মহাভারতের প্রভাব

এই অধ্যায়ের আলোচ্য বিষয় মহাভারতের প্রভাব । মহাভারত ভারতীয়দের অত্যন্ত জনপ্রিয় কাব্য। সমাজ ও সাহিত্যের উপর মহাভারতের প্রভাব আলোচনা কর – এই প্রশ্নের উত্তর আলোচনা করব। একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এছাড়াও স্নাতক ও স্নাতকোত্তর , WBSSC(SLST) পরীক্ষার্থীদের মহাভারতের প্রভাব কন্ঠস্থ করতে হবে।

মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের লোকোত্তর তপঃপ্রভাবে ভারতের চিরন্তন আত্মার মহাজাগরণ ঘটেছে মহাভারতে। এখানে ভরত বংশীয়দের মহাযুদ্ধের কাহিনি আঠারোটি পর্বে এবং এক লক্ষ শ্লোকে বর্ণিত হয়েছে। মহাভারত মহত্ত্বে ও গুরুত্বে একখানি শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য – “মহত্ত্বাদ ভারবত্ত্বাচ্চ মহাভারতমুচ্যতে।” এই বিশাল গ্রন্থে স্থান পেয়েছে অসংখ্য কাহিনি, অগণিত উপাখ্যান, অজস্র উপদেশ ও অনুশাসন। ভারতে প্রচলিত সমস্ত জ্ঞান-বিজ্ঞান, ইতিহাস, পুরাণ, তত্ত্বকথা, নীতি, উপদেশ ও অনুশাসন, লোকবিদ্যা, প্রবচন, জীবনের নানা সমস্যা ও তার সমাধান, ধর্ম, কাম, মোক্ষ, রাজনীতি, ধর্মনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি প্রভৃতি কী নেই মহাভারতে। সেইজন্য লোকে বলে “যা নাই মহাভারতে, তা নাই ভারতে”।

মহাভারতকিছু তথ্য
মহাভারতের রচয়িতামহর্ষি কৃয়দ্বৈপায়ন বেদব্যাস
মহাভারতের অপর নামপঞ্চমবেদ , শতসাহস্রী সংহিতা
পর্ব সংখ্যা18 টি
শ্লোক সংখ্যা100000 টি

সমাজ ও সাহিত্যে মহাভারতের প্রভাব

ভূমিকা :- মহাভারত যুগ যুগ ধরে সমাজ জনমণে ও কবিচিত্তে যে অসাধারণ প্রভাব বিস্তার করেছে, তার তুলনা নেই, তা বলে শেষ করা যায় না। মহাভারত ভারতবর্ষের দূরস্মৃত ইতিহাসের রত্নভান্ডার।

সামাজিক প্রভাব :- ভারতীয় সমাজ জীবনে ও জনচিত্তে মহাভারতের প্রভাব হাজার হাজার বছর ধরে অব্যাহত রয়েছে। সাধুতা, সদাচারে মূর্তবিগ্রহ ধর্মাত্মা যুধিষ্ঠিরের উদার মহত্ব, অপ্রতিরোধ্য যোদ্ধা অথচ সৌম্যদর্শন কর্মবীর অর্জুনের পৌরুষ গৌরব, ভীমের অজেয় বাহুবল ও দারুন ক্ষাত্রতেজের বিস্ফোরণ সত্ত্বেও জ্যেষ্ঠের প্রতি কনিষ্ঠের আনুগত্য, দ্রৌপদীর তেজস্বিতা, গান্ধারীর ধর্মশীলতা, বীর কর্ণের পৌরুষ ও দানশীলতা এবং সর্বজনপূজ্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কর্মমন্ত্রে অখন্ড ভারত রচনার মহিমাদর্শ – এ সবকিছুই আমাদের কর্ম ও ভাবজীবনে চিরন্তন প্রভাব বিস্তার করেছে। ভারতীয় জীবনধারার সঙ্গে মহাভারতের চরিত্রগুলি ওতপ্রোতভাবে মিশে গেছে। ‘ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা‘, ‘দাতাকর্ণ’, ‘শকুনি মামা’ প্রভৃতি অতিপ্রচলিত লোকপ্রবাদগুলিই তার জ্বলন্ত প্রমাণ।

মহাভারত ভারতীয় জনগণের কাছে একটি মহৎ কাব্যমাত্র নয়, এটি দর্শন ও ধর্মগ্রন্থের স্থানও অধিকার করেছে। মহাভারত পাঠ করলে বা শুনলে পাপ ও অমঙ্গল দূর হয় – এ বিশ্বাস ভারতীয় হিন্দুদের বদ্ধমূল। তাই ধনীর প্রাসাদ থেকে দরিদ্রের পর্ণ কুটির পর্যন্ত এখনও মহাভারত পাঠ শোনা যায়।

