হর্ষচরিত বাণভট্টের ঐতিহাসিক গদ্যকাব্য। এখানে হর্ষচরিত টীকা লেখ বা হর্ষচরিত সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ বিষয়ে আলোচনা করব। হর্ষচরিত সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর বা টীকা লেখ। Harshacharit in bengali যাইহোক, বাণভট্টের হর্ষচরিত উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষার্থীদের জন্য একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এছাড়া WBSSC এর SLST পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সংস্কৃত সাহিত্যে অন্যতম জনপ্রিয় ও সার্থক একটি গদ্যকাব্য হল ‘দশকুমারচরিতম্’। সংস্কৃত ভাষায় অথবা বিশেষভাবে বলতে গেলে বৈদিক সংস্কৃত ভাষায় প্রাচীনতম সাহিত্য ঋগ্বেদ পদ্যে লেখা হলেও যজুর্বেদে, বেদাঙ্গ সাহিত্যে, মহাভারতের কিছু কিছু অংশে গদ্যের ব্যবহার দেখা যায়। পাণিনির ‘অষ্টাধ্যায়ী’ গ্রন্থের ওপর পতঞ্জলি রচিত ‘মহাভাষ্য’ সাবলীল সংস্কৃত গদ্যের উৎকৃষ্ট নিদর্শন। তবে এগুলি গদ্য রচনার নিদর্শন হলেও স্বতন্ত্র সংস্কৃত গদ্যকাব্য নয়। কিন্তু পতঞ্জলি ‘বাসবদত্তা’, ‘সুমনোত্তরা’ ও ‘ভৈমরথী’ নামে তিনটি গদ্যকাব্যের যে উল্লেখ করেছেন, সংস্কৃত গদ্যকাব্যের ইতিহাসে সেই উল্লেখটি গুরুত্বপূর্ণ। এদের কোনোটিই পাওয়া না গেলেও পতঞ্জলির আগেই যে গদ্যকাব্যের সৃষ্টি হয়েছিল, সেই তথ্যটিই সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়।
বাণভট্টের হর্ষচরিত টীকা
বাণভট্টের হর্ষচরিতের কয়েকটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিম্নে টেবিল আকারে দেওয়া হল।
গদ্যকাব্য | হর্ষচরিত |
রচয়িতা | বাণভট্ট |
শ্রেণি | আখ্যায়িকা |
গ্রন্থবিভাগ | আটটি উচ্ছ্বাস |
নায়ক | হর্ষবর্ধন |
ভূমিকা
বাণভট্ট সংস্কৃত গদ্যকাব্যের দরবারে রাজাধিরাজ, সংস্কৃত সাহিত্য গগনের অন্যতম উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক, অসামান্য প্রতিভাধর লেখক। সংস্কৃত গদ্যকাব্য- মালিকার মধ্যমনি তিনি। কালিদাস যেমন সংস্কৃত কাব্যের জগতে উচ্চ শিখরে অধিষ্ঠিত, বাণভট্টও তেমনই গদ্যকাব্যের (Prose Romance) ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মহিমায় মহিমান্বিত। তাঁর অলোকসামান্য সৃষ্টিনৈপুণ্যে সংস্কৃত গদ্যকাব্য মহনীয় গুণগরিমায় ও চমকপ্রদ উৎকর্ষে মহিমান্বিত। তাঁর রচনা হল দুটি “হর্ষচরিত’ ও ”কাদম্বরী“।
কবি পরিচিতি
