এই অধ্যায়ের আলোচ্য বিষয় ভাসের নাটকচক্র । ভাসের রচনাবলীর মূল্যায়ণ কর অথবা ভাসের নাটকগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও, এই সংক্রান্ত আলোচনা। WBCHSE এর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এছাড়াও স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্যও ভাসের নাটকচক্র সম্পর্কে নিখুতভাবে জানা দরকার। WBSSC এর SLST ক্ষেত্রে এই আলোচ্য বিষয় অতীব জরুরী।
আমরা যাকে সাহিত্য বলি, সংস্কৃত অলংকার শাস্ত্রে তাই কাব্য নামে চিহ্নিত। রসাত্মক বাক্যে গুণ, অলংকারের মন্ডন ছাড়িয়ে কাব্যের অন্তর্গঢ় রসরূপ সহৃদয় পাঠকের মন আপ্লুত করে।সংস্কৃত সাহিত্যে ‘কাব্যং দ্বিবিধং দৃশ্যং শ্রব্যং চ’ অর্থাৎ কাব্য দুই প্রকার দৃশ্যকাব্য ও শ্রব্যকাব্য। দৃশ্যকাব্যের আধুনিক প্রতিশব্দ নাটক। মঞ্চে অভিনয় দর্শনের মাধ্যমে দৃশ্যকাব্য উপস্থাপিত হয়। এই দৃশ্যকাব্যের অপর নাম রূপক; কারণ এতে পাত্র-পাত্রীর উপর, নাটকীয় চরিত্রের রূপ আরোপ করা হয়। কালিদাস পূর্ব নাট্যকারদের মধ্যে ভাস অন্যতম। কালিদাস তার মালবিকাগ্নিমিত্র নাটকে প্রথিতযশা ভাসের নাম করেছেন। বানভট্টও ভাস নাটকচক্রের খ্যাতির কথা বলেছেন। মহাকবি ভাস নিজের কবিত্বের পরিচয় যত শ্রদ্ধাস্পদ নিজের ব্যক্তিত্ব নিয়ে ততই বিবাদাস্পদ। যাইহোক, ভাসের নাটকচক্র উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষার্থীদের জন্য একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এছাড়া WBSSC এর SLST পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ভাসের রচনাবলীর মূল্যায়ণ কর
ভূমিকা :— সংস্কৃত নাট্য সাহিত্যে মহাকবি ভাস মহাকবি কালিদাসের ও পূর্ববর্তী। মহাকবি কালিদাস স্বয়ং উল্লেখ করেছেন তাঁর মালবিকাগ্নিমিত্র নাটকে, “প্রথিতযশাং ভাসসৌমিল্লকবিপুত্রাদীনাম্” ইত্যাদি। পানিনির ব্যাকরণের নিয়ম অনুসৃত হয়নি বলে তাঁকে পানিরও পূর্ববর্তী বলে ধরা হয়।
নাটক আবিষ্কার :— পন্ডিত টি. গণপতি শাস্ত্রী ১৯০৯ হতে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ ভারতের কেরল অঞ্চলে ১৩ টি নাট্যগ্রন্থ পান। এই আবিষ্কার সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাসে এক অদ্ভুত ঘটনা। তিনি এই নাট্য গ্রন্থ গুলি প্রকাশ করেন এবং নানা যুক্তি ও প্রমাণের সাহায্যে স্থির করেন, এগুলি সব লুপ্ত ভাস নাট্যচক্রের গৌরবময় নিদর্শন।
রচনাবলী :— বিষয়বস্তুর উৎস অনুসারে ভাসের নাটকগুলিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন—
- রামায়ণের কাহিনী অবলম্বনে রচিত — (1)প্রতিমা ও (2) অভিষেক।
- মহাভারতের কাহিনী অবলম্বনে রচিত — (3) দূতবাক্য, (4) দূতঘটোৎকচ, (5) কর্ণভার, (6) মধ্যমব্যয়োগ, (7) ঊরুভঙ্গ, (8) পঞ্চরাত্র, (9) বালচরিত (মহাভারতের হরিবংশ বা কৃষ্ণ উপাখ্যান অবলম্বনে)
- বৃহৎ কথার কাহিনী অবলম্ব রচিত — (10) স্বপ্নবাসবদত্তা, (11) প্রতিজ্ঞাযৌগন্ধরায়ণ,
- লোক কথা অবলম্বনে রচিত — (12) অভিমারক, (13)চারুদত্ত।
1) প্রতিমা :—রামায়ণ অবলম্বনে রচিত নাটকের মধ্যে সাত অংকের প্রতিমা নাটক সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয়। কৈকেয়ীর ষড়যন্ত্রে রামচন্দ্রের বনবাস থেকে আরম্ভ করে রাবণ বধ এবং শেষে সীতা সহ অযোদ্ধায় প্রত্যাবর্তন হল এই নাটকের বিষয়বস্তু।
2) অভিষেক :— এটি ছয় অঙ্কের নাটক। রাম ও সুগ্রীবের মৈত্রী স্থাপন দিয়ে শুরু করে একে একে বালী বধ সুগ্রীবের রাজ্যাভিষেক, বিভীষণের যোগদান, রাবণ বধ, সীতার অগ্নিপরীক্ষা, রাম-সীতার অভিষেক উপস্থাপিত হয়েছে।
