এই অধ্যায়ের আলোচ্য বিষয় দ্বাদশ শ্রেণীর সংস্কৃত প্রকল্প । দ্বাদশ শ্রেণীর জন্য কয়েকটি প্রকল্প দেওয়া হল। Class xii Sanskrit Project , Sanskrit Project Class 12 । এই প্রকল্পগুলি উচ্চমাধ্যমিক 2025 এর জন্য Suggestive কিছু দেওয়া হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাসংসদ প্রবর্তিত সংস্কৃত বিষয়ের পাঠ্যসূচি অনুযায়ী একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের অঙ্গ হিসেবে একটি প্রকল্প করতে হবে। নিজ নিজ বিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিষয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকার তত্ত্বাবধানে নির্বাচিত প্রকল্পের কাজ করে প্রতিবেদন লিখতে হবে। শিক্ষার্থীরা তার নিজের পছন্দমতো বিষয় গ্রহণ করতে পারে। এখানে সে নিজে প্রকল্প বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ করে সেটি শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছে উপস্থাপন করবে। দ্বাদশ শ্রেণীর সংস্কৃত প্রকল্প পরীক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সংস্কৃত প্রকল্প , Sanskrit Project
কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে সুপরিকল্পিত মূল্যায়নের মাধ্যমে যে কাজ সম্পন্ন করা হয় , তাকে প্রকল্প বলে। পকল্প নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে ও সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে সম্পাদন করা হয়। প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটবে। উচ্চ মাধ্যমিক পাঠ্যসূচি WBCHSE অনুসারে নিম্নে কয়েকটি প্রকল্প দেওয়া হল।
সংস্কৃত মনীষায় বিজ্ঞান চেতনা
কৃতজ্ঞতা স্বীকার
আমি সর্বপ্রথম কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, আমাদের বিদ্যালয়ের মাননীয় শিক্ষক/মাননীয়া শিক্ষিকা শ্রী/শ্রীমতী/ড. …………………………… -কে। তাঁর ঐকান্তিক সহযোগিতা ছাড়া এই কাজটি শেষ করে প্রতিবেদন লেখা সম্ভব হত না। কৃতজ্ঞতা জানাই সকল শিক্ষক/ শিক্ষিকাকে, যাঁরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমাকে প্রকল্পটি সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছেন। ধন্যবাদ জানাই সেইসব সহপাঠীদের ও বিভিন্ন গ্রন্থাগারের শিক্ষাকর্মীদের যাঁরা আমার প্রকল্পটি তৈরি করার ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছেন।
……………………………………….. ………………………………………………………
ছাত্রের/ছাত্রীর স্বাক্ষর শিক্ষকের/শিক্ষিকার স্বাক্ষর
ভূমিকা
সংস্কৃত ভাষা বিশ্ব সাহিত্যের ইতিহাসে প্রাচীন ভাষা। বর্তমানে সংকৃত শিক্ষায় পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ প্রবর্তিত 2023 – 2024 শিক্ষাবর্ষে নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রমের “সংস্কৃত মনীষার বিজ্ঞান চেতনা” প্রকল্পটি রূপায়নে গণিত ও চিকিৎসা বিজ্ঞান পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে বর্তমান শিক্ষা সম্পন্ন হবে। তাই উচ্চমাধ্যমিক স্তরে দ্বাদশ শ্রেনির সংস্কৃত বিষয়ের প্রকল্প এই বিষয় বস্তুটির উপর সম্যক আলোচনা করছি।
