গীতগোবিন্দ কবি জয়দেবের কান্তকোমল পদবলীর কাব্য। এখানে ভক্তিমূলক গীতিকাব্যের নমুনারূপে জয়দেবের গীতগোবিন্দের মূল্যায়ন কর, প্রশ্নটির আলোচনা করব।
সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাসে কবি জয়দেবের গীতগোবিন্দ গীতিকাব্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। WBCHSE এর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এছাড়াও স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্যও এই গীতিকাব্য সম্পর্কে নিখুতভাবে জানা দরকার। WBSSC এর SLST ক্ষেত্রে এই আলোচ্য বিষয় অতীব জরুরী।
গীতগোবিন্দ | কবি জয়দেবের লেখা |
সর্গ | 12 টি |
গীত | 24 টি |
শ্লোকসংখ্যা | 80 টি |
জয়দেবের গীতগোবিন্দম্
জয়দেবের গীতগোবিন্দ একটি ভক্তিমূলক গীতিকাব্য। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এর নায়ক এবং দিব্যশক্তি সরূপিণী শ্রীরাধা হলেন নায়িকা।
কাব্য বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা
ভূমিকা – কালিদাসের কয়েক শতাব্দী পর খ্রীষ্টীয় দ্বাদশ শতকে সংস্কৃত গীতিকবিতা আর এক শীর্ষবিন্দু স্পর্শ করে, জয়দেবের গীতগোবিন্দ কাব্য। সংস্কৃত গীতিকাব্যের দরবারে এটি উচ্চস্থান অধিকার করে আছে। এই গীতিকাব্যে শ্রীরাধা ও শ্রীকৃষ্ণের মাধুর্যময়ী প্রেমলীলার এক অপার্থিব রূপ ফুটে উঠেছে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এর নায়ক এবং দিব্যশক্তি সরূপিণী শ্রীরাধা হলেন নায়িকা।
কবি পরিচয়
কবি জয়দেব খৃষ্টীয় দ্বাদশ শতকের শেষভাগে পশ্চিমবাংলার বীরভূম জেলার কেন্দুবিল্ব গ্রামে জন্মমহণ করন। কবি লক্ষণসেনের সভাকবি ছিলেন। তাঁর পিতার নাম ভোজদেব, মায়ের নাম বামাদেবী, পত্নী ছিলেন পদ্মাবতী। কথিত আছে পত্নী পদ্মাবতীর কান্তা প্রেমই কবিকে কোমলকান্ত পদাবলী রচনায় অনুপ্রাণিত করেছিল। কাব্যে জয়দেব পদ্মাতীর ঋন অকুন্ঠচিত্তে স্বীকার করেছেন- ”পদ্মবতী চরনচারণ চক্রবর্তী।”
কবি | জয়দেব |
পিতা | ভোজদেব |
মাতা | বামাদেবী |
পত্নী | পদ্মাবতী |
সময়কাল | দ্বাদশ শতক |
গ্রন্থবিন্যাস
‘গীতগোবিন্দ’ কাব্যটি প্রেমষিয়ক গীতিকাব্য হলেও আধ্যাত্মিকতা ও ভক্তিরসে পরিপূর্ণ। নায়ক-নায়িকা বা সখীর সঙ্গীতময় উক্তি প্রত্যুক্তিচ্ছলে কাব্যটি রচিত। অনেকের মতে এটি দার্শনিক মহাকাব্য। শ্রীকৃষ্ণকে পরমাত্মার সাথে এবং শ্রীরাধাকে জীবাত্মার সাথে তুলনা করা হয়েছে। কাব্যটি ঘটনার ক্রম অনুসারে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বারোটি সর্গে বিভক্ত। এর মধ্য ৮০টি শ্লাক এবং ২৪টি গীতের সমাবেশ রয়েছে।
