দশকমারচরিত টীকা

কবি দন্ডী বিখ্যাত গদ্যকাব্য হল দশকমারচরিত। এখানে দশকমারচরিত টীকা লেখ, বিষয়ে আলোচনা করবো। দশকমারচরিত সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর বা টীকা লেখ। Dashakumarcharit in bengali যাইহোক, কবি দন্ডীর দশকমারচরিত উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষার্থীদের জন্য একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এছাড়া WBSSC এর SLST পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

সংস্কৃত সাহিত্যে অন্যতম জনপ্রিয় ও সার্থক একটি গদ্যকাব্য হল ‘দশকুমারচরিতম্’। সংস্কৃত ভাষায় অথবা বিশেষভাবে বলতে গেলে বৈদিক সংস্কৃত ভাষায় প্রাচীনতম সাহিত্য ঋগ্বেদ পদ্যে লেখা হলেও যজুর্বেদে, বেদাঙ্গ সাহিত্যে, মহাভারতের কিছু কিছু অংশে গদ্যের ব্যবহার দেখা যায়। পাণিনির ‘অষ্টাধ্যায়ী’ গ্রন্থের ওপর পতঞ্জলি রচিত ‘মহাভাষ্য’ সাবলীল সংস্কৃত গদ্যের উৎকৃষ্ট নিদর্শন। তবে এগুলি গদ্য রচনার নিদর্শন হলেও স্বতন্ত্র সংস্কৃত গদ্যকাব্য নয়। কিন্তু পতঞ্জলি ‘বাসবদত্তা’, ‘সুমনোত্তরা’ ও ‘ভৈমরথী’ নামে তিনটি গদ্যকাব্যের যে উল্লেখ করেছেন, সংস্কৃত গদ্যকাব্যের ইতিহাসে সেই উল্লেখটি গুরুত্বপূর্ণ। এদের কোনোটিই পাওয়া না গেলেও পতঞ্জলির আগেই যে গদ্যকাব্যের সৃষ্টি হয়েছিল, সেই তথ্যটিই সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়।

দশকমারচরিত এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়

গ্রন্থদশকমারচরিত
শ্রেণিআখ্যায়িকা শ্রেণির গদ্যকাব্য
রচয়িতাকবি দন্ডী
গ্রন্থবিভাগপূর্বপীঠিকা ও উত্তর পীঠিকা
নায়করাজবাহন
নায়িকাঅবন্তীসুন্দরী

ভূমিকা

সংস্কৃত সাহিত্যের একটি সার্থক আখ্যায়িকা শ্রেণীর গদ্যকাব্য “দশকমারচরিত”। গ্রন্থটির রচয়িতা দন্ডী খ্রীষ্টীয় সপ্তম শতকে বর্তমান ছিলেন বলে অনুমান করা হয়। রাজপ্রাসাদের সংকীর্ণ গন্ডী অভিক্রম করে সমাজের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তিনি সহৃদয় পাঠকদের উক্ত কাব্যটি উপহার দিয়েছেন।

গ্রন্থবিভাগ

বর্তমানে এই কাব্যটি যেভাবে পাওয় যায় তা মূলতঃ দুটি ভাগে বিভক্ত পূর্বপীঠিকাও উত্তর পীঠিকা। পূর্বপীঠিকায় পাঁচটি উচ্ছ্বাস আর উত্তর পীঠিকায় আটটি উচ্ছ্বাস আছে। গ্রন্থটির প্রারম্ভ ও শেষ অসংলগ্ন, হওয়ায় মনে হয় যে, দন্ডী গ্রন্থটির রচনা শেষ করে যেতে পারেননি। অথবা তাঁর রচনা অনেকটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীকালে অন্য কোন লেখক নষ্ট অংশ রচনা করে এর সাথে জুড়ে দিয়েছিলেন।

কাহিনী

দশকুমারচরিত কাব্যটিতে মূলত, দশজন কুমারের অভিজ্ঞতার কহিনী বর্ণিত হয়েছে। মগধের রাজা রাজহংশ মালবের রাজার কাছে হেরে গিয়ে রানির সঙ্গে বিন্ধ্যপর্বতে আশ্রয়গ্রহণ করেন। সেখানে তাঁর রাজবাহন নামে একটিপুত্র জন্মগ্রহণ করে। রাজবহনের সাথে আরও নয়জন মন্ত্রীপুত্র একসাথে লেখাপড়া করে ভাগ্যান্বেষণে দেশ ভ্রমণে বের হল। কিন্তু পথে এক ব্রাহ্মণবেশী কিরাতের সঙ্গে দেখা হওযায় তাকে সাহায্যের জন্য রাজবাহণকে পাতালে নিয়ে চলে গেল। তাঁর খোঁজে অন্যান্য কুমাররা বের হয়ে ঘটনাঞমে একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এই ভ্রমণ প্রসঙ্গে তাদের জীবনে যে যে ঘটনা ঘটে তার বর্ণনাই হল ‘দশকুমারচরিত’ কাব্যটির বিষয়বস্তু।

