ভবভূতির মালতীমাধব নাটক

কালিদাস পরবর্তী নাট্যকারদের মধ্যে অন্যতম সর্বশ্রষ্ঠ ভবভূতির মালতীমাধব নাটক। এই নাটক সম্পর্কে টীকা লেখা হল। মালতীমাধব (টীকা) ভবভূতির মালতীমাধব, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষার্থীদের জন্য একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এছাড়া WBSSC এর SLST পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

আমরা যাকে সাহিত্য বলি, সংস্কৃত অলংকার শাস্ত্রে তাই কাব্য নামে চিহ্নিত। রসাত্মক বাক্যে গুণ, অলংকারের মন্ডন ছাড়িয়ে কাব্যের অন্তর্গঢ় রসরূপ সহৃদয় পাঠকের মন আপ্লুত করে।সংস্কৃত সাহিত্যে ‘কাব্যং দ্বিবিধং দৃশ্যং শ্রব্যং চ’ অর্থাৎ কাব্য দুই প্রকার দৃশ্যকাব্য ও শ্রব্যকাব্য। দৃশ্যকাব্যের আধুনিক প্রতিশব্দ নাটক। মঞ্চে অভিনয় দর্শনের মাধ্যমে দৃশ্যকাব্য উপস্থাপিত হয়। এই দৃশ্যকাব্যের অপর নাম রূপক; কারণ এতে পাত্র-পাত্রীর উপর, নাটকীয় চরিত্রের রূপ আরোপ করা হয়। এই দৃশ্যকাব্য বা রূপক দশ প্রকার। ভবভূতির মালতীমাধব নাটক সংস্কৃত সাহিত্যের একটি শ্রেষ্ঠ দৃশ্যকাব্য।

ভবভূতির মালতীমাধব নাটক সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর বা টীকা লেখ। Malatimadhab in Bengali কালিদাস পরবর্তী নাট্যকারদের মধ্যে ভবভূতি অন্যতম। ভবভূতি নিজের কথা তাঁর রচনায় কিছু কিছু বলেছেন। কিন্তু নিজের কালের কোনো তথ্য আমাদের দিয়ে যাননি। যাইহোক, ভবভূতির মালতীমাধব, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষার্থীদের জন্য একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এছাড়া WBSSC এর SLST পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

মালতীমাধবভবভূতি
অঙ্ক সংখ্যা10 টি
উৎসবৃহৎকথা
শ্রেণিনাটক
নায়কমাধব
নায়িকামালতী
মুখ্যরসশৃঙ্গার

মালতীমাধব সম্পর্কে আলোচনা কর

ভূমিকা – সংস্কৃত নাট্যসাহিত্যে কবি কালিদাসের পরেই ‘শ্রীকণ্ঠ-পদ-লাঞ্ছন’ ভবভূতির স্থান। দেহরূপের অন্তরালে মানুষের মনোরাজ্যে শোক ও দুঃখের যে প্রচ্ছন্ন অবস্থা, তাকে অনুভূতির উষ্ণতায় দ্রবীভূত করে নাট্যধারায় উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে ভবভূতি অদ্বিতীয়।বৃহৎকথা অবলম্বনে দশ অঙ্কে রচিত নাটক “মালতীমাধব”।

কবি পরিচিতি :- দক্ষিণাপথে বিদর্ভ অঞ্চলে পদ্মপুর নগর ভবভূতির পুরুষানুক্রমে বাসস্থান। কৃষ্ণযজুর্বেদের তৈত্তিরীয় শাখা তাঁদের বংশানুক্রমিক চর্চার বিষয়। কাশ্যপ গোত্রের এই পণ্ডিত বংশের উপাধি নাম ছিল উদুম্বর। ভবভূতির ঊর্ধ্বতন পঞ্চম পুরুষ মহাকবি, পিতামহ ভট্টগোপাল, পিতা নীলকণ্ঠ, মাতা জাতুকর্ণী।