বিষয়বস্তু
বসন্তকাল সমাগত। প্রেমলীলার পরম নায়ক শ্রীকৃষ্ণ ও পরম নায়িকা রাধা পরস্পর মিলন কামনায় ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন। এসময় সখীমুখে শ্রীরাধার হৃদয়েরর অবস্থা জানতে পেরে শ্রীকৃষ্ণ তাকে কুঞ্জে আসতে বলেন। কিন্তু শ্রীরাধা তখন শ্রীকৃষ্ণের বিরহে এমনই কাতরা যে, চলচ্ছক্তি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছেন। তাই তিনি কৃষ্ণকেই আসার জন্য অনুরোধ করে পাঠালেন। শ্রীকৃষ্ণ আসবেন জেনে শ্রীরাধা সারারাত্রি প্রতীক্ষা করলেন। শেষে বিলাপের মধ্য দিয়েই তাঁর রাত্রি শেষ হল। এদিকে রাত্রি শেষ হতে শ্রীকৃষ্ণ সেখানে উপস্থিত হলেন। অভিমানিনী রাধার ধর্যের বাঁধ ভেঙে যায়, মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি তীব্র ভৎসনা বাক্য। শেষে সখীর উপদেশে ও চেষ্টায় রাধার ক্রোধ কিছুটা প্রশমিত হলে শ্রীকৃষ্ণ দীর্ঘকাল ধরে অনুনয় বিনয়ে তাঁর প্রীতি উৎপাদনে সমর্থ হলেন। এরপর শ্রীরাধা কৃষ্ণের শাশ্বত মিলন বর্ণনা দ্বারাই গ্রন্থের পরিসমাপ্তি ।
মূল্যায়ণ
জয়দেবের কোমলকান্ত পদাবলীর লালিত্য সতই আমাদের মুগ্ধ করে। অন্য ভাষার অনুবাদে সেই লালিত্যের প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব নয়। এক একটি শ্লোক যেন শব্দে আঁকা এক একটি ছবি। কবি প্রতিভার প্রাচুর্যে অথচ শিল্পীর সংযসমে গীতগোবিন্দ কাব্যটি অপূর্ব সৌদর্যমন্ডিত হয়েছে। কবি বাস্তব অনুভূতিতে অবাস্তব প্রেম ও সৌন্দর্যের কল্পলোক বস্তবে পরিণত হয়েছে। একথা সত্য যে, বাংলার পদাবলী সাহিত্যের ক্ষেত্রে জয়দেব আদিকবি। সৌন্দর্যের চিত্রকল্পে বাংলার কবি জয়দেব সত্যই মৃত্যুঞ্জয়ী। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বলেছেন –
“বাংলার রবি জয়দেব কবি কান্তকোমল পদে
করেছে সুরভী সংস্কৃতের কাঞ্চন কোকনদে।”
অনুরূপ পাঠ
গীতগোবিন্দ এর মত একইধরণের বিষয় জানতে নিম্নের LINK এ CLICK করুন ।
- প্রতিজ্ঞাযৌগন্ধরায়ণ 👈
- স্বপ্নবাসবদত্তা 👈
- দূতবাক্য 👈
- অবিমারক 👈
- হর্ষচরিত 👈
- গীতগোবিন্দম্ 👈
- মেঘদূত 👈
- বিক্রমোর্বশীয়ম্ 👈
- মালবিকাগ্নিমিত্রম্ 👈
- অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ 👈
- মৃচ্ছকটিক 👈
- মুদ্রারাক্ষস 👈
- পঞ্চতন্ত্র 👈
- হিতোপদেশ 👈
- হর্ষচরিত 👈
- কাদম্বরী 👈
গীতগোবিন্দ থেকে জিজ্ঞাস্য
খৃষ্টীয় দ্বাদশ শতকের।
12টি।
ভাস সমস্যা কী? এর উত্তর জানতে Link এ click করুন।
নাট্যকার হিসাবে কালিদাসের স্থান নির্ণয় কর