সংস্কৃত মনীয়ার বিজ্ঞানের আলোচনা আমরা বৈদিক সাহিত্যেই দেখতে নাই। বেদাঙ্গের মধ্যে অবস্থিত জ্যোতিষ শাস্ত্র বিজ্ঞান সম্মত। সুতরাং ভুমিকা আরম্ভে আমি প্রকল্প রচনায় চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোচনার কথা বললেও জ্যোতির্বিজ্ঞানের কিছু তথ্য আমি বিশ্লেষণ করবো। জ্যোতিষের বিষয় সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ, নক্ষত্র, সমগ্র নভোমণ্ডল, সৌর জগৎ প্রভৃতি। আবার পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় গণিত শাস্ত্রে ভারতবর্ষ ছিল পথিকৃৎ। দশমিকের উদ্ভাবন এবং শূন্যের প্রকাশ ভারতীয় গণিতজ্ঞদেরই প্রথম আবিষ্কার। আলোচ্য প্রকল্প অনুযায়ী বিশেষ বস্তু বিশ্লেষ করতে গিয়ে নিম্নরূণ বিজ্ঞান মনস্ক ব্যক্তিদের আলোচনা অবশ্য কর্তব্য।
প্রকল্পের বিষয়
সংস্কৃত মনীষায় বিজ্ঞান চেতনা নিয়ে আলোচনাই এই প্রকল্পটির বিষয়বস্তু।
প্রকল্পটির গুরুত্ব
প্রাচীন ভারতীয় মনীষার সর্ববিধ অনুশীলনের আশ্চর্য প্রকাশ বৈদিক যুগ থেকে। এর মধ্যে যেমন আছে সাহিত্যের বিচিত্র মার্গচারণা তেমনি আছে ধর্ম, দর্শন, রাজনীতিশাস্ত্র সামাজিক ও পারিবারিক জীবনচর্যার অনুশাসনমূলক সাহিত্য। সংস্কৃত সাহিত্যের মধ্যে প্রবেশ করলে দেখা যাবে জ্যোতির্বিদ্যা, অঙ্কশাস্ত্র, জ্যামিতিশাস্ত্র, আয়ুর্বেদ চিকিৎসাশাস্ত্র, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীববিদ্যা, সমরবিদ্যা, বৃক্ষায়ুর্বেদ, এমনকি চৌর্যবিদ্যা বিষয়ক গ্রন্থের বিপুল প্রাচুর্য। বৈদিক যুগে যাগযজ্ঞ অনুষ্ঠানের প্রয়োজনে বিবিধযন্ত্র নির্মাণ, স্বাস্থ্যরক্ষা, যজ্ঞস্থল নির্মাণে ইটের মাপ ও নির্মাণ এবং সর্বোপরি যজ্ঞানুষ্ঠানের দিন-ক্ষণ, তিথি-নক্ষত্র, সূর্যচন্দ্রের অবস্থান সব কিছুই বৈজ্ঞানিকভাবে প্রস্তুত করার ব্যবস্থা ছিল সেজন্যে জ্যোতির্বিদ্যাচর্চা ও অথর্ববেদে আয়ুর্বেদ চর্চার যে সূত্রপাত হয়েছিল তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। তাই সংস্কৃত মনীষায় বিজ্ঞান চেতনা সম্বন্ধে সকলের কৌতুহল থাকায় স্বাভাবিক। সুতরাং এই প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রকল্পটির উদ্দেশ্য
সংস্কৃত মনীষায় বিজ্ঞান চেতনা প্রকল্পটি রচনার মহতী উদ্দেশ্য আছে। সেগুলি হল
- প্রকল্পটির মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা প্রাচীন ভারতের গণিত ও চিকিৎসা বিজ্ঞান তত্ত্ব ও উন্নতি বুঝতে পারবে।
- বর্তমানে প্রচলিত আয়ুর্বেদ সম্বন্ধে আগ্রহী হয়ে উঠবে।
- অভিনব একটি বিষয়ে প্রকল্প কাজ করার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করবে।
প্রকল্পটি রূপায়ণের পরিকল্পনা
- বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে তথ্য অনুসন্ধান।
- শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছে প্রকল্প কাজটি নিয়ে সরাসরি আলোচনা।
