পদ প্রকরণ

আমরা এই অধ্যায়ে পদ প্রকরণ নিয়ে আলোচনা করবো। পদ কাকে বলে, পদ কয়প্রকার — উদাহরণ সহ পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করা হয়েছে। পদ প্রকরণ সপ্তম, অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এছাড়াও স্নাতক ও স্নাতকোত্তর , WBSSC(SLST) পরীক্ষার্থীদের এই অধ্যায় কন্ঠস্থ করতে হবে।

মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম হল ভাষা। ভাষার ক্ষুদ্র রূপ বাক্য। অর্থপূর্ণ শব্দের সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হয়ে পদ সৃষ্টি হয়। পদ প্রকরণ বিষয়ে কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে বোঝানো হয়েছে।

পদউদাহরণ
বিশেষ্যরামঃ, রাবণঃ
বিশেষণশুভ্রঃ, গরীয়ান্
সর্বনামসঃ, বয়ম্
অব্যয়সদা, সকৃৎ
ক্রিয়াগচ্ছতি, বদতি

পদ কাকে বলে -পদ প্রকরণ

পদ প্রকরণ আলোচনার প্রথমেই আসে পদ কী? “সুপ্ তিঙন্তং পদম্” অর্থাৎ সুপ্ বিভক্তি যুক্ত শব্দ ও তিঙ্ বিভক্তি যুক্ত ধাতুই পদ। বিভক্তি যুক্ত শব্দ বাক্যে ব্যবহৃত হলে, তাকে বলে পদ। যা পদ নয়, তা শাস্ত্রে ব্যবহৃত হয় না — “নাপদং শাস্ত্রে প্রযূঞ্জীত“।

পদের প্রকারভেদ

পদ প্রকরণ নিয়ে আলোচনা করতে হলে [প্রথমেই জানতে হবে পদ পাঁচ প্রকার । যেমন – ১) বিশেষ্য পদ , ২) বিশেষণ পদ , ৩) সর্বনাম , ৪) অব্যয় এবং ৫) ক্রিয়াপদ ।

বিশেষ্য পদ

পদ প্রকরণের প্রথম প্রকার, যে পদে কোন ব্যক্তি, বস্তু, জাতি, গুণ, অবস্থা বা ক্রিয়ার নাম প্রকাশ করা হয়, তাকে বিশেষ্য পদ বলে। “গুণদিভিস্তু যদ্ভেদ্যং তদ্বিশেষ্যমুদাহৃতম্”। যেমন—

