রামায়ণ ও মহাভারতের পৌর্বাপর্য

এই অধ্যায়ের আলোচ্য বিষয় রামায়ণ ও মহাভারতের পৌর্বাপর্য । এই আলোচনায় ভারতীয় সংস্কৃতিতে যে দুটি মহাকাব্যের অনন্ত প্রভাব আছে তাদের মধ্যে কোনটি আগের রচনা এবং কোনটি বা পরবর্তীকালের। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর , WBSSC(SLST) পরীক্ষার্থীদের রামায়ণ ও মহাভারতের পৌর্বাপর্য কন্ঠস্থ করতে হবে।

রামায়ণ ও মহাভারত ভারতীয়দের কাছে অত্যন্ত আদরের। রামায়ন ও মহাভারতের পৌর্বাপর্য আলোচনা কর – এই প্রশ্নের উত্তর আলোচনা করব। রামায়ণ ও মহাভারতের পৌর্বাপর্য এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। দ্বাদশ শ্রেণী ছাড়াও স্নাতক ও WBSSC এর SLST প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় এ সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলে শিক্ষার্থীদের খুব অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।

রামায়ণ ও মহাভারতের মধ্যে কোনটি প্রাচীনতর

ভারতের জাতীয় কাব বা জাতীয় সাহিত্য বলতে, রামায়ণ ও মহাভারত – এই দুটি মহাকাবকেই বোঝায়। ভারতবংশীয় নরপতিদের দীঘ কহিনী মূলক মহাকাব্যের নাম ‘মহাভারত’। কুরু-পান্ডবের যুদ্ধের কাহিনী এর উপজীব্য বিষয়। আর ঈক্ষ্বাকুরংশীয় নরপতিদের কাহিনী এর বর্ণনীয় বিষয়। ভারতীয় সংস্কৃতিতে যে দুটি মহাকাব্যের অনন্ত প্রভাব আছে তাদের মধ্যে কোনটি আগের রচনা এবং কোনটি বা পরবর্তীকালের- এ বিষয় আলোচনা শুধুমাত্র অনুমানের উপর নির্ভর করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।

চিরাচরিত প্রথানুসারে বাল্মীকি আদি কবি এবং রামায়ণ আদিকাব্য বলে আমরা মনে করে থাকি। দশাবতারক্রমে কৃষ্ণ অবতারের পূর্বে রাম অবতার ছিলেন। রামের জন্ম ত্রেতাযুগে আর কৃষ্ণের জন্ম পরবর্তী দ্বাপর যুগে। এহিসাবে হিন্দুগণ রামায়ণকে মহাভারতের পূর্ববতী বলে মনে করেন। নিচের তথ্যগুলি থেকে প্রমাণিত হয় যে, মহাভারতের চেয়ে রামায়ণ প্রাচীনতর যুগের রচনা।

I) মহাভারতের কোন চরিত্রের উল্লেখ রামায়ণে নেই। অথচ রামায়ণে চরিত্রের নাম এমনকি রামায়ণের উপাখ্যান মহাভারতের বনপর্বে আছে।

II) রামায়ণে সতীদাহ প্রথার উল্লেখ নেই। কিন্তু মহাভারতে এর উল্লেখ আছে। মহাভারতে পাণ্ডুপত্নী মাদ্রীর সতীদাহের কথা রয়েছে। এই কারণে অনেকে মহাভারতের থেকে রামায়ণকে আগের রচনা বলে মনে করেন।

III) রামায়ণে বর্ণিত সভ্যতা অনাড়ম্বর, সরলতাপূর্ণ ও অরণ্য প্রভাবিত। অন্যদিকে মহাভারতে নাগরিক সভ্যতার চিত্র বর্ণিত হয়েছে। এই কারণে রামায়ণ মহাভারত অপেক্ষা প্রাচীনতর।

IV) মহাভারতে পাটলিপুত্রকে একটি নগর রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। মেগাস্থিনিসের মতে খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে কালাশক নামে এক ব্যক্তি এর প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু রামায়ণে এর উল্লেখ নেই। অতএব পাটলিপুত্র নগর প্রতিষ্ঠা এবং মহাভারত রচনার পূর্বেই রামায়ণ রচিত হয়েছিল।

V) রামায়ণ অপেক্ষা মহাভারতের যুগে ব্যাপক স্ত্রী শিক্ষার প্রসার ঘটেছিল। যা পরবর্তীকালে উন্নততর সভ্যতার পরিচয় বহন করে।

