গদ্যসাহিত্যে দন্ডী বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী। এখানে সংস্কৃত গদ্যসাহিত্যে দন্ডীর অবদান, বিষয়ে আলোচনা করব। সংস্কৃত গদ্যসাহিত্যে দন্ডীর অবদান উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষার্থীদের জন্য একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এছাড়া WBSSC এর SLST পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সংস্কৃত সাহিত্যে অন্যতম জনপ্রিয় ও সার্থক একটি গদ্যকাব্য হল ‘দশকুমারচরিতম্’। সংস্কৃত ভাষায় অথবা বিশেষভাবে বলতে গেলে বৈদিক সংস্কৃত ভাষায় প্রাচীনতম সাহিত্য ঋগ্বেদ পদ্যে লেখা হলেও যজুর্বেদে, বেদাঙ্গ সাহিত্যে, মহাভারতের কিছু কিছু অংশে গদ্যের ব্যবহার দেখা যায়। পাণিনির ‘অষ্টাধ্যায়ী’ গ্রন্থের ওপর পতঞ্জলি রচিত ‘মহাভাষ্য’ সাবলীল সংস্কৃত গদ্যের উৎকৃষ্ট নিদর্শন। তবে এগুলি গদ্য রচনার নিদর্শন হলেও স্বতন্ত্র সংস্কৃত গদ্যকাব্য নয়। কিন্তু পতঞ্জলি ‘বাসবদত্তা’, ‘সুমনোত্তরা’ ও ‘ভৈমরথী’ নামে তিনটি গদ্যকাব্যের যে উল্লেখ করেছেন, সংস্কৃত গদ্যকাব্যের ইতিহাসে সেই উল্লেখটি গুরুত্বপূর্ণ। এদের কোনোটিই পাওয়া না গেলেও পতঞ্জলির আগেই যে গদ্যকাব্যের সৃষ্টি হয়েছিল, সেই তথ্যটিই সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়।
কবি দন্ডী
ভূমিকা :— সংস্কৃত গদ্যসাহিত্যে আচার্য দন্ডী যে এক বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। তাঁর পূর্বে সংস্কৃত সাহিত্যে গদ্যকাব্য বা গদ্য রোমান্সের কোন পরিচয় পাওয়া যায় না। তিনি লোককথার কাহিনীর উপর আপন প্রতিভাবলে মহাকাব্যের সৌন্দর্যে যে নতুন ছাঁচের সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন, তাই সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাসে গদ্যকাব্য নামে পরিচিত।
কবি পরিচয়
কৌশিক গোত্রীয় ব্রাহ্মণ বংশে আচার্য দন্ডীর জন্ম হয়। তিনি ছিলেন মহাকবি ভারবির মিত্র দামোদরের প্রপৌত্র। তাঁর পিতার নাম ছিল বীর দত্ত ও মাতার নাম ছিল গৌরী। ছেলেবেলাতেই তাঁর পিতা-মাতা মারা যান। তাঁদের মৃত্যুর পর দন্ডী শ্রুত ও সরস্বতী নামে এক দম্পতীর কাছে পালিত হন। ৬৫৫ খ্রীষ্টাব্দে চালুক্য রাজা বিক্রমাদিত্য কাঞ্চী অধিকার করলে দন্ডী দেশ ত্যাগ করে নানা স্থানে পরিভ্রমন করেন এবং নানা অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। পরে পল্লব রাজ নরসিংহ কাঞ্চী অধিকার করলে দন্ডী স্বদেশে ফিরে আসেন এবং রাজসভার উচ্চপদে নিযুক্ত হন।
গদ্যকার | দন্ডী |
পিতা | বীর দত্ত |
মাতা | গৌরী |
পিতামহ | মনোরথ |
প্রপিতামহ | দামোদর |
সময়কাল | খ্রীষ্টিয় সপ্তম শতক |
গ্রন্থরচনা | দশকুমারচরিত, কাব্যাদর্শ, অবন্তীসুন্দরীকথা |
কাব্য পরিচয়
রাজশেখরের একটি উক্তি থেকে জানা যায় যে, দন্ডী তিনখানি কাব্য রচনা করেন। “ত্রয়ো দণ্ডিপ্রবন্ধাশ্চ ত্রিষু লোকেষু বিশ্রুতাঃ। ” এই তিনটি কাব্য হল –
- (i) দশকুমারচরিত,
- (ii)কাব্যাদর্শ ও
- (iii) অবন্তিসুন্দরীকথা।
তবে “দশকুমারচরিত” কাব্যটিই দন্ডীকে গদ্যসাহিত্যে অমর করে রেখেছে। কেননা “কাব্যাদর্শ” অলংকারশাস্ত্র এবং “অবন্তিসুন্দরীকথা”কে অনেকে দন্ডীর রচনা নয় বলে মনে করেন।