3) দূতবাক্য :— মহাভারত অবলম্বনে পঞ্চরাত্র ছাড়া আর সব নাটকই একাঙ্ক। কৌরব এবং পাণ্ডবদের মধ্যে সন্ধি স্থাপনের জন্য দুতরূপে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব এবং দুর্যোধন কর্তৃক শ্রীকৃষ্ণের প্রতি দুর্ব্যবহার এর মূল উপজীব্য।
4) দূতঘটোৎকচ :— অন্যায় যুদ্ধে অভিমুন্যের মৃত্যু। অর্জুনের প্রতিশোধ গ্রহণের প্রতীজ্ঞা বাক্য কৌরবদের শোনাতে ঘটোৎকচের দৌত্যের কাহিনী এই নাটকের বিষয়বস্তু।
5) কর্ণভার :— ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে কর্ণের কাছ থেকে ইন্দ্রের দ্বারা কবচ কুন্ডল গ্রহণের বিষয় অবলম্বনে নাটকটি রচিত। এই নাটকটি কর্নের চরিত্র এমন ভাবে অঙ্কিত যে দর্শকরা অভিভূত না হয়ে পারে না।
6) মধ্যমব্যয়োগ :— ঘটোৎকচ মাতা হীড়িম্বার খাদ্য হিসেবে ব্রাহ্মণের মধ্যম পুত্রকে আনতে যায়। এমতাবস্থায় মধ্যমপান্ডব ভীম যেতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ভীম তার স্ত্রী পুত্রের সঙ্গে মিলিত হন।
7) ঊরুভঙ্গ :— গদা যুদ্ধে ভীম কর্তৃক দুর্যোধনের উরুভঙ্গ এই রচনার মূল উপজীব্য। সংস্কৃত নাট্য সাহিত্যে এটিই একমাত্র বিয়োগান্ত নাটক।
8) পঞ্চরাত্র :— পান্ডবদের অজ্ঞাতবাস চলাকালীন দ্রোন গুরুদক্ষিণা স্বরূপ দুর্যোধনের নিকট পাণ্ডবদের জন্য অর্ধ রাজ্য চাইলেন। দুর্যোধন এই শর্তে সম্মত হলেন যে পাণ্ডবদের পাঁচ রাত্রির মধ্যে খোঁজ দিতে হবে। অবশেষে পান্ডবদের খোঁজ পাওয়া গেল এবং দুর্যোধন তার প্রতিজ্ঞা রাখলেন। এখানে দুর্যোধনের চরিত্র মাহাত্ম্য সুন্দর করে এঁকেছেন।
9) বালচরিত :— মহাভারতের খিল বা পরিশিষ্ট হরিবংশের কৃষ্ণ উপাখ্যান অবলম্বনে এই নাটকটি পাঁচ অঙ্কে রচিত।
10) স্বপ্নবাসবদত্তা :— এটি ভাসের সর্বশ্রেষ্ঠ নাটক। উদয়ন ও বাসবদত্তার প্রণয় ও পরিণয় কাহিনী অবলম্বনে নাটকটি ছয় অঙ্কে রচিত।
11) প্রতিজ্ঞাযৌগন্ধরায়ণ :— রাজা প্রদ্যোৎ উদয়নকে বন্দী করেন এবং তাঁর কন্যার বাসবদত্তার সংগীত শিক্ষার জন্য তাকে ধরে রাখেন। যৌগন্ধরায়ণ প্রভু উদয়নকে মুক্ত করেন এবং বাসদত্তার সঙ্গে উদয়নের বিবাহ দেন। প্রনয়ের ব্যাপারে চিত্তাকর্ষক হলেও আসলে এটি একটি রাজনৈতিক নাটক। নাটকটি চার অঙ্কে রচিত।
12) অবিমারক :— অবিমারক সৌরীর রাজপুত্র। অভিশপ্ত হয়ে নীচ জাতির ন্যায় বাস করত। যুবক ছদ্মবেশে রাজকন্যা কুরঙ্গীর সঙ্গে মিলিত হয়। শেষে অলৌকিক ঘটনার মধ্যে উভয়ের বিবাহ হয়। নাটকটি ছয় অঙ্কে রচিত।
13) চারুদত্ত :— এটি চার অংকে লিখিত অসমাপ্ত নাটক। দরিদ্র ব্রাহ্মণ চারুদত্ত এবং গণিকা বসন্তসেনার প্রেমকাহিনী অবলম্বনে নাটকটি রচিত।
মূল্যায়ণ :— ভাসের নাটকগুলি রামায়ণ-মহাভারত প্রভৃতি প্রাচীন কাহিনী অবলম্বনে রচিত হলেও কল্পনার রঙে রসে, নাট্য প্রতিভার যাদু স্পর্শে নাটকগুলিকে নতুন করে তুলেছেন। নাটক গুলির সহজ সরল ভঙ্গি, বাস্তবতার স্পর্শ, ঘটনার গতিবেগ, পরিহাস কুশলতা দর্শকের মনে গভীর রেখাপাত করে। ভিন্টারনিৎসের মতে ভাসের নাটকগুলি, “… are all very dramatic full of life and action.’
ভাসের নাটকচক্র থেকে জিজ্ঞাস্য
13টি।
চারুদত্ত।
দুটি।
ধন্যবাদ
আমাদের www.sanskritruprekha.com সাইট Visit করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সংস্কৃতের আরো অনেক তথ্য পাওয়ার জন্য Home Page আসুন। Home Page পৌঁছানোর জন্য CLICK HERE👈
আমদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে CLICK HERE👈