বচন সংখ্যা বোধক শব্দ । সংস্কৃত বাক্য প্রয়োগে বচনের জ্ঞান থাকা আবশ্যক।বচনের জ্ঞান বিনা সঠিক ক্রিয়াপদের প্রয়োগ সম্ভব নয়। বচন অনুসারে ক্রিয়াপদ ব্যবহৃত হয়। এই অধ্যায়ে আমরা সংস্কৃত বচন সম্পর্কে বিশদে জানবো। বচন অনুরূপ বাংলা থেকে সংস্কৃতে অনুবাদ করা হয়েছে। বচন সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকলে সংস্কৃতে অনুবাদ করা সম্ভব নয়। সংস্কৃত অনুবাদ শিক্ষার জন্য বচন জানা আবশ্যক। সপ্তম, অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এছাড়াও স্নাতক ও স্নাতকোত্তর , WBSSC(SLST) পরীক্ষার্থীদের বচন কন্ঠস্থ করতে হবে।
‘বচন’ কথাটির সাধারণ অর্থ হল কথা বা বাক্য। তোমার বচন থামাও দেখি, বাংলা ভাষায় এরকম বাক্য ব্যবহার দেখা যায়। কিন্তু ব্যাকরণে ‘বচন’ কথাটির অর্থ হল ‘সংখ্যা’ সংখ্যায় এক বোঝালে একবচন, দুই বোঝালে দ্বিবচন আর দুইয়ের বেশি বোঝালে বহুবচন হয়।
বচন কাকে বলে?
বচন আলোচনা প্রসঙ্গে প্রথমেই আসে বচন কাকে বলে? যা দ্বারা কোনো বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের এক, দুই বা দুইয়ের বেশি সংখ্যা বোঝা যায়, তাকে বচন বলে। সংস্কৃত ভাষায় বচন তিনটি—
- একবচন (Singular),
- দ্বিবচন (Dual) এবং
- বহুবচন (Plural)।
সংস্কৃত বচন এর ব্যবহার
শব্দ | একবচন | দ্বিবচন | বহুবচন |
সাধু | সাধুঃ | সাধূ | সাধবঃ |
সুধী | সুধীঃ | সুধিয়ৌ | সুধিয়ঃ |
সখি | সখা | সখায়ৌ | সখায়ঃ |
পতি | পতিঃ | পতী | পতয়ঃ |
বণিজ্ | বণিক্ | বণিজৌ | বণিজঃ |
একবচন (Singular) কাকে বলে?
সংস্কৃত ব্যাকরণে কোনো ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীর সংখ্যা এক বোঝালে তা একবচন হয়। যথা—নরঃ (একজন মানুষ), মুনিঃ (একজন ঋষি), লতা (একটি লতা), বালকঃ (একজন বালক), ফলম্(একটি ফল) প্রভৃতি।
একবচনের ব্যবহার
- সংখ্যাবাচক শব্দগুলির মধ্যে শত, সহস্র ও ঊনবিংশতি থেকে নবনবতি পর্যন্ত শব্দগুলি বিশেষণ হলেও নিত্য একবচন। যেমন—ঊনবিংশতি বৃক্ষাঃ লতাঃ ফলানি বা, শতং বালকাঃ শরদঃ পুস্তকানি বা, সহস্রং মুনয়ঃ নদ্যঃ পুস্তকানি বা।
- ‘দুই’ সংখ্যাবাচক দ্বয়, দ্বিতয়, যুগ, যুগল, মিথুন, দ্বন্দ্ব প্রভৃতি শব্দ, ‘তিন’ সংখ্যাবোধক ত্রয় ও ত্রিতয় শব্দ এবং ‘চারি’ সংখ্যাবাচক ‘চতুষ্টয়’ শব্দ এবং ‘সমূহ’ অর্থবোধক গণ, বর্গ, বন, কুল, বৃন্দ, সমূহ, মণ্ডল প্রভৃতি শব্দ একাধিক সংখ্যাবোধক হলেও সমষ্টিবাচক বলে একবচনে ব্যবহৃত হয়। যথা- বালিকাদ্বয়ং গচ্ছতি। কিন্নরমিথুনং পশ্যতু । মুনিত্রয়ং নমস্কুরু। ব্রাহ্মণচতুষ্টয়ং বদতি। বন্ধুগণ আয়াতঃ।
- সমাহার দ্বন্দ্ব, সমাহার দ্বিগু ও অব্যয়ীভাব সমাসনিষ্পন্ন শব্দও সমষ্টিবাচক বলে সর্বদা একবচনান্ত হয়। যথা—করচরণম্, অহিনকুলম্, ত্রিলোকী, চতুর্যুগম্, যথাসাধ্যম্।
- জাত্যাখ্যায়ম্ একস্মিন্বহুবচনমন্যতরস্যাম্ – জাতি (এক শ্রেণীর সমগ্র জাতি) বোঝাতে একবচনের স্থানে বিকল্পে বহুবচনের ব্যবহার হয়। যথা- সিংহঃ পশুরাজঃ। জীবেষু মানবঃ শ্রেষ্ঠঃ । কিন্তু, শ্রেণীর ব্যক্তিসমূহ ভিন্ন ভিন্ন ভাবে বোঝালে জাতিবাচক পদে বহুবচন ব্যবহার করা হয়। যথা—ব্রাহ্মণাঃ পূজ্যাঃ। গাবঃ যত্নেন পালয়িতব্যাঃ।
দ্বিবচন(Dual) কাকে বলে?