দশকুমারচরিত
ভূমিকা -> সংস্কৃত সাহিত্যের একটি সার্থক আখ্যায়িকা শ্রেণীর গদ্যকাব্য “দশকমারচরিত”। গ্রন্থটির রচয়িতা দন্ডী খ্রীষ্টীয় সপ্তম শতকে বর্তমান ছিলেন বলে অনুমান করা হয়। রাজপ্রাসাদের সংকীর্ণ গন্ডী অভিক্রম করে সমাজের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তিনি সহৃদয় পাঠকদের উক্ত কাব্যটি উপহার দিয়েছেন।
বিভাগ -> বর্তমানে এই কাব্যটি যেভাবে পাওয় যায় তা মূলতঃ দুটি ভাগে বিভক্ত – পূর্বপীঠিকা ও উত্তর পীঠিকা। পূর্বপীঠিকায় পাঁচটি উচ্ছ্বাস আর উত্তর পীঠিকায় আটটি উচ্ছ্বাস আছে। গ্রন্থটির প্রারম্ভ ও শেষ অসংলগ্ন, হওয়ায় মনে হয় যে, দন্ডী গ্রন্থটির রচনা শেষ করে যেতে পারেননি। অথবা তাঁর রচনা অনেকটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীকালে অন্য কোন লেখক নষ্ট অংশ রচনা করে এর সাথে জুড়ে দিয়েছিলেন।
কাহিনী -> দশকুমারচরিত কাব্যটিতে মূলত, দশজন কুমারের অভিজ্ঞতার কহিনী বর্ণিত হয়েছে। মগধের রাজা রাজহংশ মালবের রাজার কাছে হেরে গিয়ে রানির সঙ্গে বিন্ধ্যপর্বতে আশ্রয়গ্রহণ করেন। সেখানে তাঁর রাজবাহন নামে একটিপুত্র জন্মগ্রহণ করে। রাজবহনের সাথে আরও নয়জন মন্ত্রীপুত্র একসাথে লেখাপড়া করে ভাগ্যান্বেষণে দেশ ভ্রমণে বের হল। কিন্তু পথে এক ব্রাহ্মণবেশী কিরাতের সঙ্গে দেখা হওযায় তাকে সাহায্যের জন্য রাজবাহণকে পাতালে নিয়ে চলে গেল। তাঁর খোঁজে অন্যান্য কুমাররা বের হয়ে ঘটনাঞমে একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এই ভ্রমণ প্রসঙ্গে তাদের জীবনে যে যে ঘটনা ঘটে তার বর্ণনাই হল ‘দশকুমারচরিত’ কাব্যটির বিষয়বস্তু।
কাব্যমূল্য -> দন্ডী চির প্রচলিত পৌরাণিক কাহিনী বা গতানুগতিক উপাখ্যান নিয়ে তাঁর কাহিনীগুলো রচনা করেননি। তাঁর কাব্যটি সংস্কৃত সাহিত্যের গতানুগতিকতা মুক্ত এবং জীবনরসে উজ্জ্বল। কবি এই কাব্যে তৎকালীন সমাজের বাস্তব চিত্রগুলি অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন।
দন্ডীর রচনাশৈলী
গদ্য রচয়িতা হিসেবে দন্ডীর রচনায় সামঞ্জস্যবোধ দেখা যায়। ভাষা সরল ও মাধুর্যমন্ডিত। রচনার স্থানে স্থানে সমাসবদ্ধ পদ, শ্লেষের প্রয়োগ থাকলেও রচনা তাতে ভারাক্রান্ত হয়নি। প্রতিটি চরিত্র তাঁর লেখনীর স্পর্শে প্রাণবন্ত। আখ্যানটি আকারে, ঘটনা বৈচিত্রে ও বিভিন্ন চরিত্রে উপস্থাপনায় শ্রেষ্ঠ। সর্বোপরি গদ্যকাব্য রচনায় দন্ডীর প্রধান বৈশিষ্ট্য যেটি, সেই পদলালিত্যের খ্যাতি ভারতীয় সুধী সমাজে প্রবাদে পরিনত হয়েছে – “দন্ডিনঃ পদলালিত্যম্”।
দন্ডীর অবদান থেকে জিজ্ঞাস্য
1) দন্ডী কোন্ সময়ের কবি?
2) দন্ডীর বিখ্যাত গ্রন্থটির নাম কী?
3) দন্ডী কার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন?
4) কাব্যাদর্শ কার লেখা?
ধন্যবাদ
আমাদের www.sanskritruprekha.com সাইট Visit করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সংস্কৃতের আরো অনেক তথ্য পাওয়ার জন্য Home Page আসুন। Home Page পৌঁছানোর জন্য CLICK HERE👈
আমদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে CLICK HERE 👈