এই অধ্যায়ের আলোচ্য বিষয় রামায়ণ । এখানে রামায়ণের রচয়িতা, রচনাকাল, কান্ডের ক্রম অনুসারে রামায়ণের বিষয়বস্তু এবং সমালোচনা আলোচিত হয়েছে।
আদিকবি বাল্মীকির আদিকাব্য রামায়ণ মহাকাব্যটি ভারতবাসীর অতি আদরের সম্পদ এবং পরম শ্রদ্ধার বস্তু। বাল্মীকি আমাদের কবিগুরু, আর তাঁর রামায়ণ “কবিপ্রথমপদ্ধতিঃ” অর্থাৎ আদিকাব্য বলে ঘোষিত। রামায়ণ একাধারে ধর্মশাস্ত্র এবং মহাকাব্য। বিষ্ণু পুরাণে বলা হয়েছে যে বাল্মীকি ভৃগুর বংশধর এবং বৈবস্বত মন্বন্তরে তিনিই চতুর্বিংশ ব্যাস। অধ্যাত্মরামায়ণে বাল্মীকি নিজের অতীত জীবনেতিহাস নিজেই বলেছেন। এক ব্যাধের শরাঘাতে নিহত ক্রৌঞ্চের বিরহে ক্রৌঞ্চবধূর করুণ ক্রন্দন ঋষি বাল্মীকির হৃদয়কে বিদীর্ণ করে কন্ঠ থেকে বেরিয়ে এল তীব্র অভিশাপবাণী –
মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতীঃ সমাঃ।
যৎ ক্রৌঞ্চমিথুনাদেকমবধীঃ কামমোহিতম্ ।।
ঋষি কবির গভীর শোক পরিণত হল শ্লোকে। “কিমিদং ব্যাহৃতং ময়া ?” নিজের উচ্চারণে নিজেই বিস্ময়ে অভিভূত হন। ঋষি বাল্মীকির এই ছন্দোবদ্ধ শ্লোক আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হল। সেই ক্ষণে স্বর্গ থেকে নেমে এলেন ব্রহ্মা ও নারদ। ব্রহ্মার নির্দেশে ও নারদের উপদেশে অনুষ্টুপ ছন্দে রচিত হল “রামায়ণ” মহাকাব্য। রামায়ণ সাতটি কাণ্ডে বিভক্ত। বালকাণ্ড বা আদিকাণ্ড, অযোধ্যাকাণ্ড, অরণ্যকাণ্ড, কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড, সুন্দরকাণ্ড, যুদ্ধকাণ্ড ও উত্তরকাণ্ড।
আদি কবি বাল্মীকি রচিত রামায়ণ সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
রামায়ণ | রামায়ণ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য |
রচয়িতা | আদিকবি বাল্মীকি |
কান্ড সংখ্যা | সাতটি বাল, অযোধ্যা, অরণ্য, কিষ্কিন্ধ্যা, সুন্দর, লঙ্কা ও উত্তর কান্ড |
অধ্যায় সংখ্যা | পাঁচশত |
শ্লোক সংখ্যা | চব্বিশ হাজার |
ছন্দ | অনুষ্টুপ |
মূলরস | করুণ |
রামায়ণ সম্পর্কে প্রবন্ধ
রামায়ণ একটি ধর্মশাস্ত্র। এই কাব্যের প্রবন্ধ লিখতে হলে কয়েকটি বিষয় আলোচনা করতে হবে। যেমন রামায়ণের রচয়িতা, রচনাকাল, কান্ডের ক্রম অনুসারে রামায়ণের বিষয়বস্তু এবং সমালোচনা।
রামায়ণের বিষয়বস্তু
রামায়ণ সাতটি কাণ্ডে বিভক্ত। বালকাণ্ড, অযোধ্যাকাণ্ড, অরণ্যকাণ্ড, কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড, সুন্দরকাণ্ড, যুদ্ধকাণ্ড ও উত্তরকাণ্ড। নিম্নে কান্ডের ক্রম অনুসারে বিষয়বস্তু বর্ণিত হল।