তথ্য সংগ্রহ
সংস্কৃত মনীষার বিজ্ঞান চেতনা প্রকল্পটি সম্পন্ন করার জন্য নিম্নের বিষয়গুলি থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
আর্যভট্ট
আর্যভট্ট ছিলেন ভারতের গণিতবিদদের মধে অন্যতম। তিনি অশ্মক নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। 476 খ্রিষ্টাব্দে গুপ্তযুগে পাঠনামক কুসুমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রথম ঘোষণা করেন যে, পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে প্রদক্ষিণ করে। আর্যভট্ট তিনখানি গন্থ রচনা করেছিলেন–
1 আর্যভট্টীয়
2 আর্যআষ্টশতক
3 দশগীতিকাসূত্র।
দশগীতিকাসূত্রে গণিত বিদ্যা বিষয়ে আলোচনা আছে। আর্যভট্টই পথম সূর্যগ্রহণ ও চদ্ৰগ্রহণের সঠিক কারণ নির্দেশ করেন। তিনি 550 খ্রিস্টাব্দে মারা যান। তিনি আর্যসিদ্ধান্ত নামে অপর একটি পুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেন। পৃথিবীর আহ্নিক গতি নিয়ে আর্যভট্টের মতবাদ বিজ্ঞান মহলে বর্নিত। বিভিন্ন স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের সাহায্যে আর্যভট্ট তাঁর গ্রন্থে সংখ্যা নির্দেশ করেছেন। আর্যভট্টের কালক্রিয়াপাদে বর্ষবিভাগ সম্পর্কে আলোচনা আছে। জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত অজস্র সিদ্ধান্ত ও তথ্য আর্যভট্টের রচনায় পাওয়া যায়।

বরাহমিহির
ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান ও গণিতশাস্তে অনতম আচার্য হলেন বরাহমিহির। খ্রিস্টিয় ষষ্ঠ শতকে বর্তমান ছিলেন। বরাহমিহির প্রাচীন ভারতের গুপ্ত সাম্রাজ্যের সমসাময়িক একজন বিখ্যাত দার্শনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান, গণিতবিদ ও কবি ছিলেন। তাঁর রচিত জ্যোতিষ গ্রন্থের নাম হল–
1) পঞ্চ সিদ্ধান্তিকা ও
2) বৃহৎসংহিতা ।
বরাহামহির মালবের রাজা বিক্রমাদিত্য যশোবর্মার নবরত্ন সভার একরত্ন ছিলেন। বরাহ মিহিরকে আধুনিক ভারতের জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক বলা হয়।

পঞ্চসিদ্ধান্তিকা
বরাহমিহিরের প্রধান গ্রন্থ হল পঞ্চসিদ্ধান্তিকা। গ্রন্থটির রচনাকাল 575 খ্রিস্টাব্দ। এটি একটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের গ্রন্থ। গ্রন্থটিতে জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত পাঁচটি পূর্ববর্তী সিদ্ধান্তের সংক্ষেপে | বিবরণ দেওয়া হয়েছে। সেই পাঁচটি সিদ্ধান্ত হল—
1) সূর্যসিদ্ধান্ত
2) রোমক সিদ্ধান্ত,
3) পৌলিস সিদ্ধান্ত,
4) বাশিষ্ঠ সিদ্ধান্ত এবং
5) পৈতামহ সিদ্ধান্ত।
রোমক সিদ্ধান্ত রোম এবং এবং পৌলিস সিদ্ধান্তে গ্রীকদের জ্যোতির্বিজ্ঞানের সিদ্ধান্তগুলোর আলোচনা আছে। বেশ কিছু ত্রিকোণমিতিক সূত্রের প্রথম হদিশ পাওয়া যায় এই গ্রন্থে।
বৃহৎসংহিতা
