কাদম্বরী

কাদম্বরীই বাণভট্টের যশকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। এখানে কাদম্বরী টীকা লেখ বা কাদম্বরীর সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ বিষয়ে আলোচনা করব।কাদম্বরী সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর বা টীকা লেখ। Kadambari in bengali যাইহোক, বাণভট্টের কাদম্বরী উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষার্থীদের জন্য একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এছাড়া WBSSC এর SLST পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

সংস্কৃত সাহিত্যে অন্যতম জনপ্রিয় ও সার্থক একটি গদ্যকাব্য হল ‘দশকুমারচরিতম্’। সংস্কৃত ভাষায় অথবা বিশেষভাবে বলতে গেলে বৈদিক সংস্কৃত ভাষায় প্রাচীনতম সাহিত্য ঋগ্বেদ পদ্যে লেখা হলেও যজুর্বেদে, বেদাঙ্গ সাহিত্যে, মহাভারতের কিছু কিছু অংশে গদ্যের ব্যবহার দেখা যায়। পাণিনির ‘অষ্টাধ্যায়ী’ গ্রন্থের ওপর পতঞ্জলি রচিত ‘মহাভাষ্য’ সাবলীল সংস্কৃত গদ্যের উৎকৃষ্ট নিদর্শন। তবে এগুলি গদ্য রচনার নিদর্শন হলেও স্বতন্ত্র সংস্কৃত গদ্যকাব্য নয়। কিন্তু পতঞ্জলি ‘বাসবদত্তা’, ‘সুমনোত্তরা’ ও ‘ভৈমরথী’ নামে তিনটি গদ্যকাব্যের যে উল্লেখ করেছেন, সংস্কৃত গদ্যকাব্যের ইতিহাসে সেই উল্লেখটি গুরুত্বপূর্ণ। এদের কোনোটিই পাওয়া না গেলেও পতঞ্জলির আগেই যে গদ্যকাব্যের সৃষ্টি হয়েছিল, সেই তথ্যটিই সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়।

বাণভট্টের কাদম্বরী টীকা

বাণভট্টের কাদম্বরী গদ্যকাব্যের কিছু মনে রাখার মতো তথ্য নিম্নে টেবিল আকারে দেওয়া হল।

গদ্যকাব্যকাদম্বরী
রচয়িতাপূর্বভাগ – বাণভট্ট
উত্তরভাগ – ভূষণভট্ট
শ্রেণিকথা
গ্রন্থবিভাগপূর্বভাগ ও
উত্তরভাগ
নায়কচন্দ্রাপীড়
নায়িকাকাদম্বরী
রীতিপাঞ্চালী
রসবিপ্রলম্ভ – শৃঙ্গার
গুণমাধুর্য

ভূমিকা

বাণভট্ট সংস্কৃত গদ্যকাব্যের দরবারে রাজাধিরাজ, সংস্কৃত সাহিত্য গগনের অন্যতম উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক, অসামান্য প্রতিভাধর লেখক। সংস্কৃত গদ্যকাব্য- মালিকার মধ্যমনি তিনি। কালিদাস যেমন সংস্কৃত কাব্যের জগতে উচ্চ শিখরে অধিষ্ঠিত, বাণভট্টও তেমনই গদ্যকাব্যের (Prose Romance) ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মহিমায় মহিমান্বিত। তাঁর অলোকসামান্য সৃষ্টিনৈপুণ্যে সংস্কৃত গদ্যকাব্য মহনীয় গুণগরিমায় ও চমকপ্রদ উৎকর্ষে মহিমান্বিত। তাঁর রচনা হল দুটি “হর্ষচরিত‘ ও ”কাদম্বরী”।

কবি পরিচিতি

কাব্যদুটি থেকে জানা যায় বাৎস্যগোত্রীয় চিত্রভানু তাঁর পিতা এবং মাতা রাজদেবী। হর্ষবর্ধনের সভাকবি বাণভট্টের আবির্ভাবকাল খ্রীষ্টিয় সপ্তম শতকের প্রথমার্ধ।

বাল্যকালে বাণভট্ট মাতৃহীন হলে পিতা তাঁকে মায়ের স্নেহ দিয়ে পালন করেন। চোদ্দো বছর বয়সে তিনি পিতাকে হারান। কিছুদিন বাড়িতে কাটাবার পর সমবয়সি বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে প্রথম যৌবনের চপলতায় উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাত্রায় মেতে ওঠেন। তাঁর সঙ্গীদের দীর্ঘ তালিকা বাণ দিয়েছেন। কবি, নৃত্যশিল্পী, গায়ক, বাদক, জুয়াড়ি, ঐন্দ্রজালিক, অভিনেতা, সাধুসন্ত, চিকিৎসক, বজ্জাত—সবরকম লোকই তার মধ্যে ছিল। পূর্বপুরুষদের ধন ও বিদ্যাচর্চার ধারা ছেড়ে বাণভট্ট দেশদেশান্তরে ঘুরে বেড়ান। উচ্ছৃঙ্খল স্বেচ্ছাচারী হিসেবে নিন্দাবাদ তাঁর ভাগ্যে জোটে।

গদ্যকারবাণভট্ট
পিতাচিত্রভানু
পিতামহঅর্থপতি
প্রপিতামহপশুপতি
মাতারাজদেবী
সময়কালখ্রীষ্টিয় সপ্তম শতকের প্রথমার্ধ
গ্রন্থরচনাহর্ষচরিত, কাদম্বরী ও চন্ডীশতক