বালকাণ্ড:- বালকাণ্ড বা আদিকাণ্ডে আছে রামায়ণ-রচনার সূচনা। রামচন্দ্রের জন্ম এবং বাল্যকালের বিবরণও সেখানে দৃষ্ট হয়। ইক্ষ্বাকুকুলের অযোধ্যারাজ দশরথ দেবতার বরে লাভ করেন চারটি পুত্ররত্ন-রাম, ভরত, লক্ষ্মণ, ও শত্রুঘ্ন। অল্পকাল মধ্যেই রাজকুমারগণ শস্ত্র ও শাস্ত্রে পারদর্শী হলেন। বিশ্বামিত্র রাম ও লক্ষ্মণকে নিয়ে গেলেন যজ্ঞবিঘ্নকারী রাক্ষসদিগকে বধ করবার জন্য। পরে জনকের রাজসভায় হরধনু ভঙ্গ করে রামচন্দ্র জনকতনয়া সীতাকে বিবাহ করেন।
অযোধ্যাকাণ্ড:- অযোধ্যাকাণ্ডে দেখতে পাই রামচন্দ্রের যৌবরাজ্যে অভিষেকের আয়োজন আসন্ন।
এমন সময় দাসী মন্থরার পরামর্শে দশরথের দ্বিতীয়া পত্নী কৈকেয়ী রাজার নিকট পূর্বপ্রতিশ্রুত দুই বর চাইলেন। একটিতে রামের চৌদ্দ বৎসর বনবাস এবং আর একটিতে কৈকেয়ীর পুত্র ভরতের রাজ্যাভিষেক। রামচন্দ্র সুখদুঃখে নির্দ্বন্দ্ব। নির্বিচারে পিতার আদেশ পালনই তাঁহার ধর্ম। তিনি কৈকেয়ীর প্রদত্ত বল্কল পরে দণ্ডকারণ্যের গহন বনে যাত্রা করলেন। কোন চিত্তবিকার লক্ষিত হল না। সঙ্গে চললেন জ্যেষ্ঠের অনুগামী লক্ষ্মণ ও সহধর্মচারিণী পতিব্রতা সীতা। দশরথ শোকে ও দুঃখে মৃত্যুবরণ করলেন। ভরত মাতুলালয় হতে ফিরে এসে চিত্রকূট পর্বতে গিয়ে রামচন্দ্রকে ফিরিয়ে আনবার জন্য কত মিনতি করলেন। কিন্তু রামের সঙ্কল্প অটল। তিনি ভরতের হাতে তাঁর পাদুকা তুলে দিয়ে তাকে ফিরে যেতে বাধ্য করলেন। ত্যাগী রাজকুমার ভরত জোষ্ঠের পাদুকার উপর ছত্র ধারণ করে নন্দিগ্রামে ভৃত্যের মত রাজ্য পালন করতে লাগলেন।
অরণ্যকাণ্ড:- অরণ্যকাণ্ডে বিবৃত হয় দণ্ডকারণ্যের মুনিগণের অনুরোধে রামচন্দ্র কর্তৃক অগণিত রাক্ষসবধের ঘটনা। লক্ষ্মণ কর্তৃক লক্ষাধিরাজ রাবণের ভগিনী শূর্পনখার নাসাকর্ণচ্ছেদের ঘটনায় রাবণ ক্রোধোন্মত্ত হন। তিনি মারীচের সাহায্যে মায়াজাল সৃষ্টি করে ব্রাহ্মণ অতিথির বেশে পঞ্চবটী হতে সীতাকে অপহরণ করেন। রাম ও লক্ষ্মণ সীতাশূন্য গৃহে ফিরে শোকোন্মত্ত হলেন। পঞ্চবটীবনও যেন অবনত শাখায় কাঁদছিল। গিরিনদী- কান্তারে দুই ভাই ব্যাকুলভাবে সীতাকে খুঁজলেন। মুমূর্ষু জটায়ু রাবণ কর্তৃক সীতাহরণের কথা জানালেন।
কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড:- কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ডে দক্ষিণাপথে যাত্রা। কিষ্কিন্ধ্যায় সুগ্রীবের সঙ্গে রামচন্দ্রের মৈত্রী স্থাপিত হল। বালিবধের পর সুগ্রীব সিংহাসনে অভিষিক্ত হলেন। সুগ্রীবের আদেশে হনুমান সীতার খোঁজে বেরিয়ে গেলেন।