বরাহমিহির রচিত বৃহৎসংহিতা মূলত ফলিত জ্যোতিষের গ্রন্থ। গ্রন্থটিতে 106 টি অধ্যায় আছে। বিষয়-বৈচিত্র্যে গ্রন্থটি বিশ্বকোষ-চরিত্রের। গ্রহের গতি, গ্রহণ, বৃষ্টি, মেঘ, শস্যবৃদ্ধি, স্থাপত্য, বাস্তুবিদ্যা, গন্ধদ্রব্য তৈরি করা, স্ত্রী-পুরুষের লক্ষণ, পারিবারিক সম্পর্ক, রত্ন, মুক্তো, উৎসব প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা আছে বৃহৎসংহিতাতে। এই গ্রন্থে গর্গ, পরাশর, কশ্যপ, ভৃগু, বশিষ্ঠ প্রমুখ শাস্ত্রকারদের নাম ও মতামত উল্লিখিত হয়েছে।
ত্রিকোনমিতির ক্ষেত্রে বরাহমিহিরের অবদান অসামান্য। ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানে আর্যভট্টের উত্তরসূরী রূপে বরাহমিহিরের স্থান বিশেষ উল্লেখযোগ্য। আর্যভট্ট ও বরাহমিহির ছাড়াও সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাসে চিকিৎসা বিজ্ঞানে চরকসংহিতা ও সুশ্রুতসংহিতা বিজ্ঞান চেতনার নমুনা নিম্নে আলোচনা করা হলো।
চরকসংহিতা
এটির প্রকৃত রচয়িতা অগ্নিবেশ এটি বহুলাংশে নষ্ট হয়ে গেলে ভগবান শেষনাগ চরকরূপে আবির্ভূত হয়ে অগ্নিবেশ তন্ত্রটিকে সংস্কার করেন। চরকের নামানুসারে গ্রন্থটির নাম হয় চরকসংহিতা। তবে এই গ্রন্থটিও পরবর্তীকালে দৃঢ়বল কর্তৃক সংস্কার করা হয়। তাই চরকসংহিতার রচয়িতা একাধিক।

সুশ্রুতসংহিতা
ভারতীয় চিকিৎসাশাস্ত্রের অপর এক মহান শিক্ষাগুরু ছিলেন সুশ্রুত। সেই সুদূর নবম ও দশম শতাব্দীতে তাঁর খ্যাতি ভারতকে অতিক্রম করে সুদূর অঞ্চলে পরিব্যাপ্ত হয়েছিল। ধন্বন্তরির দ্বাদশ শিষ্যের অন্যতম ছিলেন সুশ্রুত। সুশ্রুতের নামানুসারে ‘’সুশ্রুত সংহিতা”। এরূপ গ্রন্থের নাম হয়েছে বলে মনে হয়। নাগার্জুনের দ্বারা সংস্কৃত গ্রন্থটি ‘সুশ্রুত সংহিতা’ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে বলে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের গবেষকরা মনে করেন। এটি শল্যবিদ্যার শাস্ত্র।

তথ্য বিশ্লেষণ
উপরের তথ্যগুলি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, প্রাচীন ভারতীয় মনীষার বিজ্ঞান চেতনা অনুশীলনের আশ্চর্য প্রকাশ বৈদিক যুগ থেকে। বৈদিক যুগে যাগযজ্ঞ অনুষ্ঠানের প্রয়োজনে বিবিধযন্ত্র নির্মাণ, স্বাস্থ্যরক্ষা, যজ্ঞস্থল নির্মাণে ইটের মাপ ও নির্মাণ এবং সর্বোপরি যজ্ঞানুষ্ঠানের দিন-ক্ষণ, তিথি-নক্ষত্র, সূর্যচন্দ্রের অবস্থান সব কিছুই বৈজ্ঞানিকভাবে প্রস্তুত করার ব্যবস্থা ছিল সেজন্যে জ্যোতির্বিদ্যাচর্চা ও অথর্ববেদে আয়ুর্বেদ চর্চার যে সূত্রপাত হয়েছিল তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
সিদ্ধান্ত
সংস্কৃত মনীষায় বিজ্ঞান চেতনা প্রকল্পটি সম্পন্ন করে এই সিদ্ধান্তে পৌছানো যায় যে, প্রাচীন ভারত গণিত ও বিজ্ঞান চর্চায় অনেক এগিয়ে ছিল , সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।
ধন্যবাদ
দ্বাদশ শ্রেণীর সংস্কৃত প্রকল্প ।
আমাদের www.sanskritruprekha.com সাইট Visit করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ🙏। সংস্কৃতের আরো অনেক তথ্য পাওয়ার জন্য Home Page আসুন। Home Page পৌঁছানোর জন্য CLICK HERE👈
আমদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে CLICK HERE 👈