সংস্কৃত ব্যাকরণে কোনো ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীর সংখ্যা দুই বোঝালে তা দ্বিবচন হয়। যথা—নরৌ (দুইজন মানুষ), মুনী (দুইজন ঋষি), লতে (দুটি লতা), ফলে (দুটি ফল) ইত্যাদি।
দ্বিবচনের ব্যবহার
- অশ্বিনীকুমার, মিত্রাবরুণ, সূর্যাচন্দ্রমস্, কুশীলব, দ্যাবাপৃথিবৌ, স্ত্রীপুংসে, ওষ্ঠ, যমজ প্রভৃতি শব্দ দ্বিবচনান্ত ।
- স্ত্রীবাচক পদের সঙ্গে পুরুষবাচক পদের একশেষ হলে তা পুংলিঙ্গ এবং দ্বিচনান্ত হয়। যথা-মাতা চ পিতা চ–পিতরৌ। পুত্রশ্চ দুহিতা চা -পুত্রৌ।
- দ্বি, উভ, দম্পতী এবং অশ্বিন্ (দেবতাদের চিকিৎসক) শব্দ সর্বদা দ্বিবচনে ব্যবহৃত হয়। যথা—দ্বে বালিকে, দ্বৌ গাবৌ। উভৌ বালকৌ। অত্র বৃক্ষে বায়সদম্পতী নিবসতঃ। অশ্বিনৌ স্তুহি।
- যুগ্মসংখ্যক শরীরের অঙ্গ (চক্ষু, কর্ণ, হস্ত, পদ প্রভৃতি) দ্বিবচনে ব্যবহৃত হয়। যথা- তব হস্তৌ পাদৌ চ প্রক্ষালয়। মানবাঃ চরণাভ্যাং গচ্ছন্তি। কিন্তু বিশেষভাবে শরীরের অঙ্গ সম্বন্ধে নির্দেশ থাকলে একবচনে ব্যবহৃত হয়। যথা- স্ফুরতি মে দক্ষিণো বাহুঃ।
বহুবচন(Plural) কাকে বলে?
সংস্কৃত ব্যাকরণে কোনো ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীর সংখ্যা দুইয়ের বেশি বোঝালে তা বহুবচন হয়। যথা—নরাঃ (অনেকজন মানুষ বা মানুষগুলি), মুনয়ঃ (অনেকজন ঋষি বা ঋষিগণ), লতাঃ(অনেকগুলি লতা), ফলানি(অনেকগুলি ফল) ইত্যাদি।
বহুবচনের ব্যবহার
(1) পুংলিঙ্গ দার(পত্নী), অক্ষত(আতপ চাউল), লাজ(খৈ), অসু(প্রাণ) ও প্রাণ(জীবন) শব্দ এবং স্ত্রীলিঙ্গ অপ্(জল), সুমনস্(ফুল), সমা(বছর), সিকতা(বালি) ও বর্ষা শব্দ নিত্য বহুবচনান্ত। যথা-
- দশরথস্য ইমে দারাঃ।
- যত্নেন দারান্ পালয়েত্।
- অক্ষতান্ আদত্তে।
- পুরোহিতঃ অক্ষতান্ গৃহ্নাতি।
- কেশবঃ অসূন তত্যজ।
- বালিকা লাজান্ বিকিরতি।
- বালকোহয়ং মে প্রাণভ্যোহপি গরীয়ান্।
- পথিকঃ অপঃ পিবতি।
- বর্ষাসু বৃষ্টির্ভবতি।
- মা নিষাদ, প্রতিষ্ঠাং তমগমঃ শাশ্বতী সমাঃ।
2) ‘কতি’ (কত), যতি (যত), ততি (তত) শব্দ সর্বদা বহুবচনান্ত এবং তিন লিঙ্গে সমান। যথা—কতি তে পুত্রাঃ, যতি আম্রাণি ত্বম্ ইচ্ছসি, ততি গৃহাণ। “কতি” শব্দ প্রশ্নার্থেও ব্যবহৃত হয়। যথা—কতি বালকাঃ গমিষ্যন্তি?