কাব্যমূল্য

দন্ডী চির প্রচলিত পৌরাণিক কাহিনী বা গতানুগতিক উপাখ্যান নিয়ে তাঁর কাহিনীগুলো রচনা করেননি। তাঁর কাব্যটি সংস্কৃত সাহিত্যের গতানুগতিকতা মুক্ত এবং জীবনরসে উজ্জ্বল। কবি এই কাব্যে তৎকালীন সমাজের বাস্তব চিত্রগুলি অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন।

দন্ডীর রচনাশৈলী

গদ্য রচয়িতা হিসেবে দন্ডীর রচনায় সামঞ্জস্যবোধ দেখা যায়। ভাষা সরল ও মাধুর্যমন্ডিত রচনার স্থানে স্থানে সমাসবদ্ধ পদ, শ্লেষের প্রয়োগ থাকলেও রচনা তাতে ভারাক্রান্ত হয়নি। প্রতিটি চরিত্র তাঁর লেখনীর স্পর্শে প্রাণবন্ত।আখ্যানটি আকারে, ঘটনা বৈচিত্রে ও বিভিন্ন চরিত্রে উপস্থাপনায় শ্রেষ্ঠ। সর্বোপরি গদ্যকাব্য রচনায় দন্ডীর প্রধান বৈশিষ্ট্য যেটি, সেই পদলালিত্যের খ্যাতি ভারতীয় সুধী সমাজে প্রবাদে পরিনত হয়েছে – “দন্ডিনঃ পদলালিত্যম্”।

প্রবাদ আছে যে দণ্ডী এবং কালিদাস-এই দুইজনের মধ্যে কবি হিসেবে কে বড়ো এই বিবাদ আরম্ভ হলে স্বয়ং সরস্বতী সেখানে আবির্ভূত হন এবং সিদ্ধান্ত জানান-‘কবিদণ্ডী’। “কবিদণ্ডী কবিদণ্ডী ন সংশয়ঃ।” এতে কালিদাস অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন এবং জানতে চান তাহলে তিনি কে? সরস্বতী তখন তাঁকে “ত্বমেবাহং ন সংশয়ঃ’ অর্থাৎ ‘তুমি স্বয়ং বাগদেবী’-এই বলে কালিদাসকে সান্ত্বনা দেন।

‘দশকুমারচরিতে’র টীকা

‘দশকুমারচরিত-এর উপর অনেক টীকা লেখা হয়েছে। সেগুলির মধ্যে কবীন্দ্রাচার্য সরস্বতীর ‘পদচন্দ্রিকা’, শিবরামের ‘ভূষণা’ টীকা, ভানুচন্দ্রের ‘লঘুদীপিকা’ প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া ‘পদদীপিকা’ টীকা, হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশের ‘কুমার-সন্তোষিণী’ টীকা, জীবানন্দ বিদ্যাসাগর, গুরুনাথ বিদ্যানিধি, হরিপদ চট্টোপাধ্যায়, এ.বি. গজেন্দ্রগস্কর, এম.আর. কালে, রেবতীকান্ত ভট্টাচার্য, তারানাথ তর্কবাচস্পতি, মহামহোপাধ্যায় ড. কালীপদ তর্কাচার্য এবং অন্যান্য অজ্ঞাত লেখকের আরও কয়েকখানি টীকা আছে।

অনুরূপ পাঠ

দশকমারচরিত এর মত একইধরণের বিষয় জানতে নিম্নের LINK এ CLICK করুন ।

দশকমারচরিত টীকা থেকে জিজ্ঞাস্য

1) দন্ডী কোন্ সময়ের কবি?

খ্রীষ্টিয় সপ্তম শতকের।

2) দন্ডীর বিখ্যাত গ্রন্থটির নাম কী?

দশকুমারচরিত।

3) দন্ডী কার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন?

4) দশকুমারচরিতের নায়কের নাম কী?

রাজবাহন

5) দশকুমারচরিত গ্রন্থটি কয়টি ভাগ ও কী কী?

দুটি ভাগে বিভক্ত – পূর্বপীঠিকাও উত্তর পীঠিকা।
ধন্যবাদ

আমাদের www.sanskritruprekha.com সাইট Visit করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সংস্কৃতের আরো অনেক তথ্য পাওয়ার জন্য Home Page আসুন। Home Page পৌঁছানোর জন্য CLICK HERE👈

আমদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে CLICK HERE 👈

Leave a Comment