সাহিত্যে প্রভাব :- মহাভারত ভারতীয় সাহিত্যে অত্যন্ত আদরের বস্তু। তাই পরবর্তী সাহিত্যে বিশেষ করে সংস্কৃত সাহিত্যে মহাভারতের প্রভাব অপরিসীম। যুগ যুগ ধরে কবি, লেখকদের কতই না বিচিত্র রচনার বস্তু উপহার দিয়ে চলেছে এই মহাকাব্য।

মহাকবি ভাসস তাঁর কয়েকটি নাটকের কাহিনী যেমন ‘ঊরুভঙ্গ’, ‘কর্ণভার’, ‘মধ্যমব্যায়োগ’, ‘দূতবাক্য’, ‘দূৎঘটোৎকচ’, ‘পঞ্চরাত্র’ প্রভৃতি মহাভারত থেকে সংগ্রহ করেছেন। কবিশ্রেষ্ঠ কালিদাসের ‘বিক্রমোর্বশীম্’ ও ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’ নাটকের উপাদান মহাভারত থেকে নেওয়া হয়েছে। ভারবির ‘কিরাতার্জুনীয়’, শ্রীহর্ষের ‘নৈষধচরিত’, মাঘের ‘শিশুপপালবধ’, নীতিবর্মার ‘কীচকবধ’ প্রভৃতি মহাকাব্যগুলির বিষয়বস্তু মহাভারত থেকে নেওয়া। তাছাড়াও ভট্টনারায়ণের ‘বেণীসংহার’ কুলশেখরের ‘তপস্বীসংবরণ’ ও ‘সুভদ্রাধনঞ্জয়’, বৎসরাজের ‘সমুদ্রমন্থন’ প্রভৃতি নাটকগুলি তথ্য মহাভারতের আখ্যানমালা থেকে নেওয়া হয়েছে। ত্রিবিক্রমের ‘নলচম্পূ’ এবং অনন্তভট্টের ‘ভারতচম্পূ’র কাহিনীও মহাভারতের উপর প্রতিষ্ঠিত।

নানাদেশে অনুবাদ সাহিত্য মহাভারতের প্রভাব স্পষ্ট। বাংলার কাশীরামদাসের মহাভারত আক্ষরিক অনুবাদ নয়।

আধুনিক বাংলাসাহিত্যও মহাভারতের কাছে ঋণী। কবি মধুসূদন দত্তের ‘বীরাঙ্গনা’, ‘শর্মিষ্ঠা’ হেমচন্দ্রের ‘বৃত্রসংহার’, গিরিশচন্দ্র ঘোষের ‘পান্ডবগৌরব’, ‘পান্ডবের অজ্ঞাতবাস’ এবং রবীন্দ্রনাথের ‘চিত্রাঙ্গদা’, ‘গান্ধারী আবেদন’, ‘কর্ণকুন্তী সংবাদ’ প্রভৃতি বাংলা ভাষার কাব্যবিভায় মহাভারতের দ্যুতি কতই না বিচ্ছুরিত হয়েছে।

উপসংহার :- ভারতীয় সমাজজীবন ও সাহিত্য মহাভারতের নিকট হতে যুগে যুগে জল ও বায়ুর মতোই প্রাণ সত্তার অপরিহার্য শক্তি আহরণ করেছে। ভারতবর্ষকে জানতে হলে, ভারতবাসীর মানসিকতা বুঝতে হলে, ভারতবর্ষের সংস্কৃতির নিজস্ব মর্ম উপলব্ধি করতে হলে অবশ্যই মহাভারত জানতে হবে। এই মহাকাব্যের মধ্যে চিরকালের প্রাণের স্পন্দন অনুভূত হয়।

মহাভারত থেকে জিজ্ঞাস্য

1) মহাভারত কয়টি পর্বে রচিত।

18 টি।

2) মহাভারতের অপর কী নামে পরিচিত

পঞ্চমবেদ।

3) মহাভারতে কতগুলি শ্লোক আছে

একলক্ষ।

ধন্যবাদ

আমাদের www.sanskritruprekha.com সাইট Visit করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সংস্কৃতের আরো অনেক তথ্য পাওয়ার জন্য Home Page আসুন। Home Page পৌঁছানোর জন্য CLICK HERE👈

আমদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে CLICK HERE👈 

Leave a Comment