সংস্কৃত পুরাণের ছোট প্রশ্নোত্তর

এই অধ্যায়ের আলোচ্য বিষয় সংস্কৃত পুরাণের ছোট প্রশ্নোত্তর । এখানে সংস্কৃত সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয়ের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরগুলি স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও স্কুল সার্ভিস কমিশনের WBSSC ( SLST) সিলেবাস অনুসারে আলোচিত হল।

প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস জানতে হলে পুরাণগুলির আলোচনা যে একন্তু অপরিহার্য’ এবিষয়ে, Pargiter-ই সর্বপ্রথম বিংশ শতকের গোড়ার দিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তার পূর্বে আমরা, ভারতীয়েরাও পুরাণগুলিকে শুধুমাত্র রূপকথার বেশী মূল্য দিতে নারাজ ছিলাম। Pargiter এর পূর্বে আরও কয়েকজন পণ্ডিত পুরাণসাহিত্যের আলোচনা করেছেন সত্য কিন্তু যে নিছক গল্প এবং ঐতিহাসিক সত্যের সংমিশ্রণে পুরাণগুলি রচিত, সেগুলির মধ্যে কেহই সফলতার সঙ্গে একটা সীমারেখা টানতে পারেন নাই। Wilson পুরাণসাহিত্যের আলোচনায় আমাদের পথিকৃৎ এবং পুরাণগুলির সম্বন্ধে তাঁহার ধারণা যে সেগুলি “are only pious frauds written in subservience to sectarian imposture.”

‘পুরাণ’ শব্দের মূল অর্থ’ ‘প্রাচীন কথা’। ব্রাহ্মণ ও উপনিষদ্, সাহিত্যেও পুরাণের উল্লেখ আছে এবং সেখানে ‘ইতিহাসপুরাণ’ শব্দের একত্র উল্লেখ করা হয়েছে। বৈদিক ‘পুরাণ’ শব্দের অর্থ সাহিত্যে আখ্যান, উপাখ্যান, পুরাণ, ইতিহাস প্রায় সমর্থকরূপে ব্যবহৃত হয়েছে। ‘পুরাণ’ শব্দের বাৎপত্তিগত অর্থ হইল “পুরাকালীন”।

পুরাণকয়টি
পুরাণের রচয়িতামহর্ষি ব্যাস
পুরাণের পঞ্চলক্ষণসর্গ, প্রতিসর্গ, বংশ, মন্বন্তর ও বংশানুচরিত
মহাপুরাণ18 টি
উপপুরাণ18 টি

পুরাণ থেকে ছোট প্রশ্নোত্তর

সংস্কৃত পুরাণের ছোট প্রশ্নোত্তর সমূহ নিম্নে দেওয়া হল।

(1) পুরাণ কাকে বলে ?
উত্তর :- সংস্কৃত সাহিত্যে পুরাণ শব্দের প্রয়োগ প্রাচীন, পূর্ববৃত্ত তথা পুরাণগ্রন্থ অর্থ প্রযুক্ত হয়েছে। প্রাচীন পুরাণগুলিতে প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী পুরাণ হল পুরাকালের বিবরণ, যেহেতু পুরাকালে অর্থাৎ অতীতে এরূপ ঘটনা ঘটেছিল, তাই হল পুরাণ। মৎস্যপুরাণে বলা হয়েছে “পুরাণসা কল্পনা পুরাণানি বিদুর্বুধাঃ।

2) ‘পুরাণ’ শব্দের অর্থ কী ?
উত্তর :- প্রাচীনকাহিনি ।

3) হলায়ুধ ‘পুরাণ’ শব্দের অর্থে কী বলেছেন ?
উত্তর :- হলায়ুধ এর মতে, “পুরা পূর্বস্মিন্ কালে ভবঃ”, যার অর্থ পুরাতন।

4) সায়ণ ‘পুরাণ’ শব্দের অর্থে কী বলেছেন ?
উত্তর :- সায়ণ পুরাণ শব্দের অর্থ করেছেন , পুরাতন বৃত্তান্ত কথনরূপ আখ্যান।

