এই অধ্যায়ের আলোচ্য বিষয় রামায়ণের প্রভাব । রামায়ণ ভারতীয়দের অত্যন্ত জনপ্রিয় কাব্য। সমাজ ও সাহিত্যের উপর রামায়ণের প্রভাব আলোচনা কর – এই প্রশ্নের উত্তর আলোচনা করব । একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এছাড়াও স্নাতক ও স্নাতকোত্তর , WBSSC(SLST) পরীক্ষার্থীদের রামায়ণের প্রভাব প্রভাব কন্ঠস্থ করতে হবে।
রামায়ণের রচয়িতা বাল্মীকি । তিনি আদিকবি , রামায়ণ আদিকাব্য। বিষ্ণুপুরাণে বলা হয়েছে যে, বাল্মীকি ভৃগুর বংশধর । এবং বৈবস্বত মন্বন্তরে তিনিই চতুর্বিংশ ব্যাস । ব্রহ্মার আদেশে বাল্মীকি রামায়ণ রচনা শুরু করেন। এবং এই কাব্যের নাম দেন “রামায়ণ” । মহাভারত অপেক্ষা রামায়ণ আয়তনে ছোট ও রচনায় পরস্পর সংবদ্ধতা ও ধারবাহিকতা মহাভারত অপেক্ষা অনেক বেশি। রামায়ণ যুগে যুগে ভারতবাসীর চিন্তা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে যে প্রভাব বিস্তার করেছে , পৃথিবীর আর কোন গ্রন্থ ততখানি প্রভাব বিস্তার করেনি।
মহাভারত | কিছু তথ্য |
রামায়ণের রচয়িতা | আদিকবি বাল্মীকি |
রামায়ণের অপর নাম | আদিকাব্য |
কান্ড সংখ্যা | 7 টি |
শ্লোক সংখ্যা | 24000 টি |
সমাজ ও সাহিত্যে রামায়নের প্রভাব
ভূমিকা → রামায়ণ ভারতীয়দের সর্বজনপ্রিয়, মহাকাব্য, হাজার হাজার বছর ধরে রামায়ণ ভারতবর্ষের জনমনে ও কবিচিত্তে যে অসাধারণ প্রভাব বিস্তার করেছে তার তুলনা নেই, তা বলে শেষ করা যায় না। বাস্তবে ভারতবর্ষের যা কিছু উচ্চাদর্শ, যা কিছু শ্রেয় ধর্ম সেই সব আদর্শের সুসংহত এক জীবন্ত চিত্রকল্প রামায়ণে আছে।
সমাজে প্রভাব → ভারতীয় সমাজের মূল্যবোধে, লোকাচারে রামায়ণের প্রভাব পরিলক্ষিত। রামায়নের বিভিন্ন চরিত্রকে ভারতবাসগণ অত্যন্ত নিজস্বরূপে গ্রহণ করেছেন। আজও তাই আদর্শ পুত্ররূপে, আদর্শ ভ্রাতারূপে, পত্নীপ্রাণ পতি হিসাবে এবং প্রজাপালক রাজা হিসাবে রামচন্দ্র উল্লেখ্য। স্বধর্ম ও কর্তব্য নিষ্ঠার অসাধারণ বিগ্রহ রামচন্দ্র নিজগুণে দেবতা হয়েছেন। রাজৈশ্বর্যের বাসনা ত্যাগ করে বনবাস গ্রহনকারী স্বাধী ও পতিগতপ্রাণা পত্নী হিসাবে সীতার আদর্শ আজও ভারতবাসীর ধ্রুবতারা। ভ্রাতার আদর্শরূপে লক্ষ্মণ ও ভরতের চরিত্র, সেবকের আদর্শ রূপে হনুমানের চরিত্র, সুগ্রীবের বন্ধুত্ব ভারতবাসীর মনে চিরজাগরূক।
উত্তর ভারতের লোকেরা ‘রাম রাম’ বলে পরস্পর মিলন সম্ভাষণ করে। যৌথ পরিবারে বিচিত্র প্রীতির সম্বন্ধ ত্যাগের আদর্শে মন্ডিত হয়। ভারতের নেতৃবৃন্দ দেশ স্বাধীন হবার পর রামরাজ্যের প্রতিষ্ঠাকেই আদর্শ মনে করেছেন। রামরাজ্য বলতে রামায়ণের সেই রাজ্যের কথা মনে পড়ে, যেখানে কল্যান ও আনন্দ বইতে থাকে। আধি-ব্যাধি ও দস্যুভীতি তিরোহিত হয়। রামরাজ্যের এই চিন্তা ও আদর্শ আমাদের সমাজ জীবন তথা রাষ্ট্রজীবনকে প্রভাবিত করে।