নামকরণ

নায়িকার নামানুসারে কাব্যর নাম কাদম্বরী। ‘কাদম্বরী’ শব্দের অর্থ ‘ সুরা’। সুরার প্রভাবে মানুষ যেমন আত্মহারা হয়, কাদম্বরী পাঠেও সত্যই পাঠক তেমনি আত্মহারা হন। এই দিক দিয়ে নামকরণ সার্থক হয়েছে।

বিষয়বস্তু

এটিই বাণভট্টের সর্বশ্রেষ্ঠ গদ্যকাব্য। তিনি কাব্যটিকে শেষ করে যেতে পারেননি । তাঁর পুত্র ভূষণট্ট কাজটি শেষ করেন। এই কাব্যের নায়ক চন্দ্রাপীড়, নায়িকা কাদম্বরী। প্রসঙ্গক্রমে এর সাথে জড়িত হয়ে পড়েছে পুণ্ডরীক ও মহাশ্বেতার প্রণয় কাহিনী। বিদিশা রাজ শূদকের নিকট আনীত এক শুকপাখির মুখে কাব্যটির কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।

উজ্জয়িনী রাজ তারাপীড়ের পুত্র চন্দ্রাপীড় এবং মন্ত্রী শুকনাসের পুত্র বৈশম্পায়ন প্রায় একই সময়ে জন্মগ্রহণ করেন। চন্দ্রাপীড় পরে যৌুবরাজ্যে অভিষিক্ত হয়ে বৈশম্পায়নকে সাথে নিয়ে দিগ্বিজয় যাত্রা করেন। একদিন একাকী মৃগয়া করবার সময় এক সরোবরের তীরে গন্ধর্বরাজ হংসের কন্যা মহাশ্বেতার সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। তার কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন যে, পুন্ডরীক নামে এক মুনিকুমারের সাথে মহাশ্বেতার প্রণয় ঘটেছিল এবং পুন্ডরীক মহাশ্বেতার বিরহে মরা যান। কিন্তু পরে ‘উভয়ের মিলন হবে’ এই দৈববাণীকে বিশ্বাস করে মহাশ্বেতা ব্রহ্মচারিণী হয়ে সেখানে অপেক্ষায় রয়েছেন। সেখানেই একদিন রান্ধর্ব-রাজ চিত্ররথের কন্যা কাদম্বরীর সাথে চন্দ্রাপীড়ের দেখা হয় এবং প্রথম দেখাতেই তাঁরা পরস্পরের প্রতি প্রনয়াসক্ত হন। অতঃপর নানা ঘটনার মাধ্যমে চন্দ্রাপীড়ের সাথে কাদম্বরীর এবং বৈশম্পায়নের সাথে মহাশ্বেতার মিলনই কাদম্বরীর বিষয়বস্তু।

মূল্যায়ন

ভারতীয় প্রাচীন সাহিত্যিকদের মতে কাদম্বরী কাব্যের রস পান করতে করতে আহারের কথা ভুলে যান – “কাদম্বরীরসজ্ঞানম্ আহারোহপি ন রোচতে”। কল্পনার রঙে প্রতিটি বর্ণনাকে উপভোগ্য ও মধুর করে তুলেছেন। বানভট্ট একজন সত্যিকারের গদ্যশিল্পী – “গদ্যং কবীনাং নিকষং বদন্তি।” এমন কোন বিষয় নেই যা বাণভট্টের কাব্যদ্বয়ে নেই। তাই বাণের সম্বন্ধে এরূপ প্রবাদ প্রচলিত আছে- “বানোচ্ছিষ্টং জগৎ সর্বম্”। বানভট্ট ভাষাজগৎকে উচ্ছিষ্ট (এঁটো) করে দিয়েছেন। কী বিষয় বর্ণনে, কী চরিত্র চিত্রনে, এমনকি প্রেমিক-প্রেমিকার মিলন-বিরহের বাস্তব চিত্র উপস্থাপনে সর্বত্রই বানভট্টের সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ শক্তি ও অনন্য সুলভ চিত্রগ্রাহিতার অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে। তবে বাণের কাব্যকাননে সাধারণের প্রবেশ দুষ্কর।

অনুরূপ পাঠ

কাদম্বরী এর মত একইধরণের বিষয় জানতে নিম্নের LINK এ CLICK করুন ।

কাদম্বরী থেকে জিজ্ঞাস্য

1) “কাদম্বরী” কোন্ শ্রেণীর গদ্যকাব্য?

কথা।

2) “কাদম্বরী” গদ্যকাব্যের নায়কের নাম কী?

চন্দ্রাপীড়।

3) বাণভট্টের অপর একটি গদ্যকাব্যের নাম কী?

4) বাণভট্ট কোন্ সময়ের কবি?

খ্রীষ্টিয় সপ্তম শতকের প্রথমার্ধের।

5) বাণভট্ট কার সভাকবি ছিলেন?

হর্ষবর্ধনের সভাকবি ছিলেন।
ধন্যবাদ

আমাদের www.sanskritruprekha.com সাইট Visit করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সংস্কৃতের আরো অনেক তথ্য পাওয়ার জন্য Home Page আসুন। Home Page পৌঁছানোর জন্য CLICK HERE👈

আমদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে CLICK HERE 👈

Leave a Comment