5) যাস্ক ‘পুরাণ’ শব্দের অর্থে কী বলেছেন ?
উত্তর :- যাস্ক-এর মতে, “পুরা নবং ভবতি” (নিরুক্ত)।

6) পুরাণের পঞ্চলক্ষণ কী কী ?
উত্তর :- সর্গ, প্রতিসর্গ, বংশ, মন্বন্তর ও বংশানুচরিত ।

7) পুরাণগুলির রচয়িতা কে?
উত্তর:- মহর্ষি ব্যাস 18টি পুরাণের রচয়িতা –


“অষ্টাদশ পুরাণানি কৃত্বা সত্যবতীসুতঃ।
পশ্চাৎ ভারতমাখ্যানং চক্রে তদুপবৃংহিতম্।।”

8) ‘মহাপুরাণ’ কী?
উত্তর :- মহাপুরাণ আকারে যেমন বৃহৎ, তেমনই এগুলির প্রাধান্য এবং প্রভাব সুদূরপ্রসারী। অপর নাম – প্রধান পুরাণ।

9) মহাপুরাণের সংখ্যা কত ?
উত্তর :- 18টি । যেমন – 1)মৎস্য , 2) মার্কন্ডেয় , 3) ভবিষ্য , 4) ভাগবত , 5) ব্রহ্ম , 6) ব্রহ্মাণ্ড , 7) ব্রহ্মবৈবর্ত , 8) বামন , 9) বরাহ , 10) বিষ্ণু , 11) বায়ু , 12) অগ্নি , 13) নারদীয় , 14) পদ্ম , 15) লিঙ্গ , 16) গরুড় , 17) কূর্ম , 18) স্কন্দ পুরাণ ।

10) ‘উপপুরাণ’ কী?
উত্তর :- অপ্রধান পুরাণগুলি পরবর্তীকালের রচনা। আচারে ও মাহাত্ম্যে মহাপুরাণ অপেক্ষা ক্ষুদ্র ও ন্যূন।

11) উপপুরাণের সংখ্যা কত ?
উত্তর :- 18টি । যেমন – 1)সনৎকুমার , 2) নারসিংহ , 3) বায়ু , 4) শিবধর্ম , 5) আশ্চর্য , 6) নারদ , 7) নন্দিকেশ্বর , 8) কপিল , 9) উশনস , 10) কল্কি , 11) বরুণ , 12) কালিকা , 13) মহেশ্বর , 14) শাম্ব , 15) দেবী , 16) পরাশর , 17) মারীচি , 18) সূর্য পুরাণ ।

12) পুরাণকে বেদের পরিপূরক বলা হয় কেন ?
উত্তর :- বেদের অনেক দুর্বোধ্য মন্ত্রের অর্থ পুরাণের সাহাযে জানা যে বলে পুরাণকে বেদের পরিপূরক বলা হয়।

13 ) শৈবপুরাণ কার অপর নাম ?
উত্তর :- বায়ুপুরাণ ।

14 ) পঞ্চলক্ষণাত্মক দুটি পুরাণের নাম কী ?
উত্তর :- বিষ্ণুপুরাণ, বায়ুপুরাণ ।

15 ) সর্বাধিক জনপ্রিয় প্রসিদ্ধপুরাণের নাম কী ?
উত্তর :- ভাগবতপুরাণ ।

16) সর্ববৃহৎ পুরাণের নাম কী ?
উত্তর :- স্কন্দপুরাণ ।

17) স্কন্দপুরাণের শ্লোকসংখ্যা কত ?
উত্তর :- 81000 টি ।

18) ক্ষুদ্রতম পুরাণের নাম কী ?
উত্তর :- কূর্মপুরাণ ।

19) কূর্মপুরাণ শ্লোকসংখ্যা কত ?
উত্তর :- 5000 টি।

20) পুরাণের লক্ষণবাচক সংস্কৃত শ্লোকসহ লক্ষণগুলি লিখ।
উত্তর :- বায়ুপুরাণে (4/10) এবং মৎস্যপুরাণে (53/63) পুরাণের পাঁচটি লক্ষণ নির্দিষ্ট হয়েছে।

