এই অধ্যায়ের আলোচ্য বিষয় শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা । শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা বিষয়ে টীকা লেখ বা সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর, প্রশ্নের উত্তর। যা একাদশ বা দ্বাদশ শ্রেণী ছাড়াও স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষার্থীদের জন্য এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এছাড়াও WBSSC(SLST) পরীক্ষার্থীদের এই বিষয় কন্ঠস্থ করতে হবে।
সংস্কৃত সাহিত্য ও ভারতীয় জনজীবনে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (সংক্ষেপে গীতা) এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক গ্রন্থ। মহাভারতের ভীষ্মপর্বের পঁচিশতম অধ্যায় থেকে বিয়াল্লিশতম অধ্যায় পর্যন্ত মোট আঠারোটি অধ্যায়ে বিবৃত অংশই পৃথকভাবে ‘শ্রীমদ্ভবদ্গীতা’ নামে চিহ্নিত হয়েছে। মহাভারতের অংশ হলেও স্বতন্ত্র গ্রন্থ হিসেবে এটি অতি প্রাচীনকাল থেকে স্বীকৃতি পেয়ে আসছে। ‘শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা’ শব্দটির অর্থ হল শ্রীভগবানের গীত বা উক্তি। কিন্তু শব্দটিতে ‘গীতা’ এইভাবে স্ত্রীলিঙ্গ করার কারণ হল, এই গ্রন্থকে উপনিষদ্ মনে করা হয় এবং উপনিষদ্ শব্দের সাথে অভিন্নরূপে অন্বয় করা হয়। যেহেতু, উপনিষদ্ শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গ, তাই ‘গীত’ শব্দটিকেও স্ত্রীলিঙ্গ করে গীতা করা হয়েছে।
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা
গ্রন্থ | শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা |
রচয়িতা | মহর্ষি কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাস |
উৎস | মহাভারতের ভীষ্মপর্বের ২৫-৪২তম অধ্যায়। |
অধ্যায় | 18 |
শ্লোকসংখ্যা | 700 |
অপরনাম | সপ্তশতী/ যোগশাস্ত্র / ব্রহ্মবিদ্যা / শ্রীকৃষ্ণার্জুন সংবাদ |
ভূমিকা (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা)
সংষ্কৃত সাহিত্যে ও ভারতীয় জনজীবনে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক গ্রন্থ। গীতা একটি স্বতন্ত্র দার্শনিক কাব্য, ভারতীয় আধ্যাত্মবাদের মর্মবাণী। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কণ্ঠে মহাভারতের ভীষ্মপর্বে ইহা এক অভিনব ও সঙ্গীতের রূপ লাভ করেছে। শাস্ত্র- সমুদ্রমথিত, হয়েই গীতামৃতের উদ্ভব। তাই বলা হয় “গীতা সুগীতা কর্তব্যা কিমন্যৈঃ শাস্ত্রবিস্তরৈ।” বিশ্বের সাহিত্যভান্ডারে গীতার এক অসামান্য প্রতিষ্ঠা। গীতাকে বলা হয় উপনিষদ্ এবং যোগশাস্ত্র।
কবি পরিচিতি
কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাস ঋষি পরাশর ও দাসরাজ কন্যা সত্যবতীর পুত্র। যমুনানদীতে খেয়া নৌকার ভিতর পরাশর মুনি সত্যবতীর সাথে মিলিত হলে, সত্যবতী গর্ভবতী হন। পরে যমুনার একটি দ্বীপে তার জন্ম হয়। যমুনার দ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন বলে এর নাম হয় দ্বৈপায়ন। এঁর গায়ের রং কালো ছিল বলে, পুরো নাম দাঁড়ায় কৃষ্ণ-দ্বৈপায়ন।
তিনি বেদকে চার ভাগে ভাগ করেছিলেন। এই কারণে ইনি বেদব্যাস বা ‘ব্যাস’ নামে পরিচিত হন। মহর্ষি বেদব্যাস বেদ রচনা করেননি বরং বেদকে শুধু লিপিবদ্ধ করেছেন এবং চার ভাগে বিভক্ত করেছেন।
উৎস
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা মহর্ষি ব্যাসদেব রচিত মহাভারতের ভীষ্মপর্বের অন্তর্গত। এই মহাভারত গ্রন্থের ভীষ্মপর্বের ২৫তম অধ্যায় থেকে ৪২তম অধ্যায় পর্যন্ত মোট আঠারোটি অধ্যায়ে বিবৃত অংশই পৃথকভাবে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা নামে চিহ্নিত হয়েছে। মহাভারতের অংশ হলেও স্বতন্ত্র গ্রন্থ হিসেবে এটি অতি প্রাচীনকাল থেকেই স্বীকৃতি পেয়ে আসছে।
গ্রন্থবিন্যাস
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় 700 শ্লোক আছে, এজন্য এই গ্রন্থের অপর নাম সপ্তশতী। শ্রীকৃষ্ণের মুখে 574টি, অর্জুনের মুখে 85টি, সঞ্জয়ের মুখে 40টি এবং ধৃতরাষ্ট্রের মুখে 1টি শ্লোক বিধৃত হয়েছে। এই 700 শ্লোক সম্বলিত গীতার 18 টি অধ্যায় আছে। অধ্যায়গুলি হল –
- অর্জুনবিষাদ যোগ,
- সাংখা যোগ,
- কর্ম যোগ,
- জ্ঞান যোগ,
- সন্ন্যাস যোগ,
- ধ্যান যোগ,
- জ্ঞান-বিজ্ঞান যোগ,
- অক্ষরব্রহ্ম যোগ,
- রাজবিদ্যা-রাজগুহ্য যোগ,
- বিভূতি যোগ,
- বিশ্বরূপদর্শন যোগ,
- ভক্তি যোগ,
- ক্ষেত্র-ক্ষেত্রজ্ঞ-বিভাগ যোগ,
- গুণত্রয়বিভাগ যোগ,
- পুরুষোত্তম যোগ,
- দৈবাসুর-সম্পদ্বিভাগ যোগ,
- শ্রদ্ধাত্রয়বিভাগ যোগ এবং
- মোক্ষ যোগ।
বিষয়বস্তু
গীতার অধ্যায়গুলিতে মহাযোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে উপলক্ষ্য করে, মানবমাত্রকেই কর্মে উদ্বুদ্ধ করেছেন। কর্মের ফলাশক্তি বর্জনে কর্মের বন্ধন দূর হয়। বাস্তবিক ফলাসক্তিই সকল অনর্থের মূল। সেই কর্মের ফল ভগবানে সমর্পণ করলে ভক্তিভাব জাগে। গীতার আঠারটি অধ্যায়ব্যাপী উপদেশের সার কথা –
” সবধর্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ।
অহং ত্বাং সর্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচ।।”
কুরুপান্ডবের যুদ্ধ শুরুর মহূর্তে অর্জুনের মনে বিষাদ উপস্থিত হল। অর্জুন জানালেন আত্মীয় পরিজনদের হত্যা করে তিনি রাজ্যলাভ করতে চান না। অর্জুনের রথের সারথি কৃষ্ণ অর্জুনকে তাঁর কর্তব্যের কথা স্মরণ করালেন – শত্রু হত্যা করে ভূমি ভোগ করাই ক্ষত্রিয়ের কর্তব্য তথা ধর্ম। এইভাবে গীতায় কৃষ্ণ ও অর্জুনের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে নাটকীয় মুহূর্ত সৃষ্টি হয়েছে। কথাচ্ছলে অভ্যাসযোগ, কর্মযোগ, ভক্তিযোগ নানা মার্গের দর্শন ভাবনার সমন্বয় ঘটেছে গীতার সহজ সরল ভাষায়।