ব্যক্তিবাচক বিশেষ্যের উদাহরণ

কৃষ্ণঃ ,শ্যামঃ, মাধবঃ, ছবি, বিষ্ণু, অযোধ্যা, কাঞ্চী ইত্যাদি।

বস্তুবাচক বিশেষ্যের উদাহরণ

ফলম্, বৃক্ষঃ, পুষ্পম্, পুস্তকম্, গৃহম্, পৃথিবী, বস্ত্রম্, লেখনী ইত্যাদি।

জাতিবাচক বিশেষ্যের উদাহরণ

মানবঃ, মৃগঃ, শৃগালঃ, ব্যাঘ্রঃ , ক্ষত্রিয়ঃ, ব্রাহ্মণঃ, ভারতীয়ঃ ইত্যাদি।

অবস্থাবাচক বিশেষ্যের উদাহরণ

সুযোগঃ, দুর্যোগঃ, গ্রীষ্মঃ, শৈতাম্, মৃদুতা, কোমলতা ইত্যাদি।

গুণবাচক বিশেষ্যের উদাহরণ

শুক্লতা, দরিদ্রতা, দয়া, সৌন্দর্যঃ, ক্ষমা, নৈপুণ্যম্, বিনয়ঃ, বিদ্যা ইত্যাদি ।

ভাববাচক বিশেষ্যের উদাহরণ

ভক্তিঃ, প্রীতিঃ, স্নেহঃ, ধর্মঃ, শান্তিঃ, গৌরবম্ ইত্যাদি।

ক্রিয়াবাচক বিশেষ্যের উদাহরণ

ত্যাগঃ, গমনম্, শয়নম্, ভোজনম্, দর্শনম্, শ্রবণম্, বিধানম্, ইত্যাদি ।

বিভিন্ন প্রকার বিশেষ্যউদাহরণ
ব্যক্তিবাচক বিশেষ্যশ্যামঃ, মাধবঃ, কৃষ্ণঃ , ছবি, বিষ্ণু, অযোধ্যা, কাঞ্চী
বস্তুবাচক বিশেষ্যফলম্, পুষ্পম্, পুস্তকম্, গৃহম্, পৃথিবী, বস্ত্রম্, লেখনী
জাতিবাচক বিশেষ্য মৃগঃ, শৃগালঃ, মানবঃ , ব্যাঘ্রঃ, বৃক্ষঃ, ক্ষত্রিয়ঃ, ব্রাহ্মণঃ, ভারতীয়ঃ
অবস্থাবাচক বিশেষ্যসুযোগঃ দুর্যোগঃ, গ্রীষ্মঃ, শৈতাম্, মৃদুতা, কোমলতা
গুণবাচক বিশেষ্যেশুক্লতা, দরিদ্রতা, সৌন্দর্যঃ, দয়া, ক্ষমা, নৈপুণ্যম্, বিনয়ঃ, বিদ্যা
ভাববাচক বিশেষ্যভক্তিঃ, প্রীতিঃ, স্নেহঃ, ধর্মঃ, শান্তিঃ, গৌরবম্
ক্রিয়াবাচক বিশেষ্যত্যাগঃ, গমনম্, শয়নম্, ভোজনম্, দর্শনম্, শ্রবণম্, বিধানম্

বিশেষণ পদ

পদ প্রকরণের দ্বিতীয় প্রকার, যে সকল শব্দ দ্বারা বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের গুণ, দোষ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ প্রভৃতি বোঝা যায়, সেইসব শব্দকে বিশেষণ পদ বলে। যেমন— বিশালঃ বৃক্ষঃ । পুষ্পিতা লতা। পক্বম্ ফলম্ ।

বাংলায় বিশেষণ পদে বিভক্তি ও বচন দেখা যায় না , লিঙ্গও ক্বচিৎ দেখা যায়। কিন্তু সংস্কৃতে বিশেষ্য পদে যে লিঙ্গ, বচন, বিভক্তি হয়, বিশেষণ পদেও সেই লিঙ্গ, সেই বচন ও সেই বিভক্তি হয়। প্রাসঙ্গিক শ্লোকটি হলো—

বিশেষ্যস্য হি ঘল্লিঙ্গং বিভক্তি-বচনে চ যে।

তানি সর্বাণি যোজ্যানি বিশেষণপদেষপি।।

অর্থাৎ, বিশেষণ পদটি যখন বিশেষ্যের পূর্বে বসে উদ্দেশ্য-বিশেষণ হবে, তখন তার লিঙ্গ, বিভক্তি ও বচন বিশেষ্যের অনুরূপ হবে। কিন্তু বিশেষণটি অনেক সময় বিশেষ্যের পরেও বসতে পারে। তখন এই বিশেষণকে বিধেয় বিশেষণ বলে। এরূপ ক্ষেত্রে সব সময়ই যে বিশেষ্যের অনুরূপ লিঙ্গ, বিভক্তি ও বচন হবে এমন নয়। উদাহরণগুলি দেখ—“ স্নেহশীলা জননী” ; এখানে ‘স্নেহশীলা’বিশেষণটি বিশেষ্যের পূর্বে বসেছে বলে উদ্দেশ্য-বিশেষণ। জননী মে স্নেহশীলা। এখানে ‘স্নেহশীলা’বিশেষণ বিশেষ্যের পরে বসেছে বলে বিধেয় বিশেষণ হয়েছে। আবার , সুশীলঃ বালকঃ, একম্ ফলম্, সুমিষ্টম্ আম্রম্ ।

