হিতোপদেশ টীকা

সংস্কৃত সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য দুটি গল্পগ্রন্থের মধ্যে অন্যতম পণ্ডিত নারায়ণশর্মা রচিত হিতোপদেশ। আমরা এখানে সংস্কৃত গল্প সাহিত্যে হিতোপদেশের স্থান আলোচনা করো বা হিতোপদেশ বিষয়ে টীকা লিখ, নিয়ে আলোচনা করব। হিতোপদেশ টীকা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর , WBSSC(SLST) পরীক্ষার্থীদের কন্ঠস্থ করতে হবে। উচ্চমাধ্যমিক 2025 পরীক্ষার্থীদের Suggestive প্রশ্নগুলির মধ্যে এটি গুরুত্বপূর্ণ।

সংস্কৃত সাহিত্যে কাব্য, নাটক ইত্যাদির মতো গল্পও এক অত্যন্ত সমৃদ্ধ শাখা। গল্পকে সংস্কৃত ভাষায় বলা হয় ‘কথা’। এই কথার ইতিহাস অতি প্রাচীন। ঋগ্বেদে ভেকসুক্তে , ছান্দোগ্য উপনিষদের সারমেয়ের উপাখ্যানে মানবেতর প্রাণী নিয়ে গল্পের সমাবেশ দেখা যায়। মহাভারতেও অনেক গল্প স্থান পেয়েছে, সেখানে এক-একটি নীতির দ্বারা উপদেশ দেওয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, উদ্যোগপর্বে ডিণ্ডিক নামে একটি ইঁদুর ও বিড়ালের গল্পটি উল্লেখযোগ্য। তবে পরবর্তীকালে এই গল্পগুলিই একটি স্বতন্ত্র সাহিত্য-শাখার জন্ম দিয়েছে এবং তার দ্বারা নীতিশিক্ষা দানের উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছে। জড়বুদ্ধিসম্পন্ন রাজকুমারদের অর্থশাস্ত্র, নীতিশাস্ত্র প্রভৃতিতে শিক্ষিত করে তোলার জন্যই রাজসভার ব্রাহ্মণ-পন্ডিতেরা পশুপাখি, মানুষ, দৈত্য প্রভৃতিকে অবলম্বন করে গল্প রচনা করতেন। কালক্রমে এভাবেই গল্পসাহিত্যের এক বিশাল ভাণ্ডার গড়ে ওঠে। এই গল্পসাহিত্যে বা কথাসাহিত্যে বৌদ্ধজাতক কাহিনি ও অবদান কাহিনিগুলির প্রভাবও গুরুত্বপূর্ণ।

হিতোপদেশ

হিতোপদেশ টীকা বিষয়ে কয়েকটি কথা।

গ্রন্থহিতোপদেশ
গ্রন্থবিভাগগল্প সাহিত্য
রচয়িতানারায়ণশর্মা
অধ্যায় চারটি
চারটি অধ্যায়মিত্রলাভ, সুহৃদ্ভেদ, বিগ্রহ ও সন্ধি
মোট গল্প43টি

ভূমিকা

গল্প শোনার আকর্ষণ মানুষের সহজাত। শিশুমনে তাই তো এত আকুতি গল্প শোনার। গল্প শোনার আকর্ষণ তীব্র হয়েছে গল্প বলার ভঙ্গি থেকে। দুর্বার এই আকর্ষণ ও সহজাত প্রবৃত্তি থেকেই উদ্ভূত হয়েছে গল্পসাহিত্যের। সংস্কৃত সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য দুটি গল্পগ্রন্থের মধ্যে অন্যতম পণ্ডিত নারায়ণশর্মা রচিত হিতোপদেশ।

রচনার উদ্দেশ্য

পাটলিপুত্রের রাজা সুদর্শনের পুত্রদের বিদ্যাশিক্ষার জন্য এই গল্পগ্রন্থ রচিত হয়। গ্রন্থটির রচনাকাল খ্রীষ্টিয় নবম শতক থেকে চতুর্দশ শতকের মধ্যে।