রচনাকাল :- ভবভূতি নিজের কথা তাঁর রচনায় কিছু কিছু বলেছেন। কিন্তু নিজের কালের কোনো তথ্য আমাদের দিয়ে যাননি। রাজশেখর সর্ব প্রথম তাঁর বালরামায়ণে ভবভূতির উল্লেখ করেছেন। ভবভূতির রচনাংশ সর্ব প্রথম উদ্ধৃত হয়েছে বামনের কাব্যালঙ্কারে। ভবভূতির উপর কালিদাসের প্রভাব নিঃসংশয়ে পড়েছে। প্রেমকাতর মাধব যখন মালতীর অনুসন্ধানে রত, কিংবা মেঘকে দৌত্যে নিযুক্ত করে মালতীর নিকট প্রেরণ করতে উদ্যত তখন তাতে কালিদাসের পুরুরবা ও যক্ষের প্রভাবই দেখা যায়। কলহণের মতে কনৌজেশ্বর যশোবর্মন, ভবভূতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এবং ভবভূতি ও বাক্পতি উভয়েই তাঁহার সভাকবি ছিলেন। কাশ্মীররাজ ললিতাদিত্য কর্তৃক (৬৯৯-৭৩৫ খৃঃ অঃ) যশোবর্মন পরাভূত হন। বাক্পতিরাজ তাঁর গৌড়বহে যশোবর্মনের প্রশংসা করেছেন এবং ভবভূতির নিকট নিজের ঋণ স্বীকার করেছেন। গৌড়বহের রচনাকাল ধরা হয় ৭৩৬ খৃস্টাব্দ। তখনও ললিতাদিত্যের নিকট যশোবর্মনের পরাজয় ঘটেনি। কাজেই খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের শেষভাগ বা অষ্টম শতাব্দীর প্রথম ভাগ ভবভূতি মালতীমাধব রচনা করেন বলে , অধিকাংশ পণ্ডিত স্বীকার করেন।

উৎস :- নাট্যকার ভবভূতি বৃহৎকথার কাহিনী অবলম্বনে মালতীমাধব নাটক রচনা করেন।

বিষয়বস্তু :- বৃহৎকথার সংস্করণ বৃহৎকথামঞ্জরী ও কথাসরিৎসাগরে শোভাবতী নগরীর ব্রাহ্মণ যশস্করের পুত্র ও ক্ষত্রিয় বিজয়সেনের ভগিনী মদিরাবতীর প্রণয়কাহিনির আদলে মালতী ও মাধবের প্রণয়কাহিনি গড়ে উঠেছে ভবভূতির মালতীমাধব প্রকরণে। বিদূষক নামে জনৈক ব্রাহ্মণের শক্তি পরীক্ষার জন্যে অন্ধকারে শ্মশানে উপস্থিতি অনুসরণে মালতীমাধবের পঞ্চম অঙ্কে শ্মশানে কাপালিকের তান্ত্রিক আচার ইত্যাদি পরিকল্পিত হয়েছিল বলে মনে হয়। ভবভূতি অবশ্য কাহিনির ব্যাপ্তি ঘটিয়েছেন বিস্তর ডিটেল ব্যবহারেও তিনি স্বাধীন।

প্রথম অঙ্কে কামন্দকী ও অবলোকিতার কথায় বোঝা যায়, পদ্মাবতী নগরীর রাজার মন্ত্রী ভূরিবসু ও বিদর্ভরাজার মন্ত্রী দেবরাত বাল্যবন্ধু এবং পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভূরিবসুর কন্যা মালতীর দেবরাতের পুত্র মাধবের সঙ্গে বিবাহ হওয়ার কথা। দুই পিতা কামন্দকী ও সৌদামিনীর সামনে এ বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলেন। মালতী এমনিতেই মাধবের প্রতি অনুরক্ত। একদিন বকুল গাছের তলায় বসে মাধব ফুলের মালা তৈরি করছেন, সঙ্গে আছেন মকরন্দ। এমন সময় মালতী সখীদের সঙ্গে হাতি চেপে সেখানে এলে নায়ক-নায়িকার প্রেমভাব প্রকট হওয়ার সুযোগ ঘটে। লবঙ্গিকা মালতীর জন্যে মাধবের হাতে তৈরি মালাটি চেয়ে নেন। এদিকে কলহংস এসে মালতীর আঁকা মাধবের ছবিটি মাধবকে দেন। মাধব তখন মালতীর একটি ছবি এঁকে নীচে শ্লোক লিখে আপন অনুরাগ প্রকট করেন।

