসূর্যাশ্বৈর্মসজস্ততাঃ সগুরবঃ শার্দূলবিক্রীড়িতম্
স্রগ্ধরা 👈একবিংশত্যক্ষরাম্রভৈর্যাণাং ত্রয়েণ ত্রিমুনিযতিযুতা স্রগ্ধরা কীর্তিতেয়ম্

সংস্কৃত ছন্দ কাকে বলে বা ছন্দ কী

ছন্দ শব্দটি চন্দ্ ধাতু থেকে উৎপন্ন। চন্দয়তি আহ্লাদয়তীতি ছন্দঃ “চন্দেরাদেশ্চ ছন্দঃ”। অর্থাৎ আনন্দ উৎপাদন করে যে তাই ছন্দ। ছন্দের নিয়ামক হচ্ছে গুরু ও লঘু স্বরবর্ণ, বা হ্রস্ব দীর্ঘ মাত্রা। মতান্তরে ছদ্ ধাতু থেকে উৎপন্ন ছন্দ শব্দটির অর্থ যা পাপ থেকে আচ্ছাদন করে। সংস্কৃত ছন্দ জানতে নিম্নের পারিভাষিক শব্দগুলি জানতে হবে।

অক্ষর :— “সব্যঞ্জনঃ সানুস্বারঃ শুদ্ধো বাপি স্বরোহক্ষরম্” অর্থাৎ ব্যজনযুক্ত, অনুস্বারযুক্ত অথবা শুদ্ধ স্বরকে অক্ষর বলে। ‘অক্ষর’ শব্দটি আদৌ Vowel স্বরবর্ণ মাত্রই বোঝাত।

প্রভাতে যঃ স্মরন্নিত্যং দুর্গা দুর্গাক্ষরদ্বয়ম্।

আপদস্তস্য নশ্যন্তি তমঃ সূর্যোদয়ে যথা।।

‘দুর্গা’ শব্দটির মধ্যে বর্ণ বা letter আছে পাঁচটি। যেমন— দ্+উ+র্+গ্+আ । তার মধ্যে অক্ষর বা স্বর দুইটি। যেমন— উ এবং আ।

গুরু-লঘু :— সকল দীর্ঘস্বর গুরু। হ্রস্ব স্বরগুলি সাধারণতঃ লঘু। কিন্তু তাদের ঠিক পরেই যদি অনুস্বার, বিসর্গ বা সংযুক্ত বর্ণ অর্থাৎ পাশাপাশি দুই বা ততোধিক ব্যঞ্জনবর্ণ থাকে তবে তাদের গুরুরূপে গণ্য করতে হবে। ছন্দের প্রয়োজনে কোন চরণের শেষ স্বরবর্ণটি হ্রস্ব হলেও তাকে বিকল্পে গুরুরূপে গণ্য করা হয়। বিশেষতঃ কোন সমবৃত্ত ছন্দে রচিত পদ্যের কোন চরণের শেষ অক্ষর গুরু থাকলে ঐ পদ্যের কোন চরণের শেষ হ্রস্বস্বরকে বিকল্পে গুরুরূপে গণ্য করা হয়। এ প্রসঙ্গে ছন্দোমঞ্জরীতে বলা হয়েছে—

“সানুস্বারশ্চ দীর্ঘশ্চ বিসর্গী চ গুরুর্ভবেৎ।
বর্ণঃ সংযোগপূর্বশ্চ তথা পাদান্তগোহপি বা।।”

গণ :— ‘গণ’ কথাটির অর্থ গোষ্ঠী বা দল। ছন্দের ক্ষেত্রে সাধারণতঃ পদ্যের প্রতি চরণের তিনটি অক্ষর মিলে এক একটি গণ হয় অর্থাৎ স্বরবর্ণের সমষ্টিকে একটি করে গণ বলা হয়। তবে কোনো চরণের অক্ষরগুলিকে তিনটি করে ভাগ করবার পর শেষে একটি বা দুটি অক্ষর বাকি থাকলে তাদের প্রত্যেকটিকে একটি করে গণরূপে গণ্য করা হয়। গণ মোট দশটি ম-গণ, য-গণ, র-গণ, স-গণ, ত-গণ, জ-গণ, ভ-গণ, ন-গণ, গ-গণ এবং ল-গণ। দশটি গণের এই সংকেত দ্বারাই সকল বৃত্তচ্ছন্দ নির্ণয় করা যায়।