গ্রন্থ বিভাগ

হিতোপদেশের চারটি অধ্যায় –

  • (i) মিত্রলাভ,
  • (ii) সুহৃদ্ভেদ,
  • (iii) বিগ্রহ এবং
  • (iv) সন্ধি।

এই গ্রন্থের তৃতীয় খন্ড পঞ্চতন্ত্রের চতুর্থ খণ্ডের ছায়ামাত্র। হিতোপদেশের গল্পসংখ্যা 43টি। এর মধ্যে পঞ্চতন্ত্র থেকে 25টি গল্প নেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবনায় এই ঋণ গ্রন্থকার অকপটে স্বীকার করেছেন – “পঞ্চতন্ত্রাওথান্যস্মাৎ গ্রন্থাদাকৃষ্য লিখ্যতে”।

রচনাকাল

গ্রন্থে রবিবারকে বলা হয়েছে ‘ভট্টারকবার’; 900 খৃষ্টাব্দের পূর্বে ঐ শব্দটির প্রচলন ছিল না। নারায়ণকে মাঘের পরবর্তী বলে মনে করা হয়।

বিষয়বস্তু

হিতোপদেশের বিষয়বস্তু গ্রন্থের নাম থেকে বোঝা যায়- এই গ্রন্থ কিছু হিতকর গল্পের সংকলন। গ্রন্থকার নিজেও বলেছেন – ” কথাচ্ছলেন বালানাং নীতিস্তদিহ কথ্যতে।” এখানে গল্পচ্ছলে বালকদের কিছু নীতিকথা শোনানো হয়েছে। কথাচ্ছলে রাজনীতি, সমাজনীতির প্রসঙ্গ এসেছে। কিন্তু নীরস নীতিকথা লেখকের লেখনীর যাদুস্পর্শে সাহিত্যরসমন্ডিত হয়ে উঠেছে। তখন সমাজের একটা পরিচ্ছন্ন ছবি গল্পের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে। বীরবরের আত্মতাগের কাহিনী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নারায়ণের রচনারীতি সহজ, স্বচ্ছ ও সাবলীল।

হিতোপদেশের গল্পগুলি বালক বালিকাদের কল্পনা রাজ্যে এক মায়ার আবেশ সৃষ্টি করে। গোদাবরী তীরের বিশাল শাল্মলী তরু, মন্দর পর্বতের দুর্দান্ত নামক সিংহ, কল্যানকটকে ভৈরব নামক ব্যাধ, সমুদ্রতীরে টিট্টিভ দম্পতী এমন কত ছোট ছোট গল্পের রহস্যঘন পরিবেশ, যা শোনামাত্র শিশুচিত্তে অপূর্ব পুলক জাগে। তারা আনন্দে আত্মহারা হয়।

মূল্যায়ন

হিতোপদেশের গল্পগুলি অনুধাবন করলে বোঝা যায় যে, এরা যেন অতীতকালের জীবন অভিজ্ঞতার এক অক্ষয় সম্পদভান্ডার বহন করে এনেছে। এবিষয়ে জৈনৈক পাশ্চাত্য পণ্ডিত বলেছেন – ” আমরা সভ্যতার পক্ষে হয়ত অনেক দূর এগিয়ে গেছি, তবু হিতোপদেশের এই কাহিনী গুলির প্রত্যেকটিই যেন আজও মানব সমাজের সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবেই প্রযোজ্য।”

অনুরূপ পাঠ

হিতোপদেশ টীকা এর মত একইধরণের বিষয় জানতে নিম্নের LINK এ CLICK করুন ।

হিতোপদেশ থেকে জিজ্ঞাস্য

1) হিতোপদেশ কার রচনা?

নারায়ণশর্মার।

2) হিতোপদেশ কী জাতীয় রচনা?

3) হিতোপদেশ কয়টি অধ্যায় আছে?

4টি।
ধন্যবাদ

আমাদের www.sanskritruprekha.com সাইট Visit করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সংস্কৃতের আরো অনেক তথ্য পাওয়ার জন্য Home Page আসুন। Home Page পৌঁছানোর জন্য CLICK HERE👈

আমদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে CLICK HERE 👈

Leave a Comment