মদনোদ্যানের এই ঘটনা মকরন্দ কামন্দকীকে যে জানিয়েছেন তা দ্বিতীয় অঙ্কের শুরুতে চেটীদের কথায় জানা যায়। মালতী মাধবের মালা পেয়ে ও তাঁর আঁকা নিজের ছবি দেখে মাধবকেই মনে মনে বরণ করেছেন। শকুন্তলা, ঊর্বশী, বাসবদত্তা প্রভৃতির কথা তুলে কামন্দকী তাঁর প্রেমে উৎসাহ সঞ্চার করেছেন।

তৃতীয় অঙ্কে বুদ্ধরক্ষিতা প্রভৃতির কথায় জানা যায়, কামন্দকী মাধবকে শিবালয় সন্নিকৃষ্ট মদনোদ্যানে যেতে বলেছেন। কামন্দকী ও লবঙ্গিকা মালতীকে নিয়ে সেখানে যান। একসঙ্গে বসে কথাপ্রসঙ্গে মালতীকে মাধবের প্রেমোন্মাদের কথা শোনানো হয়। এই সময় নেপথ্যে ঘোষণা করা হয় যে একটি বাঘ খাঁচা ভেঙে বাইরে এসেছে। সবাই সন্ত্রস্ত। এমন সময় মাধব সেখানে হাজির। কিছুক্ষণের মধ্যে জানা যায়, মকরন্দ বাঘটিকে ঘায়েল করেছেন ও নিজে আহত হয়ে মূর্ছাগ্রস্ত আছেন।

চতুর্থ অঙ্কে মূর্ছিত মকরন্দকে নিয়ে মাধব বসে আছেন, এমন সময় কামন্দকী, মালতী, লবঙ্গিকা, বুদ্ধরক্ষিতা, মদয়ন্তিকা সেখানে আসেন। ভূরিবসুর সম্মতিতে নন্দনের হাতে মালতীকে বধূ রূপে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত শোনা যায়। তবে কামন্দকী মালতী মাধবের মিলন ঘটানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখেন।

পঞ্চম অঙ্কের শুরুতে শ্মশানচত্বরে কপালকুণ্ডলাকে দেখা যায়। তাঁর গুরু অঘোরঘণ্ট তান্ত্রিক অনুষ্ঠানে রত। সেই অনুষ্ঠানের জন্যে পদ্মাবতী নগরী থেকে একটি স্ত্রীরত্ন তাঁর দরকার। সেই খোঁজে বেরিয়েছেন কপালকুণ্ডলা। এদিকে নরমাংস বিক্রি করতে ইচ্ছুক বিমর্ষ মাধব সেদিকে উপস্থিত তখন। পিশাচদের কাছে তিনি নিজের নরমাংস বিক্রি করতে যাচ্ছেন এমন সময় একটি আর্ত কণ্ঠস্বর তাঁর কানে আসে। বধ্য-চিহ্ন যুক্ত মালতীকে নিয়ে কপালকুণ্ডলা ও অঘোরঘণ্ট উপস্থিত হন। মালতীকে দেবীর সামনে বলি দেওয়া হবে—এই অবস্থায় মাধব অস্ত্র হাতে ছুটে এসে কাপালিককে বাধা দেন। ঘোর যুদ্ধ শুরু হয়, সৈন্যরাও অঘোরঘণ্টকে ঘিরে ফেলে, অঘোরঘণ্টের মৃত্যু হয়।