सर्गश्च प्रतिसर्गश्च वंशो मन्वन्तराणि च।
वंशान्तचरितं चैव पुराणं पञ्चलक्षणम् ।।

পুরাণের পাঁচটি লক্ষণ হল-

  • I) সর্গ বা সৃষ্টি,
  • II) প্রতিসর্গ বা প্রলয়ের পর পুনরায় নতুন সৃষ্টি,
  • III) বংশ বা দেবতা ও ঋষিদের বংশবর্ণন,
  • IV) মন্বন্তর বা মনু পরিবর্তন ,
  • V) বংশানুচরিত বা বিভিন্ন রাজবংশের ইতিহাস কথন ।

21) ‘শ্রীশ্রীচন্ডী’র উৎস কোন পুরাণ
উত্তর :- মার্কণ্ডেয়পুরাণ ।

22) ‘মঙ্গলকাব্যে’র উৎস কোন পুরাণ?
উত্তর :- ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ ।

23) সাত্ত্বিক পুরাণগুলি কী কী ?
উত্তর :- ভাগবত, নারদীয়, বিষ্ণু, গরুড়, বরাহ, পদ্ম ।

24) রাজসিক পুরাণগুলি কী কী ?
উত্তর :- ব্রহ্ম, ব্রহ্মাণ্ড, ব্রহ্মবৈবর্ত, মার্কণ্ডেয়, ভবিষ্য, বামন ।

25) শৈবপুরাণগুলি কী কী ?
উত্তর :- বায়ু, লিঙ্গ, স্কন্দ, অগ্নি, মৎস্য, কূর্ম ।

26) ‘বেধস্‌’ বিষয়ক দুটি পুরাণ কী কী ?
উত্তর :- ব্রহ্মাণ্ড ও ব্রহ্মবৈবর্ত ।

27) পুরাণের উল্লেখ কোথায় পাওয়া যায় ?
উত্তর :- ব্রাহ্মণ ও উপনিষদে ।

28) মৎস্যপুরাণে পাঁচটি লক্ষণ ছাড়াও পুরাণের আর কতগুলি লক্ষণ রয়েছে ?
উত্তর :- 6 টি ।

29) পুরাণে কোন দেবতার প্রাধান্য দেখা যায় ?
উত্তর :- ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর ।

30) ‘পুরাণ বেদের অনুসরণকারী’ কেন ?
উত্তর :- পুরাণং বেদসম্মতম্’ অর্থাৎ সমস্তবেদ পুরাণে প্রতিষ্টিত ।

31) বিষ্ণুপুরাণের উদ্দেশ্য কী ছিল ?
উত্তর :- শ্রীবিষ্ণুর মহিমা কীর্ত্তন করা ।

32) কোন পুরাণ ‘পঞ্চমবেদ’ নামে পরিচিত ?
উত্তর :- ভাগবতপুরাণ ।

33) ‘ভাগবতপুরাণ” অন্য কোন নামে পরিচিত?
উত্তর :- ‘শ্রীমদ্ভাগবত’ ।

34) কোন পুরাণকে ‘বিশ্বকোষ” বলে ?
উত্তর :- অগ্নিপুরাণকে ।

35) বায়ুপুরাণে কোন রাজবংশের কথা জানা যায় ?
উত্তর :- নন্দ, শিশুনাগ ও গুপ্তবংশ ।

36) পুরাণকে বেদের পরিপূরক বলা হয় কেন ?
উত্তর :- বেদের বহু দুর্বোধ্য মন্ত্রের অর্থ এখানে পাওয়া যায় ।

37) পদ্মপুরাণে কয়টি খণ্ড পাওয়া যায় ?
উত্তর :- 9 টি ।

38) পদ্মপুরাণের খণ্ডগুলির নাম কী কী ?
উত্তর:- সৃষ্টি, ভূমি, স্বর্গ, পাতাল ও উত্তরখণ্ড ।