সাহিত্যে প্রভাব → কাব্য জগতে এমন কোন কাব্যস্রোত নেই যেখানে রামায়নের স্রোত পৌঁছায়নি। সুপ্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত রামায়নের কাহিনী, ভাব, অলংকার প্রভৃতি অবলম্বন করে বহু সংস্কৃত কাব্য- নাটকাদি রচিত হয়েছে।
মহাকবি কালিদাস রামায়নকে অবলম্বন করে যশস্বী হয়েছেন। সে কথা “রঘুবংশম্” মহাকাব্যে মুক্তকন্ঠে স্বীকার করেছেন –
অথবা কৃতবাগ্দ্বারে বংশেহস্মিন্ পূর্বসূরিভিঃ ।
মনৌ বজ্রসমুৎকীর্ণে সূত্রস্যেবাস্তি মে গতিঃ।।
ভারতবর্ষের সাহিত্যে রামায়নের অমিত প্রভাব। মহাকবি ভাসের “প্রতিমা” ও “অভিষেক” নাটক, ভবভূতির “মহাবীরচরিত” ও “উত্তররামচরিত”, ভর্তৃহরির “ভটিকাব্য”, কুমারদাসের “জানকীহরন”, মুরারীর “অনর্ঘরাঘব”, জয়দেবের “প্রসন্নরাঘব”, ভোজের “রামায়ণচম্পূ”- এসব সাহিত্যকৃতি তার দৃষ্টান্ত। অশ্বঘোষের “বুদ্ধচরিত”, কালিদাসের “অভিজ্ঞানশকুন্তলম্” এর অঙ্গুরির ঘটনা ও “মেঘদূত” এর বিরহ-বেদনা এবং বার্তা প্রেরণের ঘটনার উপরেও রামায়নের প্রভাব স্পষ্ট। বাল্মীকি-রামায়ন অবলম্বনে ”আধ্যাত্ম রামায়ন”, “যোগবিশিষ্টরামায়ণ” প্রভৃতি লিখিত।
ভারতের প্রায় প্রতিটি ভাষায় রামায়ণের অনুবাদ রয়েছে। তামিল ভাষায় “কণ্বরামায়ণ”, হিন্দী ভাষায় “তুলসীদাসী রামায়ণ”, বাংলা ভাষায় “কৃত্তিবাসী রামায়ণ”, নেপালী ভাষায় ভানুভক্তের “নেপালী রামায়ণ” এর নামোল্লেখ করা যেতে পারে। তাছাড়া ঈশ্বরচন্দ্রের “সীতার বনবাস”, মধুসূদনের “মেঘনাদবধ কাব্য”, রবীন্দ্রনাথের “বাল্মীকি প্রতিভা” প্রকৃতি অসংখ্য বাংলা সাহিত্য রামায়ণ অবলম্বনে রচিত।
উপসংহার → সাহিত্যই জাতির সত্যিকারের পরিচয়, রামায়ণ ভারতীয় আদর্শের পরিচয়। হিন্দু আদর্শের পরাকাষ্ঠা রামায়ণেই দেখা যায়। আলোচনাটির পরিসর দীর্ঘায়িত না করে রামায়নের প্রভাব সম্পর্কে ব্রহ্মার আশীর্বাণী উল্লেখ করে শেষ করা যেতে পারে –
যাবৎ সাস্যন্তি গিরয়ঃ সরিতশ্চ মহীতলে।
তাবৎ রামায়ন কথা লোকেষু প্রচরিষ্যতি।।
রামায়ণ থেকে জিজ্ঞাস্য
সাতটি।
চব্বিশ হাজার।
প্রথম ও সপ্তম কান্ডকে।
ধন্যবাদ
মহাভারতের ছোট প্রশ্নোত্তর তথা আমাদের www.sanskritruprekha.com সাইট Visit করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সংস্কৃতের আরো অনেক তথ্য পাওয়ার জন্য Home Page আসুন। Home Page পৌঁছানোর জন্য CLICK HERE👈
আমদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে CLICK HERE👈
রামায়ণে এর প্রবন্ধ লেখ
অনুচ্ছেদ রচনা অধ্যায় দেখুন।