ষষ্ঠ অঙ্কে মাধবের হাতে গুরুর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে কপালকুণ্ডলার তৎপরতা চোখে পড়ে। মালতীর বিবাহ আয়োজন হচ্ছে, তিনি বিঘ্ননাশের জন্যে নগরদেবতার পূজা করতে এসেছেন এই অবস্থায় মাধব, মকরন্দ কলহংস তাঁকে দেখেন। মালতী ও লবঙ্গিকা মন্দিরের গর্ভগৃহে গেলে মাধব ও মকরন্দ লুকিয়ে দেখতে থাকেন। মালতী একটিবার মাধবকে দেখার ব্যাকুলতা প্রকাশ করছেন, এই সময় লবঙ্গিকার ইঙ্গিতে মাধব সামনে যান। সখী ভেবে মালতী মাধবকে আলিঙ্গন করার পর তাঁর ভুল ভাঙে। এমন সময় কামন্দকী আসেন সেখানে। মালতী ও মাধবকে গহন বনে চলে যেতে বলা হয়।

সপ্তম অঙ্কে মালতীর বেশ ধরে মকরন্দ বধূ সেজে নন্দনের সঙ্গে বিবাহের অভিনয় করেন। কামান্ধ নন্দন রাত্রিতে মকরন্দের আঘাতে ক্ষুব্ধ হয়ে চলে যান। হঠাৎ মকরন্দ নকল বধূর সাজ ফেলে দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেন।

অষ্টম অঙ্কে লজ্জিতা মালতীর সামনে মাধবের প্রেম গদগদ ভাষণ প্রেমিকের হৃদয়াবেগ যথাযথভাবে তুলে ধরেছে। এক সময় মালতী মাধবের চিন্তায় একলা বসে আছেন, এই অবস্থায় কপালকুণ্ডলা এসে মালতীকে ধরে নিয়ে যেতে থাকেন। মালতী হারিয়ে গেছেন, এই মর্মে চারিদিকে তাঁর সন্ধান চলে। ততদিনে রাজা খুশি হয়ে মালতী ও মদয়ন্তিকার সঙ্গে যথাক্রমে মাধব ও মকরন্দের বিবাহে সম্মতি দিয়েছেন।

নবম অঙ্কে শ্রীপর্বত থেকে কামন্দকীর শিষ্যা সৌদামিনী এসে জানতে পারেন। মালতী হারিয়ে যাওয়ায় মাধব দুঃখে ঘর ছেড়ে গেছেন। হাহুতাশ বিলাপ করে নদীতে ডুবে মরতে যাচ্ছেন মাধব, এমন সময় সৌদামিনী এসে তাঁকে মালতীর বকুলমালা দেখিয়ে নিবৃত্ত করেন ও কপালকুণ্ডলার হাত থেকে মালতীর উদ্ধারের বৃত্তান্ত শোনান। আকর্ষিণী সিদ্ধির শক্তিতে সৌদামিনী মাধবকে আকাশপথে উড়িয়ে নিয়ে যান।

দশম অঙ্কে ভূরিবসু কন্যা মালতীর দুঃখে অগ্নিপ্রবেশ করতে চলেছেন এমন অবস্থায় মালতী দূর থেকে পিতাকে নিষেধ করেন। পরে মূর্ছিতা মালতীকে নিয়ে মাধব সেখানে উপস্থিত হন। মালতী-মাধব ও মকরন্দ-মদয়ন্তিকার বিবাহ নিশ্চিত হয়। মাধবের ভরতবাক্য উচ্চারণ দিয়ে মালতীমাধব শেষ হয়।