39) পৌত্তলিকতার উদ্ভব কোন শাস্ত্রে পাওয়া যায় ?
উত্তর :- পুরাণে ।

40) কোন পূরাণে মূর্তিপূজার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর :- অগ্নিপুরাণ ।

41) অগ্নিপুরাণে কয়প্রকার মূর্তির কথা বলা হয়েছে ?
উত্তর :- 7 প্রকার ।

42) সাতপ্রকার মূর্ত্তি কী কী ?
উত্তর :- স্বর্ণময়, রজতময়, কাংস্যময়, তাম্রময়, লৌহময়, কাষ্ঠময় ও মৃণায় ।

43) পুরাণের ‘খিল’ অংশ কী?
উত্তর:- উপপুরাণ।

44) পুরাণের মহৎ ধর্ম কী ?
উত্তর :- দম, দয়া, দান ।

45) বিবাহ কয়প্রকার ও কী কী ?
উত্তর :- আট প্রকার । যথা- ব্রহ্ম, দৈব, আর্য, প্রাজাপত্য, আসুর, গান্ধর্ব, রাক্ষস ও পৈশাচ ।

46) কোন পুরাণে জ্যোতিষ বিষয়ক আলোচনা আছে ?
উত্তর :- বিষ্ণুপুরাণে ।

47) পুরাণের ‘পঞ্চলক্ষণে’র শ্লোকটি কোন কোন পুরাণে দৃষ্ট হয় ?
উত্তর :- বায়ু (4/10), মৎস্য (53/63) ।

48) ‘আখ্যান’ শব্দের অর্থ কী ?
উত্তর :- দৃষ্ট বিষয়ের গল্প ।

49) ‘উপাখ্যান’ শব্দের অর্থ কী ?
উত্তর :- শ্রুত বিষয়ের গল্প ।

50) ‘গাথা’ শব্দের অর্থ কী ?
উত্তর :- লোকমুখে প্রচলিত গল্প ।

51) ব্রহ্মপুরাণের প্রবক্তা কে ?
উত্তর :- লোমহর্ষণ ।

52) পদ্মপুরাণের প্রবক্তা কে ?
উত্তর :- উগ্রশ্রবা ।

53) নারদীয় পুরাণের প্রবক্তা কে ?
উত্তর :- নারদ

54) ভাগবতপুরাণের সাদৃশ্য কোন পুরাণের সঙ্গে লক্ষ্য করা যায় ?
উত্তর :- বিষ্ণুপুরাণ ।

55) ‘আদম-নোহা’র কাহিনি কোন পুরাণে উল্লিখিত ?
উত্তর :- ভবিষ্যপুরাণ।

56) মৌর্য বংশের ইতিহাস কোন পুরাণ থেকে পাই ?
উত্তর :- বিষ্ণু পুরাণ

57) গুপ্ত বংশের ইতিহাস কোন পুরাণ থেকে পাই ?
উত্তর :- বায়ু পুরাণ

58) অন্ধ্র বংশের ইতিহাস কোন পুরাণ থেকে পাই ?
উত্তর :- মত্স্য পুরাণ

59) পুরাণ অবলম্বনে রচিত একটি নাটকের নাম কি ?
উত্তর :- পদ্মপুরাণ অবলম্বনে ভবভূতির উত্তররামচারিত

60) পুরাণ অবলম্বনে রচিত একটি মহাকাব্যের নাম কি ?
উত্তর :- শিবপুরাণ অবলম্বনে কালিদাসের কুমারসম্ভব

অনুরূপ পাঠ

সংস্কৃত পুরাণের ছোট প্রশ্নোত্তর এর ন্যায় অন্যান্য বিষয়ের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর জানার জন্য link এ click করুন ।

ধন্যবাদ

আমাদের www.sanskritruprekha.com সাইট Visit করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সংস্কৃতের আরো অনেক তথ্য পাওয়ার জন্য Home Page আসুন। Home Page পৌঁছানোর জন্য CLICK HERE👈

আমদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে CLICK HERE👈 

Leave a Comment