কাব্যদুটি থেকে জানা যায় বাৎস্যগোত্রীয় চিত্রভানু তাঁর পিতা এবং মাতা রাজদেবী। বাণভট্ট হর্ষবর্ধনের সভাকবি ছিলেন। তাঁর আবির্ভাবকাল খ্রীষ্টিয় সপ্তম শতকের প্রথমার্ধ।
বাল্যকালে বাণভট্ট মাতৃহীন হলে পিতা তাঁকে মায়ের স্নেহ দিয়ে পালন করেন। চোদ্দো বছর বয়সে তিনি পিতাকে হারান। কিছুদিন বাড়িতে কাটাবার পর সমবয়সি বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে প্রথম যৌবনের চপলতায় উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাত্রায় মেতে ওঠেন। তাঁর সঙ্গীদের দীর্ঘ তালিকা বাণ দিয়েছেন। কবি, নৃত্যশিল্পী, গায়ক, বাদক, জুয়াড়ি, ঐন্দ্রজালিক, অভিনেতা, সাধুসন্ত, চিকিৎসক, বজ্জাত—সবরকম লোকই তার মধ্যে ছিল। পূর্বপুরুষদের ধন ও বিদ্যাচর্চার ধারা ছেড়ে বাণভট্ট দেশদেশান্তরে ঘুরে বেড়ান। উচ্ছৃঙ্খল স্বেচ্ছাচারী হিসেবে নিন্দাবাদ তাঁর ভাগ্যে জোটে।
গদ্যকার | বাণভট্ট |
পিতা | চিত্রভানু |
পিতামহ | অর্থপতি |
প্রপিতামহ | পশুপতি |
মাতা | রাজদেবী |
সময়কাল | খ্রীষ্টিয় সপ্তম শতকের প্রথমার্ধ |
গ্রন্থরচনা | হর্ষচরিত, কাদম্বরী ও চন্ডীশতক |
নামকরণ
নায়ক হর্ষবর্ধনের কাহিনী উপজীব্য বলে এই নামকরণ।
বিষয়বস্তু
প্রথম আড়াই উচ্ছ্বাসে বাণভট্ট আত্মপরিচয় লিপিবদ্ধ করেছেন। তারপর শুরু হয়েছে হর্ষবর্ধনের কথা। স্থানীশ্বরের রাজা পুষ্পভূতি। তাঁহার বংশে মহা- প্রতাপশালী রাজা প্রভাকরবর্ধন। তাঁহার দুই পুত্র রাজ্যবর্ধন ও হর্ষবর্ধন, এক কন্যা রাজ্যশ্রী। মৌখরীরাজ গ্রহবর্মার সঙ্গে রাজ্যশ্রীর বিবাহ হয়। প্রভাকরবর্ধনের মৃত্যুর পর রাজ্যবর্ধন সিংহাসন গ্রহণ করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু হর্ষকে অভিষিক্ত করার পূর্বেই মালবরাজ কর্তৃক গ্রহবর্মার নিধন এবং রাজাশ্রীর অপহরণের সংবাদ আসে। রাজ্যবর্ধন মালবরাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন, কিন্তু গৌড়রাজের বিশ্বাসঘাতকতায় নিজেই নিহত হন। প্রতিশোধ গ্রহণ করিবার জন্য হর্ষবর্ধনও যুদ্ধযাত্রা করলেন কিন্তু পথে শুনলেন যে রাজ্যশ্রী মালবরাজের কারাগার হতে পলিয়ে বিন্ধ্যারণ্যে চলে গেছেন। যখন আত্মহত্যা করতে যাচ্ছিলেন তখন এক বৌদ্ধ ভিক্ষু তাঁহার উদ্ধারসাধন করেন। হর্ষ ও রাজ্যশ্রীর মিলন দেখিয়ে এইখানেই আখ্যায়িকা শেষ হয়েছে এবং মনে হয় হঠাৎ শেষ হয়েছে।
সমালোচনা
ঐতিহাসিক কাহিনীকে অবলম্বন করে কাব্য রচনার প্রচেষ্টা হর্ষচরিতেই প্রথম। এই দিক দিয়ে গ্রন্থখানির গুরুত্ব আছে। বাণের সময়ের দেশ, জাতি ও সমাজের চিত্রও এই গ্রন্থে পাওয়া যায়। তথাপি একে ঐতিহাসিক কাব্য মনে করলে ভুল করা হবে। বাণেরও ইতিহাস রচনা করার উদ্দেশ্য ছিল না।