বর্তমানে অক্ষরের মাথায় গুরু স্বরের জন্য () চিহ্ন এবং লঘু স্বরের জন্য (v) চিহ্ন দেওয়া হয়। দশটি গণের লক্ষণে বলা হয়েছে—

মস্ত্রিগুরুস্ত্রিলঘুশ্চ নকারো
ভাদিগুরুঃ পুনরাদিলঘুর্যঃ।
জো গুরুমধ্যগতো রলমধ্যঃ
সোহন্তগুরুঃ কথিতোহন্তলঘুস্তঃ ।।
গুরুরেকো গকারস্তু লকারো লঘুরেককঃ।
ক্রমেণ চৈষাং রেখাভিঃ সংস্থানং দর্শ্যতে যথা।

অর্থাৎ

  • ‘ম’ হল ত্রিগুরু অর্থাৎ এই গণের তিনটি অক্ষরই গুরু। চিহ্ন (- – -)
  • ‘ন’ হল ত্রিলঘু অর্থাৎ এই গণের তিনটি অক্ষরই লঘু। চিহ্ন (v v v)
  • ‘ভ’ হল আদিগুরু অর্থাৎ এর কেবল আদি বা প্রথম অক্ষরটি গুরু। চিহ্ন (- v v)
  • ‘য’ হল আদিলঘু অর্থাৎ এর কেবল আদি বা প্রথম অক্ষরটি লঘু। চিহ্ন (ⅴ – -)
  • ‘জ’ হল মধ্যগুরু অর্থাৎ এর কেবল মাঝের অক্ষরটি গুরু। চিহ্ন (v – v)
  • ‘র’ হল মধ্যলঘু অর্থাৎ এর কেবল মাঝের অক্ষরটি লঘু। চিহ্ন (- v -)
  • ‘স’ হল অন্তগুরু অর্থাৎ এর কেবল শেষের অক্ষরটি গুরু। চিহ্ন (v v -)
  • ‘ত’ হল অন্তলঘু অর্থাৎ এর কেবল শেষ অক্ষরটি লঘু। চিহ্ন (- – v)
  • ‘গ’ হল একটি করে গণ্য গুরুস্বর। চিহ্ন (-)
  • ‘ল’ হল একটি করে গণ্য লঘুস্বর। চিহ্ন (v)

পদ্য :— আচার্য গঙ্গাদাস পদ্যের লক্ষণনির্দেশ প্রসঙ্গে তাঁর ছন্দোমঞ্জরী গ্রন্থে বলেছেন— ”ছন্দোবদ্ধপদং পদ্যম্”- ছন্দ অর্থাৎ নির্দিষ্ট অক্ষর বা মাত্রা দ্বারা বদ্ধ পদসমষ্টিকে পদ্য বলে। পদ্য প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেছেন—

পদ্যং চতুষ্পদী তচ্চ বৃত্তং জাতিরিতি দ্বিধা।

বৃত্তমক্ষরসংখ্যাতং জাতি মাত্রাকৃতা ভবেৎ॥

অর্থাৎ চারটি পদ বা চরণে বিভক্ত ছন্দোবদ্ধ রচনাই পদ্য। পদ্য দুই প্রকার— বৃত্ত ও জাতি।

বৃত্ত :— বৃত্ত অর্থাৎ বৃত্তচ্ছন্দের লক্ষণ নির্দেশ প্রসঙ্গে আচার্য গঙ্গাদাস তাঁর ছন্দোমঞ্জরী গ্রন্থে বলেছেন— “বৃত্তমক্ষরসংখ্যাতম্” অর্থাৎ অক্ষরের (syllables) নির্দিষ্ট সংখ্যা অনুসারে রচিত পদ্যের নাম বৃত্ত। সংস্কৃত পদ্যের অধিকাংশই বৃত্তচ্ছন্দে রচিত। বৃত্ত আবার তিন প্রকার—