সুন্দরকাণ্ড:- সুন্দরকাণ্ডে দেখি হনুমান সমুদ্র উত্তীর্ণ হয়ে লঙ্কায় অশোকবনে সীতার সঙ্গে মিলিত হন। সেখানে রামচন্দ্রের দেওয়া অভিজ্ঞান (স্মারক অঙ্গুরীয়) তিনি দেখালেন। হনুমান রাবণকে রামচন্দ্রের বীর্যবত্তার কথা বলে সীতা প্রত্যর্পণের উপদেশ দেন। মদগর্বিত রাবণ তাতে ক্রুদ্ধই হন। হনুমান ফিরে আসেন। এই কাণ্ডে হনুমান লঙ্কাপুরীর সমৃদ্ধির যে বর্ণনা দিয়েছেন, সেই বর্ণনা চিত্রকল্পের মত সুন্দর। অনেকে বলেন এই কারণেই কাণ্ডটির নাম সুন্দরকাণ্ড।
যুদ্ধকাণ্ড :- যুদ্ধকাণ্ড বা লঙ্কাকাণ্ডে প্রথমেই দেখি সুগ্রীবসৈন্য সহ রামচন্দ্র সমুদ্রকুলে উপনীত। অগণিত শিলা নিক্ষেপে সমুদ্রের উপর সেতুবন্ধন হল। লঙ্কায় উপস্থিত হলে রাবণের ভ্রাতা ধার্মিক বিভীষণ রামের সঙ্গে যুক্ত হলেন। ভীষণ যুদ্ধে রাবণ সবংশে নিহত হলেন। সীতাদেবী তাঁর পতিদেবতার সম্মুখে উপস্থিত হলেন। কিন্তু কুলের অপবাদভয়ে রামচন্দ্র তাঁকে গ্রহণ করতে অসম্মতি জানালেন। সীতা সাশ্রুনেত্রে লক্ষ্মণকে চিতা সাজাতে বললেন এবং সেই চিতার অগ্নিতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। অগ্নিদেব তাঁকে ফিরিয়ে দিলেন। রামচন্দ্র সীতা ও লক্ষ্মণ প্রভৃতি সহ অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন করলেন। তথায় রামরাজ্য প্রতিষ্ঠিত হল। রামরাজ্য ধর্মরাজ্যের নামান্তর। এর পরেই রামায়ণপাঠের ফলশ্রুতি বর্ণনা আছে।
উত্তরকাণ্ড :- উত্তরকাণ্ডে প্রথমাংশে নানা প্রাচীন গল্পকাহিনীর সমাবেশ দেখা যায়। রামসীতার পরবর্তী জীবনের ঘটনা অবশ্য খুবই অল্প, কিন্তু তার করুণ আবেদন কম নয়। রাজধানীতে প্রজার মধ্যে সীতার চরিত্র সম্বন্ধে অপবাদের গুঞ্জন উঠে। সীতা শুদ্ধিমতী জেনেও রামচন্দ্র প্রজার কথায় তাঁকে ত্যাগ করলেন। তিনি মনে করেন প্রজাগণের কাছে রাজার আচরণ হবে সকল সন্দেহের, সকল অপবাদের ঊর্ধ্বে। লক্ষ্মণ সীতাদেবীকে বাল্মীকির আশ্রমে রেখে আসেন। সেখানে লব কুশ দুই যমজ পুত্রের জন্ম হয়। বাল্মীকি তাদেরকে রামায়ণ গান শিক্ষা দেন। এদিকে স্বর্ণসীতা প্রতিষ্ঠিত করে রামচন্দ্র অশ্বমেধযজ্ঞের আয়োজন করেন। বাল্মীকি লবকুশকে রামায়ণ গানের জন্য তথায় পাঠালেন এবং সীতার প্রত্যাবর্তন ঘটালেন। কিন্তু সেখানে পুনরায় বিশুদ্ধির প্রমাণ দিতে গিয়া অশ্রুমতী জানকী শপথবাক্যে ধরিত্রীর অঙ্কাশ্রয় প্রার্থনা করলেন। ধরণী দ্বিধা হল। সীতাদেবী তাতে প্রবেশ করলেন। চারিদিকে নিদারুণ হাহাকার পড়ে গেল।
(অসম্পূর্ণ)
ধন্যবাদ
মহাভারতের ছোট প্রশ্নোত্তর তথা আমাদের www.sanskritruprekha.com সাইট Visit করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সংস্কৃতের আরো অনেক তথ্য পাওয়ার জন্য Home Page আসুন। Home Page পৌঁছানোর জন্য CLICK HERE👈
আমদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে CLICK HERE 👈