সংস্কৃত গদ্যসাহিত্যের জগতে বাণভট্ট কবি সার্বভৌম। শ্লেষে, শব্দগুম্ফনে, রসে, অলংকারে ও সদর্থ বিষয়ক কথাবর্ণনে বাণ যথার্থই “পঞ্চবাণস্তু বাণঃ।” শ্ৰুতি, স্মৃতি, দর্শন, রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ, ব্যাকরণ প্রভৃতি শাস্ত্রে কবির পাণ্ডিত্যের পরিচয় পাই প্রতি পদে পদে। তিনি নিজেই হর্ষচরিতে বলেছেন। “সম্যক পঠিতঃ সাঙ্গো বেদঃ শ্রুতানি যথাশক্তি শাস্ত্রাণি।”
মূল্যায়ন
ভারতীয় প্রাচীন সাহিত্যিকদের মতে কাদম্বরী কাব্যের রস পান করতে করতে আহারের কথা ভুলে যান – “কাদম্বরীরসজ্ঞানম্ আহারোহপি ন রোচতে”। কল্পনার রঙে প্রতিটি বর্ণনাকে উপভোগ্য ও মধুর করে তুলেছেন। বানভট্ট একজন সত্যিকারের গদ্যশিল্পী – “গদ্যং কবীনাং নিকষং বদন্তি।” এমন কোন বিষয় নেই যা বাণভট্টের কাব্যদ্বয়ে নেই। তাই বাণের সম্বন্ধে এরূপ প্রবাদ প্রচলিত আছে- “বানোচ্ছিষ্টং জগৎ সর্বম্”। বানভট্ট ভাষাজগৎকে উচ্ছিষ্ট (এঁটো) করে দিয়েছেন। কী বিষয় বর্ণনে, কী চরিত্র চিত্রনে, এমনকি প্রেমিক-প্রেমিকার মিলন-বিরহের বাস্তব চিত্র উপস্থাপনে সর্বত্রই বানভট্টের সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ শক্তি ও অনন্য সুলভ চিত্রগ্রাহিতার অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে। তবে বাণের কাব্যকাননে সাধারণের প্রবেশ দুষ্কর।
অনুরূপ পাঠ
হর্ষচরিত এর মত একইধরণের বিষয় জানতে নিম্নের LINK এ CLICK করুন ।
- প্রতিমা নাটক 👈
- অভিষেক 👈
- প্রতিজ্ঞাযৌগন্ধরায়ণ 👈
- স্বপ্নবাসবদত্তা 👈
- দূতবাক্য 👈
- মধ্যমব্যায়োগ 👈
- ঊরুভঙ্গ 👈
- অবিমারক 👈
- পঞ্চরাত্র 👈
- গীতগোবিন্দম্ 👈
- মেঘদূত 👈
- বিক্রমোর্বশীয়ম্ 👈
- মালবিকাগ্নিমিত্রম্ 👈
- অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ 👈
- মৃচ্ছকটিক 👈
- মুদ্রারাক্ষস 👈
- পঞ্চতন্ত্র 👈
- হিতোপদেশ 👈
- কাদম্বরী 👈
হর্ষচরিত থেকে জিজ্ঞাস্য
1) “হর্ষচরিত” কোন্ শ্রেণীর গদ্যকাব্য?
2) “হর্ষচরিত” গদ্যকাব্যের নায়কের নাম কী?
3) বাণভট্টের অপর একটি গদ্যকাব্যের নাম কী?
4) হর্ষবর্ধন কোথাকার রাজা ছিলেন?
ধন্যবাদ
আমাদের www.sanskritruprekha.com সাইট Visit করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সংস্কৃতের আরো অনেক তথ্য পাওয়ার জন্য Home Page আসুন। Home Page পৌঁছানোর জন্য CLICK HERE👈
আমদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে CLICK HERE 👈