  1. সমবৃত্ত— সমবৃত্তের লক্ষণ নির্দেশ প্রসঙ্গে আচার্য গঙ্গাদাস তাঁর ছন্দোমঞ্জরী গ্রন্থে বলেছেন, “সমং সমচতুষ্পাদম্” অর্থাৎ যে বৃত্তে চারটি পাদে বা চরণে গুরুলঘুক্রমে সমানসংখ্যক অক্ষর থাকে তাকে সমবৃত্ত বলে। সংস্কৃত পদ্যের অধিকাংশই সমবৃত্ত।
  2. অর্ধসমবৃত্ত— অর্ধসমবৃত্তের লক্ষণ নির্দেশ প্রসঙ্গে আচার্য গঙ্গাদাস তাঁর ছন্দোমঞ্জরী গ্রন্থে বলেছেন, “ভবত্যর্ধসমং পুনঃ। আদিস্তৃতীয়বদ্ যস্য পাদস্তুর্যো দ্বিতীয়বৎ” অর্থাৎ যে বৃত্তে তৃতীয়পাদ প্রথম পাদের অনুরূপ এবং চতুর্থপাদ দ্বিতীয়পাদের অনুরূপ সমানসংখ্যক অক্ষর বিশিষ্ট তাকে অর্ধসমবৃত্ত বলে।
  3. বিষমবৃত্ত— বিষমবৃত্তের লক্ষণ নির্দেশ প্রসঙ্গে আচার্য গঙ্গাদাস তাঁর ছন্দোমঞ্জরী গ্রন্থে বলেছেন, “ভিন্নচিহ্নচতুষ্পাদং বিষমং পরিকীর্তিতম্” অর্থাৎ যে বৃত্তে চারটি পাদের প্রত্যেকটি পাদ পৃথক পৃথক লক্ষণবিশিষ্ঠ তাকে বিষমবৃত্ত বলে।

জাতি :— জাতি অর্থাৎ জাতিচ্ছন্দের লক্ষণ নির্দেশ প্রসঙ্গে আচার্য গঙ্গাদাস তাঁর ছন্দোমঞ্জরী গ্রন্থে বলেছেন- “জাতির্মাত্রাকৃতা ভবেৎ” অর্থাৎ মাত্রার (mora) সংখ্যা অনুসারে রচিত পদ্যের নাম জাতি। এতে হ্রস্বস্বরের একমাত্রা, দীর্ঘস্বরের দুই মাত্রা, প্লুতস্বরের তিন মাত্রা এবং ব্যঞ্জনবর্ণের আধ মাত্রা ধরা হয়। আর্যাছন্দ একটি জাতিচ্ছন্দ। মাত্রানির্দেশক কারিকা—

একমাত্রো ভবেৎ হ্রস্বো দ্বিমাত্রো দীর্ঘ উদ্যতে।
ত্রিমাত্রস্তু প্লুতো জেয়ো ব্যঞ্জনমর্ধমাত্রকম্ ।।

যতি :— একটি পদ্য এক নিশ্বাসে পড়া কঠিন। পড়তে পারলেও তাতে মাধুর্য থাকে না। তাই পদ্যপাঠের সময় জিহ্বার ঈপ্সিত বিশ্রামের স্থানকে যতি বলা হয়। পদ্যের প্রতি চরণের অন্তে অবশ্যই যতি থাকে। এছাড়াও অনেকছন্দেই চরণের মধ্যে এক বা একাধিক যতি নির্দিষ্ট আছে। যতিকে বিচ্ছেদ, বিরাম ইত্যাদি নামেও অভিহিত করা হয়। যতির লক্ষণ নির্দেশ প্রসঙ্গে ছন্দোমঞ্জরীকার আচার্য গঙ্গাদাস বলেছেন—

“যতির্জিহেবষ্টবিশ্রামস্থানং কবিভিরুচ্যতে।
স বিচ্ছেদবিরামাদ্যৈঃ পদৈর্বাচ্যা নিজেচ্ছয়া।।”

ধন্যবাদ

সংস্কৃত ছন্দ অধ্যয়ন করতে আমাদের www.sanskritruprekha.com সাইট Visit করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সংস্কৃতের আরো অনেক তথ্য পাওয়ার জন্য Home Page আসুন। Home Page পৌঁছানোর জন্য CLICK HERE👈

আমদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে CLICK HERE👈

3 thoughts on “সংস্কৃত ছন্দ”

Leave a Comment