বিশেষণ পদ পাঁচ প্রকার। যথা— গুণবাচক অথবা দোষবাচক, তুলনামূলক, উৎকৰ্ষবোধক অপাষক সংখ্যাবোধক এবং সর্বনামীয় বিশেষণ। এদের উদাহরণগুলি লক্ষ্য কর—

গুণবাচক বা দোষবাচক বিশেষণের উদাহরণ

শুভ্রঃ, মধুরঃ, সুন্দরঃ, নিপুণঃ, মূর্খঃ, জড়ঃ, খঞ্জঃ ইত্যাদি

তুলনামূলক বিশেষণের উদাহরণ

গরীয়ান্, প্রিয়তরঃ, মহীয়সী, উন্নততরঃ, বলবত্তরা ইত্যাদি।

উৎকর্ষাবোধক বা অপকর্ষবোধক বিশেষণের উদাহরণ

শ্রেষ্ঠঃ, গরিষ্ঠঃ, প্রিয়তমঃ, লঘুতমঃ, বৃহত্তমঃ ইত্যাদি।

সংখ্যাবোধক বিশেষণের উদাহরণ

একঃ, বহবঃ, দ্বৌ, চত্বারঃ, একবিংশতিঃ ইত্যাদি।

সর্বনামীয় বিশেষণের উদাহরণ

সঃ, সা, যা, তৎ, সর্বা, সর্বম্, ইদম্ ইত্যাদি।

বিভিন্ন প্রকার বিশেষণউদাহরণ
গুণবাচক বিশেষণশুভ্রঃ, মধুরঃ, সুন্দরঃ, নিপুণঃ, মূর্খঃ, জড়ঃ, খঞ্জঃ
তুলনামূলক বিশেষণ প্রিয়তরঃ, গরীয়ান্, মহীয়সী, উন্নততরঃ, বলবত্তরা
উৎকর্ষাবোধক বিশেষণ প্রিয়তমঃ, শ্রেষ্ঠঃ, গরিষ্ঠঃ, লঘুতমঃ, বৃহত্তমঃ
সংখ্যাবোধক বিশেষণএকঃ , দ্বৌ, চত্বারঃ, বহবঃ, একবিংশতিঃ
সর্বনামীয় বিশেষণসঃ, যা, সা, তৎ, সর্বা, সর্বম্, ইদম্

সর্বনাম পদ

পদ প্রকরণের তৃতীয় প্রকার, সকল প্রকার নাম-পদ অর্থাৎ বিশেষ্য পদের পরিবর্তে যে সকল পদ ব্যবহৃত হয়, তাদের সর্বনাম পদ বলে। শ্রুতিমাধুর্যের জন্য সর্বনামের প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যেমন—বলরামো মে ভ্রাতা; বলরামো যাতি—এইভাবে না বলে, বলরামো মে ভ্রাতা; সঃ যাতি বললে শ্রুতিমধুর হয়। তাই দ্বিতীয় বাক্যে ‘বলরামঃ’ স্থানে ‘সঃ’ ব্যবহার করা হলো। ‘সঃ’ হলো সর্বনাম পদ। মোট ৩৫টি সর্বনাম পদ আছে। যেমন—অম্মদ্, যুষ্মদ্, এতদ্, অদস্, যদ্, তদ্, ইদম্, এক, পূর্ব ইত্যাদি।

মনে রাখতে হবে—নিকটবর্তী ব্যক্তি বা বস্তু বোঝাতে ‘ইদম্’, অধিকতর নিকটবর্তী ব্যক্তি বা বস্তুর ক্ষেত্রে ‘এতদ্’, দুরবর্তী ব্যক্তি বা বস্তুর সম্বন্ধে ‘অদস্’ এবং পরোক্ষ কোন ব্যক্তি বা বস্তু বোঝাইতে ‘তদ্’ শব্দের ব্যবহার হয়।