নাট্যবৈশিষ্ট্য :- এই নাটকের বৈশিষ্ট্যগুলি হল –

  • ১ সংস্কৃত নাট্যশাস্ত্র অনুসারে মালতীমাধব একটি প্রকরণ। এতে সাধারণ মানুষের জীবন থেকে বা নাট্যকারের কল্পনা থেকে বিষয়বস্তু উৎসারিত হয়েছে। এখানে শৃঙ্গার রসের প্রাধান্য, দশ অঙ্ক আছে। নায়িকা এখানে উচ্চবংশজাতা, যেমন মালতী। বাস্তবতা এবং সামাজিক জীবনের পটভূমিতে রচিত হওয়ায় ও প্রেমের উপাদান থাকায় এখানে নাট্যকারের কল্পনাশক্তি ও কাব্যক্ষমতা প্রকাশের যথেষ্ট সুযোগ আছে।
  • ২) এই নাটক থেকে নাট্যশিল্প সম্পর্কে ভবভূতির নিজস্ব কয়েকটি মতের পরিচয় পাই। যেমন রসাদির প্রচুর নিগূঢ় প্রয়োগ, মনোরঞ্জক অভিনয় ক্রিয়া, বীরত্বযুক্ত প্রণয়, বৈদগ্ধ্যপূর্ণ সংলাপ।
  • ৩) এই নাটকে ভবভূতি বিচিত্র রস পরিবেশন করেছেন। এতে শৃঙ্গার রসের প্রাধান্য থাকলেও করুণ, অদ্ভুত, রৌদ্র, ভয়ংকর ও বীভৎস রসের সমাবেশ ঘটানোয় নাট্যকারের দক্ষতা প্রকাশ পেয়েছে। নাটকটির এক স্থানে শ্মশান ও তান্ত্রিক আচার অনুশীলনের চিত্র বর্ণনায় বীভৎস রসের অবতারণা করেছেন। নাট্যকার।
  • ৪) নাট্যকার ঘটনা ও চরিত্রের বহুমুখীতার সঙ্গে রসবৈচিত্র্যেরও সৃষ্টি করেছেন।
  • ৫) নাট্যকার প্রেমের নানা অবস্থাকে ফুটিয়ে তুলেছেন এই নাটকে।

সমালোচনা :- মালতীমাধবের মূল রস শৃঙ্গার। দুই জোড়া প্রেমিক-প্রেমিকার প্রেমকথা নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যে দিয়ে পরিণতিতে পৌঁছেছে এখানে। শ্মশান, নরমাংস বিক্রি, কাপালিক, কপালকুণ্ডলা, দেবীর সামনে নরবলি ইত্যাদির উপস্থাপনায় ভিন্ন এক রসের স্বাদ পাই আমরা। তবে তাও মূল রসের প্রয়োজন সিদ্ধির জন্যে পরিকল্পিত। ঘটনাগুলির খুঁটিনাটি প্রচুর। বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্নে ইচ্ছাপূরক বৃত্তান্তই যে একটার পর একটা আসছে তা স্পষ্ট। কাহিনি ইতিহাস বা পুরাণ-প্রসিদ্ধ নয়। নায়ক-নায়িকা কেউ রাজপরিবারভুক্ত নয়। অমাত্যপুত্র, অমাত্যকন্যা ও তাঁদের বন্ধুবান্ধব নিয়ে চরিত্রলিপি সাজানো। ঘটনার গতি বেশ সাবলীল। নাটকীয়তাও আছে। বধু সেজে নন্দনকে ঠকানোর মধ্যে একটা মজার ব্যাপার পরখ করা যায়। ভাষারীতি ভবভূতির নিজস্ব ভঙ্গির অনুরূপ। এই গ্রন্থের প্রস্তাবনাতেই নাট্যকার সগর্বে ঘোষণা করেছিলেন—

