মহাকবি কালিদাস সংস্কৃত সাহিত্যের একজন বিখ্যাত নাট্যকার। এখানে কালিদাসের নাটক ও তার উৎকর্ষ সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও অথবা নাট্যকার হিসাবে কালিদাসের স্থান নির্ণয় কর প্রশ্নটির আলোচনা করব। WBCHSE এর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এছাড়াও স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্যও মহাকবি কালিদাস সম্পর্কে নিখুতভাবে জানা দরকার। WBSSC এর SLST ক্ষেত্রে এই আলোচ্য বিষয় অতীব জরুরী।
আমরা যাকে সাহিত্য বলি, সংস্কৃত অলংকার শাস্ত্রে তাই কাব্য নামে চিহ্নিত। রসাত্মক বাক্যে গুণ, অলংকারের মন্ডন ছাড়িয়ে কাব্যের অন্তর্গঢ় রসরূপ সহৃদয় পাঠকের মন আপ্লুত করে।সংস্কৃত সাহিত্যে ‘কাব্যং দ্বিবিধং দৃশ্যং শ্রব্যং চ’ অর্থাৎ কাব্য দুই প্রকার দৃশ্যকাব্য ও শ্রব্যকাব্য। দৃশ্যকাব্যের আধুনিক প্রতিশব্দ নাটক। মঞ্চে অভিনয় দর্শনের মাধ্যমে দৃশ্যকাব্য উপস্থাপিত হয়। এই দৃশ্যকাব্যের অপর নাম রূপক; কারণ এতে পাত্র-পাত্রীর উপর, নাটকীয় চরিত্রের রূপ আরোপ করা হয়। সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাসে মহাকবি কালিদাস এর অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ দৃশ্যকাব্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন।
কাব্যকৃতি
কবিকুল চূড়ামণি কালিদাসের কবিপ্রতভা নাট্যকাব্যে থেমে থাকেননি। তিনি খ্যাতি অর্জন করেছেন গীতিকাব্য ও মহাকাব্য রচনায়।
কালিদাস | রচনাবলী |
সময়কাল | খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতক থেকে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতক |
নাটক | মালবিকাগ্নিমিত্রম্ বিক্রমোর্বশীয়ম্ অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ |
মহাকাব্য | রঘুবংশম্ কুমারসম্ভবম্ |
গীতিকাব্য | ঋতুসংহার মেঘদূত |
নাট্যকার হিসাবে কালিদাসের স্থান নির্ণয় কর
ভূমিকা :- সংস্কৃত কাব্য সাহিত্য দরবারে মহাকবি কালিদাস রাজপুত্র রূপে সম্মানের অধিকারী। যেরূপ ইংরেজি সাহিত্যের সঙ্গে শেক্সপিয়ারের নাম জড়িত, বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের নাম সম্পৃক্ত, সংস্কৃত সাহিত্যের সঙ্গে কালিদাসের নাম চিরগ্রথিত।
কাল :- কালিদাসের আবির্ভাবকাল ও ব্যক্তি জীবন ঘন অন্ধকারের অবগুন্ঠনে অবগুণ্ঠিত কালিদাস নিঃসন্দেহে অশ্বঘোষ ও ভাসের পরবর্তীকালের কবি। সকল দিক বিবেচনা করলে বলা যায় যে খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকের শেষ অথবা খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকের প্রথম ভাগে তিনি বর্তমান ছিলেন।
নাটক :- সংস্কৃত কাব্য কাননে প্রস্ফুটিত পারিজাত স্বরূপ মহাকবি কালিদাস মহাকাব্যের ও গীতিকাব্যের ক্ষেত্রে যেমন, নাটকের ক্ষেত্রেও তেমনি প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য জগতে সর্বশ্রেষ্ঠ স্থানের অধিকারী। তাঁর রচিত নাটক গুলি হল –
1) মালবিকাগ্নিমিত্রম্ ,
2) বিক্রমোর্বশীয়ম্ এবং
3) অভিজ্ঞানশকুন্তলম্।
মালবিকাগ্নিমিত্রম্ :- বিধর্ভের রাজকন্যা মালবিকা ও বিদিশার রাজা অগ্নিমিত্রের প্রণয়কাহিনীকে উপজীব্য করে নাটকটি পাঁচ অঙ্কে রচিত। অনিন্দ্যসুন্দরী মালবিকা দুর্ভাগ্যক্রমে দস্যুহস্তে বন্দিনী হন এবং পরে অগ্নিমিত্রের মহিষী ধারিণীর কাছে আশ্রয় লাভ করেন। ঘটনাক্রমে মালবিকা ও অগ্নিমিত্রের প্রণয় হয় এবং পরে উভয়ের মিলনের মাধ্যমে নাটকটি পরিসমাপ্তি ঘটেছে।