মূল্যায়ন
যাই হোক না কেন, গীতার রচয়িতা একাধারে যে কবি ও দার্শনিক দুইই ছিলেন সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। গীতার অসংখ্য ভাষ্য, টীকা, ব্যাখ্যা দেখা যায়। শঙ্করাচার্য, রামানুজাচার্য, শ্রীধরস্বামী প্রভৃতি মনীষীরা টীকা রচনা করেছেন। পর্যটক অলবিরনীও গীতার উচ্চ প্রশংসা করেছেন। ইংরাজি ও ল্যাটিন ভাষাতেও এর অনুবাদ রয়েছে। শ্রীমদ্ভাগবদ্গীতার অনুকরণে শিবগিতা, শক্তিগীতা, কপিলগীতা প্রভৃতি সুপ্রসিদ্ধ গীতাগ্রন্থ রচিত হয়েছে। বালগঙ্গাধর তিলক, শ্রীঅরবিন্দ, মহাত্মাগান্ধী প্রভৃতির আধুনিক ব্যাখ্যা ও বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
সমালোচনা
গীতা সম্বন্ধে একটি প্রশ্ন বার বার উঠতে দেখা যায় যে, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ যখন আসন্ন তখন যুদ্ধভূমিতে দাঁড়িয়ে শ্রীকৃয়ের পক্ষে অর্জুনকে এই বিরাট গীতা উপদেশ দেওয়া কী সম্ভব? যদি না হয়, তাহলে, গীতা পরবর্তীকালে প্রক্ষিপ্ত হয়েছে একথা বলতে হয়। কিন্তু এই আক্ষেপ একেবারেই অমূলক। গীতার শ্লোকগুলির অর্থ সম্বলিত বহু বহু শ্লোক মহাভারতের সর্বত্র ছড়ানো রয়েছে। তাই ভাবের দিক থেকে গীতা মোটেই প্রক্ষিপ্ত হতে পারে না। আর, এটা মনে করা অসংগত নয় যে, শ্রীকৃয় অর্জুনকে গীতার সার অংশ শুনিয়েছিলেন। আর গীতাটি রচিত হয়েছে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের ৬০ বছর পরে। এখানে ব্যাস অবশ্যই সেই বিষয়গুলিই আরও বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যা করে থাকতে পারেন, এতে অস্বাভাবিকতার কিছু নেই।
অনুরূপ পাঠ
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা এর মত একইধরণের বিষয় জানতে নিম্নের LINK এ CLICK করুন ।
- প্রতিমা নাটক 👈
- অভিষেক 👈
- প্রতিজ্ঞাযৌগন্ধরায়ণ 👈
- মধ্যমব্যায়োগ 👈
- ঊরুভঙ্গ 👈
- স্বপ্নবাসবদত্তা 👈
- দূতবাক্য 👈
- অবিমারক 👈
- পঞ্চরাত্র 👈
- গীতগোবিন্দম্ 👈
- মেঘদূত 👈
- বিক্রমোর্বশীয়ম্ 👈
- মালবিকাগ্নিমিত্রম্ 👈
- অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ 👈
- মৃচ্ছকটিক 👈
- মুদ্রারাক্ষস 👈
- পঞ্চতন্ত্র 👈
- হিতোপদেশ 👈
- হর্ষচরিত 👈
- কাদম্বরী 👈
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা থেকে জিজ্ঞাস্য
1) গীতার অপর নাম কী?
2) গীতার অপর নাম সপ্তসতী কেন?
3) গীতার উৎস কী?
4) শ্রীমদ্ভাগবদ্গীতায় কয়টি অধ্যায় আছে?
ধন্যবাদ
আমাদের www.sanskritruprekha.com সাইট Visit করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সংস্কৃতের আরো অনেক তথ্য পাওয়ার জন্য Home Page আসুন। Home Page পৌঁছানোর জন্য CLICK HERE👈
আমদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে CLICK HERE 👈