VI) বাল্মীকি ঋষির নাম মহাভারতে একাধিকবার দেখা যায়। এ থেকে প্রমাণিত হয়, মহাভারত রামায়ণের পরে রচিত হয়েছে।

VII) পৌরাণিক মতে রামায়ণের সূর্যবংশ মহাভারতের চন্দ্রবংশ অপেক্ষা প্রাচীনতর।

VIII) বৌদ্ধজাতক কাহিনীগুলিতে রামায়ণের কাহিনী ও শ্লোকের উদ্ধৃতি স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, রামায়ণ বুদ্ধদেবের আবির্ভাবের পূর্বেই রচিত হয়েছে। অতএব রামায়ণ মহাভারতের পূর্ববর্তী

কিন্তু পাশ্চাত্য পন্ডিত ভিন্টারনিৎস এসব যুক্তির উপর গুরুত্ব আরোপ না করে বরং বিরোধিতা করেছেন। তাঁর মতে মহাভারতই রামায়ণের পূর্ববর্তী রচনা। এসম্পর্কে তাঁর যুক্তি – মহাভারতের বর্ণনাভঙ্গির মধ্যে তার প্রাচীনত্বের ছাপ রয়েছে। তাঁর মতে কাব্যিক যুগের রামায়ণের ভাষা, রচনারীতি ও অলংকারের মধ্যেও পরবর্তী কাব্যযুগের প্রতিচ্ছবি রয়েছে। কিন্তু মহাভারতে এই রচনা রীতির সন্ধান মেলেনা।

মহাভারতের শ্লোকে বক্তা এবং তার বক্তব্য ‘কুন্তী উবাচ’ প্রভৃতিকে শ্লোকের বাইরের অংশ রূপে দেখানো হয়েছে। এটি প্রাচীন লোকগাথার পরিচায়ক। কিন্তু রামায়ণে এরূপ রীতির ব্যবহার পাওয়া যায় না। সেখানে শ্লোকের মধ্যে বিভিন্ন চরিত্রের উক্তিগুলি পরবর্তী কাব্যের যুগের মত করে উপস্থিত করা হয়েছে। তাছাড়া দুটি মহাকাব্যের সমাজ চিত্রের মধ্যেও প্রচুর পার্থক্য বিদ্যমান। মহাভারতের মানুষ ছিল অধিক যুদ্ধপরায়ণ। মহাভারতের নারীচরিত্রের ক্ষত্রিয় রমনীসুলভ তেজস্বিতা ও সহ্যের পরিচয় পাওয়া যায়। কিন্ত রামায়ণের নারীগণ পরবর্তী যুগের মহাকাব্যের চিত্রিত নারীর মতো কোমল স্বভাবের। সীতা চরিত্রের যে কোমলতা ও সহিষ্ণুতার পরিচয় মেলে দ্রৌপদী, কুন্তী, গান্ধারী প্রভৃতি চরিত্রে সেরূপ নয়। এ থেকে মনে হয় মহাভারত কম মার্জিত সভ্যতার সমাজে রচিত হয়েছিল। আর রামায়ণ তার চেয়ে পরবর্তীকালে মার্জিত ও উন্নততর সমাজে রচিত হয়েছিল।

অবশেষে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ডঃ ভিন্টারনিৎসের যুক্তিগুলি প্রশংসনীয় হলেও আমাদের বিবেচনায় তা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ আমরা আদি কবি বাল্মীকির মুখনিঃসৃত আদি ছন্দোময়ী ভাষাকে কখনই অস্বীকার করতে পারি না। অতএব রামায়ণ যে মহাভারতের চেয়ে আগের রচনা সে বিষয়ে কোন সদেহ নেই।

রামায়ণ ও মহাভারতের পৌর্বাপর্য থেকে জিজ্ঞাস্য

1) মহাভারত কয়টি পর্বে রচিত।

18 টি।

2) মহাভারতের অপর কী নামে পরিচিত

পঞ্চমবেদ।

3) মহাভারতে কতগুলি শ্লোক আছে

একলক্ষ।

ধন্যবাদ

আমাদের www.sanskritruprekha.com সাইট Visit করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সংস্কৃতের আরো অনেক তথ্য পাওয়ার জন্য Home Page আসুন। Home Page পৌঁছানোর জন্য CLICK HERE👈

আমদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে CLICK HERE👈

Leave a Comment