অব্যয় পদ

“সদৃশং ত্রিষু লিঙ্গেষু সর্বাসু চ বিভক্তিযু।

বচনেষু চ সর্বেষু যন্ন ব্যেতি তদব্যয়ম্ ।।”

অর্থাৎ তিন লিঙ্গে, সাতটি বিভক্তিতে এবং একুশটি বচনে যে শব্দের কোনরূপ পরিবর্তন হয় না, তাকে বলে অব্যয় পদ। অব্যয় শব্দের উত্তর সকল বিভক্তির লোপ হয়ে যায়। যথা-সকৃৎ, কদা, সদা, প্রাতঃ, অধুনা, দিবা, সায়ম্, মিথ্যা, স্বয়ম্ ইত্যাদি। অব্যয় পদ শব্দ-সংখ্যায় অনেক। অব্যয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে অব্যয় পদ click করুন।

অব্যয় পদবাক্য রচনা
অধুনাঅধুনা বসন্তকালঃ।
মিথ্যাকদাপি মিথ্যা মা বদ।
সকৃৎসকৃৎ কন্যা প্রদীয়তে।
সদাসদা সত্যম্ ব্রূয়াৎ।

ক্রিয়া পদ

ধাতুর অর্থকে ক্রিয়া বলে। অর্থাৎ যা দ্বারা হওয়া, থাকা, করা, খাওয়া, যাওয়া প্রভৃতি প্রকাশ পায়,তাকে ক্রিয়া পদ বলে। ধাতুর উত্তর তিঙ্ বিভক্তি যোগ করে ক্রিয়াপদ গঠন করতে হয়। ক্রিয়া দুইপ্রকার—সমাপিকা ও অসমাপিকা।

যে ক্রিয়ার দ্বারা বাক্য সমাপ্ত হয়, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। সমাপিকা ক্রিয়া তিঙ্ বিভক্তি যোগে গঠিত ধাতুর উত্তর কখনও কখনও ‘ক্ত’, ‘ক্তবতু’ প্রভৃতি প্রত্যয়ের যোগেও সমাপিকা ক্রিয়ার কার্য সাধিত হয়।

যে ক্রিয়ার প্রয়োগ করা সত্ত্বেও বাক্য অসম্পূর্ণ থাকে, অর্থাৎ কর্তার আরও কিছু বলবার বা করবার থাকে, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। অসমাপিকা ক্রিয়া কৃৎ-প্রত্যয় যোগে গঠিত হয়। যথা—গম্ (ধাতু)+ক্তাচ্ (প্রত্য়য়)- গত্বা (গিয়া, যাইয়া), শ্রু(ধাতু) + ক্তাচ্(কৃৎ-প্রত্যয়) = শ্রুত্বা (শুনে, শুনিয়া) ।

বর্তমান, অতীত এবং ভবিষ্যৎ-এই তিনটি কালের অর্থে এবং আদেশ, উপদেশ, অনুরোধ, ঔচিত্য প্রভৃতি বিবিধ অর্থে ক্রিয়াপদের ব্যবহার হয়।

পদপ্রকরণ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য

পদ প্রকরণ বিষয়ে কয়েকটি জানার বিষয়।

১)পদ কয় প্রকার?

পদ পাঁচ প্রকার ।

২)শব্দ কিভাবে পদে পরিণত হয় ?

শব্দের সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হয়ে বাক্যে ব্যবহৃত হলে পদে পরিণীত হয় ।

৩)ক্রিয়াপদ কয় প্রকার ও কি কি ?

ক্রিয়াপদ দুই প্রকার । যথা – সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়পদ ।

Leave a Comment