3) গৌরব (সম্মান ও আদর) বোঝালে প্রায়ই একবচন ও দ্বিবচনের পরিবর্তে বহুবচন ব্যবহৃত হয়। যথা— ইতি শংকরাচার্য। ইতি শ্রীমধুসূদনসরস্বতীপাদাঃ। এইরূপে, শ্রীচরণকমলেষু, দীর্ঘজীবিষু ইত্যদী।
4) “গৃহ’ শব্দ পুংলিঙ্গ হলে কেবল বহুবচনেই ব্যবহৃত হয়। যথা—ইমে মম গৃহাঃ। কিন্তু, ‘গৃহ’ শব্দ ক্লীবলিঙ্গ হলে প্রয়োজন অনুসারে তিন বচনেই এর প্রয়োগ হয়। যথা—
- ইদং গৃহম্।
- ইমে গৃহে।
- ইমানি গৃহানি।
5) প্রদেশবাচক শব্দসূমহ সাধারণত বহুবচনে ব্যবহৃত হয়। যথা—নাহং কলিঙ্গান্ জগাম। আসীৎ মদ্রেষু শূরসেনা নাম রাজা। এইরূপ—অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, সৌরাষ্ট্র, মগধ প্রভৃতিতেও হবে। কিন্তু, প্রদেশবাচক শব্দের সঙ্গে দেশ, বিষয় প্রভৃতি শব্দের সমাস হলে তারা একবচনে ব্যবহৃত হয়। যথা- অস্তি মগধদেশে চম্পকবতী নামারণ্যানী।” “আসীৎ মালববিষয়ে পদ্মগর্ভাভিধানংসরঃ- (হিতোপদেশ)
6) অপ্সরস্ শব্দ সাধারণতঃ বহুবচনেই ব্যবহৃত হয়। যথা—অপ্সরসঃ। কিন্তু, কখন কখন একবচনেও ব্যবহৃত হয়। যথা— অস্তি মেনকেতি কাচিৎ অপ্সরাঃ।
7) বংশ (অধস্তন পুরুষসমূহ) বোঝাতে ব্যক্তির নামের উত্তর বহুবচন প্রযুক্ত হয়। যথা—বৃষ্ণেরপত্যানি—বৃষ্ণয়ঃ। রঘোরপত্যানি— রাঘবঃ। “রঘুণাম্ অন্বয়ং বক্ষ্যে” – রঘুবংশ।
বিভিন্ন শব্দ (প্রথমার) ও ধাতুর (লটের প্রথম পুরুষের) একবচন , দ্বিবচন এবং বহুবচনে রূপ—
একবচন | দ্বিবচন | বহুবচন |
নরঃ | নরৌ | নরাঃ |
মানবঃ | মানবৌ | মানবাঃ |
বালকঃ | বালকৌ | বালকাঃ |
ফলম্ | ফলে | ফলানি |
মুনিঃ | মুনী | মুনয়ঃ |
লতা | লতে | লতাঃ |
সাধুঃ | সাধূ | সাধবঃ |
নদী | নদ্যৌ | নদ্যঃ |
পিতা | পিতরৌ | পিতরঃ |
মাতা | মাতরৌ | মাতরঃ |
ভবতি | ভবতঃ | ভবন্তি |
বদতি | বদতঃ | বদন্তি |
তিষ্ঠতি | তিষ্ঠতঃ | তিষ্ঠন্তি |
গচ্ছতি | গচ্ছতঃ | গচ্ছন্তি |
পিবতি | পিবতঃ | পিবন্তি |
লিখতি | লিখতঃ | লিখন্তি |
বচন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য
উত্তর—কতি
উত্তর—তিন প্রকার । যথা- একবচন, দ্বিবচন ও বহুবচন ।
উত্তর—বহুবচনে ।
ধন্যবাদ
আমাদের www.sanskritruprekha.com সাইট Visit করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সংস্কৃতের আরো অনেক তথ্য পাওয়ার জন্য Home Page আসুন। Home Page পৌঁছানোর জন্য CLICK HERE👈
আমদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে CLICK HERE 👈
বচন নির্ণয় কর:-
বালিকা, আশ্রম, সিংহাসনে, যামিনী ।
দয়া করে যদি এর উত্তর দেন তাহলে কৃতজ্ঞ থাকব ।
বালিকা, সিংহাসনে, যামিনী – এই তিনটি একবচন। আবার আশ্রয় শব্দটিতে বিভক্তি যুক্ত নেই। অপরদিকে বালিকা ও যামিনী পদ দুটি প্রথমার একবচনের রূপ। সিংহাসনে পদটি সপ্তমীর একবচনের রূপ।