উৎপৎস্যতে মম তু কোপি সমানধর্মা
কালোহ্যয়ং নিরবধির্বিপুলা চ পৃথ্বী ॥

মূল্যায়ণ :- ভবভূতির সাহিত্য বৈদগ্ধ্য, পাণ্ডিত্য ও কবিত্বের ত্রিবেনিসংগম। সহজ সরল প্রকাশভঙ্গি সেখানে প্রত্যাশা করা যায় না। সংলাপের বুনোটে বিভিন্ন শাস্ত্রীয় প্রসঙ্গ যত্রতত্র বিরাজমান। ভাস-কালিদাসের যুগ পেরিয়ে তখন পাঠক-দর্শকের রুচির বদল ঘটেছে, রচনারীতিতে এসেছে কৃত্রিম দীর্ঘ ও জটিল বাক্যবিন্যাস। গদ্যসাহিত্যে বাসবদত্তা, দণ্ডীর দশকুমারচরিত ও বাণভট্টের হর্ষচরিত কাদম্বরী ততদিনে প্রসিদ্ধ নাম। তাদের বাগৈশ্বর্যমণ্ডিত অলংকার-বহুল রচনারীতি থেকে পিছু হঠবার পথ পরবর্তী কবিযশঃপ্রার্থীর পক্ষে সম্ভবত আর খোলা ছিল না।

কালিদাসের পরেই নাট্যকার হিসাবে ভবভূতির নাম আগে মনে আসে। প্রকৃতির রুদ্র ও কমনীয় রূপের বর্ণনায় ভবভূতি সমান দক্ষতা দেখিয়েছেন। মানুষের মনের গহনে প্রবেশ করে কোমল বৃত্তিগলির সূক্ষ্মতিসূক্ষ্ম রূপ ও রেখার বর্ণনা এমনটি আর কোথাও দেখা যায় না। ভবভূতির সর্বাপেক্ষা বড় ত্রুটি এই যে পাঠকের মনকে তিনি কখনও হালকা রসের বৈচিত্র্যের আস্বাদ দেন নাই। মাঝে মাঝে সমাসবদ্ধ সুদীর্ঘ বাক্যের অবতারণা করেছেন, যার ফলে মন ও চক্ষু হঠাৎ বাধা পায়। কালিদাসের উপমা বস্তুগত—অর্থাৎ একটি বস্তুর সঙ্গে আর একটি বস্তুর তুলনা। ভবভূতির উপমা বস্তু ও ভাবনিষ্ঠ—অর্থাৎ একটি বস্তুর সঙ্গে আর একটি ভাবের তুলনা। এই দিক দিয়ে Shelly-র রচনার সঙ্গে ভবভূতির রচনার অনেকটা সাদৃশ্য আছে। বিশেষ করে উত্তররামচরিতে ঘটনা-বৈচিত্র্যের অভাব বড় বেশী অনুভূত হয়। প্রথম অঙ্কে বর্ণিত ঘটনা হতে দ্বিতীয় অঙ্কে বর্ণিত ঘটনার মধ্যে স্থান ও কালের ব্যবধান খুব বেশী হওয়ায় অসম্ভবতার বোধ জন্মায়। করুণরস-চিত্রণে ভবভূতি নিঃসংশয়ে কালিদাসকে অতিক্রম করেছেন। ভবভূতি অনেক বলতে পারেন, কালিদাস না বলেই বলার কাজ সেরে নেন।

অনুরূপ পাঠ

ভবভূতির মালতীমাধব নাটক এর মত একইধরণের বিষয় জানতে নিম্নের LINK এ CLICK করুন ।

মালতীমাধব সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য

ভবভূতির মালতীমাধব নাটক থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জিজ্ঞাস্য।

1) মালতীমাধব কার লেখা।

ভবভূতির ।

2) মহাবীরচরিত নাটকে কয়টি অংক আছে?

দশটি।

3) মালতীমাধব নাটকের নায়ক কে?

বিদর্ভমন্ত্রী দেবরাতের পুত্র মাধব।

ধন্যবাদ

আমাদের www.sanskritruprekha.com সাইট Visit করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ🙏। সংস্কৃতের আরো অনেক তথ্য পাওয়ার জন্য Home Page আসুন। Home Page পৌঁছানোর জন্য CLICK HERE👈

আমদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে CLICK HERE 👈

Leave a Comment