সমালোচনা :- এই নাটকের মধ্য দিয়ে রাজ অন্তঃপুরের ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। নাটকটিতে বিদূষক এক অতুলনীয় গরিমায় চিত্রিত। প্রেম, সম্ভোগ ও রূপতৃষ্ণার আকুতি বেশ নিষ্ঠার সঙ্গে প্রকাশ পেয়েছে। এর রসাস্বাদনে রসজ্ঞ সমাজও অবশ্যই তৃপ্ত হয়েছে।
বিক্রমোর্বশীম্ :- স্বর্গের অপ্সরা উর্বশী এবং মর্তের রাজা পুরুরবার মধ্যে প্রেমের ফলে ইন্দ্রের অনুমতিতে উভয়ের বিবাহ হয়। কিন্তু ইন্দ্রের শর্ত ছিল যে, রাজা পুত্রমুখ দর্শন করলেই উর্বশী স্বর্গে ফিরে যাবেন। তাঁদের আয়ু নামে এক পুত্র হয়। কিন্তু উর্বশী তাকে এক মুনির আশ্রমে লুকিয়ে রাখেন। কিন্তু ঘটনাচক্রে একদিন রাজা তার মুখ দেখে ফেলেন। ফলে উর্বশীর সাথে তার বিচ্ছেদ ঘটে। কিন্তু সেই সময় দেবাসুরের যুদ্ধে রাজা দেবরাজকে সাহায্য করেছিলেন বলে, পুরস্কার স্বরূপ তিনি সারা জীবন স্বর্গের অপ্সরা উর্বশীর সান্নিধ্য লাভের বর পেলেন।
সমালোচনা :- এই নাটকের চতুর্থ অঙ্কে ঊর্বশীর বিরহে প্রেমোন্মত্ত রাজা পুরুরবার মর্মস্পর্শী বিলাপে যে কাব্যরূপ কালিদাস দিয়েছেন, তা পৃথিবীর যেকোনো সাহিত্যে অমূল্য সম্পদ। এই নাটকটিতে চিরন্তন নারী হৃদয়ের অনুরাগ অপূর্ব শোভনা ঊর্বশীর চরিত্রে মূর্ত হয়ে উঠেছে। সেই অনুরাগের হিল্লোলে উচ্ছ্বসিত হয়েছে মর্তের প্রেমতৃষ্ণা।
অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ :- এই নাটকে কালিদাস কণ্বের আশ্রম পালিতা কন্যা শকুন্তলা ও পুরুবংশীয় রাজা দুষ্যন্তের প্রেমকাহিনী অতি সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন। একদা মৃগয়াবিহারী রাজা দুষ্যন্ত এক হরিণের পিছু ধাবনে মহর্ষি কণ্বের আশ্রমে উপস্থিত হন। সেখানে শকুন্তলাকে অপর দুই সখীর সাথে দেখে মুগ্ধ হয়ে গান্ধর্ব মতে বিবাহ করেন। দুষ্যন্ত রাজধানীতে ফিরে যাবার পর পতি চিন্তায় নিমগ্না শকুন্তলা অতিথি সৎকাররূপ কর্তব্যে অবহেলা করায়, দুর্বাসা কর্তৃক অভিশপ্ত হন। এই অভিশাপের জন্য দুষ্যন্ত শকুন্তলাকে চিনতে পারলেন না, পরস্ত্রী ভেবে প্রত্যাখ্যান করলেন। ঘটনাচক্রে শকুন্তলাকে দেওয়া রাজার নামাঙ্কিত আংটিটি পেয়ে রাজার উপর শাপের প্রভাব কেটে যায় এবং তিনি শকুন্তলাকে ফিরে পাওয়ার জন্য আকুল হন। ঘটনাক্রমে মারীচ ঋষির স্বর্গ-তপোবনে তপস্বিনী শকুন্তলা ও ভরতের সাথে তাঁর মিলন হয়।
সমালোচনা :- প্রাচ্য, পাশ্চাত্য সকল মনীষীই এই নাটকের অকুন্ঠ প্রশংসা করেছেন। ঘটনাবিন্যাসে, বর্ণনার সজীবতায়, ভাবের গভীরতায়, নাট্যকল্পনার বৈচিত্র্যে নাটকটির উৎকর্ষ তর্কাতীত। তাই বলা হয় “কালিদাসস্য সর্বস্বমভিজ্ঞানশকুন্তলম্”।
উপসংহার :- কালিদাসের কাব্যশিল্প স্বচ্ছ, সুন্দর ও রমণীয়। বৈদর্ভী রীতি, অলংকারের সুষুমা, ছন্দের ঝংকার, ভাব ও ভাষার সমন্বিত তাৎপর্য – কালিদাসের তিনটি নাটকেই বিশিষ্টতার পরিচয় দেয়। তিনি মানবতাবাদী কবি মানব মহত্বকেই প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন বলেই কালিদাস পরবর্তী মানবসমাজে এতখানি গ্রহণীয় হতে পেরেছেন। ভারতীয় পন্ডিতরা কালিদাসের অদ্বিতীয়ত্ব স্বীকার করে বলেছেন, “পুরা কবীনাং গণনাপ্রসঙ্গে কনিষ্ঠিকাধিষ্ঠিতকালিদাসঃ”।
মহাকবি কালিদাস থেকে জিজ্ঞাস্য
খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতক থেকে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকের।
অভিজ্ঞানশকুন্তলম্।
মেঘদূত।
ধন্যবাদ
আমাদের www.sanskritruprekha.com সাইট Visit করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সংস্কৃতের আরো অনেক তথ্য পাওয়ার জন্য Home Page আসুন। Home Page পৌঁছানোর জন্য CLICK HERE👈
আমদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে CLICK HERE👈