বরাহমিহির

এই অধ্যায়ে আমরা জানব বরাহমিহির । জ্যোতির্বিদ্যা ও গণিতচর্চায় বরাহমিহিরের অবদান আলোচিত হল। একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণী , স্নাতক , স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী ছাড়াও WBSSC এর SLST পরীক্ষার্থীদের আর্যভট্ট সম্পর্কে যথাযথ ধারণা থাকতে হবে । উচ্চমাধ্যমিক 2025 পরীক্ষার্থীদের Suggestive প্রশ্নগুলির মধ্যে এটি গুরুত্বপূর্ণ।

সংষ্কৃত একটি প্রাচীন ভাষা। এই ভাষাতে প্রাচীন ভারতীয় মনীষার সর্ববিধ অনুশীলনের আশ্চর্য প্রকাশ বৈদিক যুগ থেকে। এর মধ্যে যেমন আধছে সাহিত্যের বিচিত্র মার্গচারণা তেমনি আছে ধর্ম, দর্শন, রাজনীতিশাস্ত্র সামাজিক ও পারিবারিক জীবনচর্চার অনুশাসনমূলক সাহিত্য। বিজ্ঞান, কারিগরিরি চিকিৎসাবিদ্যা, ভাস্কর্য, চিত্র, সঙ্গীত, নৃত্য ইত্যাদি বিষয়ে অজস্র রচিত গ্রন্থ আছে। যা আলোচনা ও যথার্থ সম্পাদনার অভাবে সাধারণ জনেদের কাছে সংস্কৃত সাহিত্য যেন প্রাচীন সাহিত্য ও ধর্মশাস্ত্র রূপেই বেশি পরিচিত।

বরাহমিহির সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

বরাহমিহিরকিছু কথা
জন্ম505 খ্রিস্টাব্দ
মৃত্যু587 খ্রিস্টাব্দ
পৃষ্টপোষক রাজাবিক্রমাদিত্য
গুরুঅদিত্যদাস
জাতিশক

জ্যোতির্বিদ্যা ও গণিতচর্চায় বরাহমিহিরের অবদান

ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে আর্যভট্টের পর বরাহমিহিরের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান ও গণিতশাস্ত্রের অন্যতম প্রখ্যাত আচার্য হলেন বরাহমিহির।

বরাহমিহিরের সময়কাল

বরাহমিহির প্রাচীন ভারতের গুপ্তসাম্রাজ্যের সমসাময়িক। তিনি 505 খ্রিস্টাব্দে জন্মেছিলেন এবং মারা গিয়েছিলেন 587 খ্রিস্টাব্দে। তিনি কাম্পিল্য অর্থাৎ বর্তমান জলন্ধর জেলার কাল্পী নামক স্থানে অর্থাৎ অবন্তী দেশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পরে উজ্জয়িনীতে তিনি বসবাস করতেন। অবন্তী বলতে মোটামুটিভাবে আধুনিক মালব প্রদেশকে চিহ্নিত করা হয়। বরাহমিহিরের বাবা আদিত্যদাস নিজেও একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী ছিলেন। জানা যায়, বরাহমিহির মালবের রাজা বিক্রমাদিত্য যশোধর্মার নবরত্নসভার এক রত্ন ছিলেন। তাঁর গুরুর নাম অদিত্যদাস।

বরাহমিহির রচিত গ্রন্থসমূহ

বরাহমিহির অনেকগুলি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তবে তাঁর পঞ্চসিদ্ধান্তিকা ও বৃহৎসংহিতাই প্রধান। জ্যোতিষশাস্ত্রের উপর তাঁর লেখা গ্রন্থগুলো হল- বৃহজ্জাতক, লঘুজাতক প্রভৃতি।

পঞ্চসিদ্ধান্তিকা

এটি একটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের গ্রন্থ। গ্রন্থটিতে জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত পাঁচটি পূর্ববর্তী সিদ্ধান্তের সংক্ষেপে বিবরণ দেওয়া হয়েছে। সেই পাঁচটি সিদ্ধান্ত হল-

  • 1) পৈতামহসিদ্ধান্ত,
  • 2) বাসিষ্ঠসিদ্ধান্ত,
  • 3) সৌরসিদ্ধান্ত বা সূর্যসিদ্ধান্ত,
  • 4) রোমকসিদ্ধান্ত এবং
  • 5) পৌলিশসিদ্ধান্ত।

এই পাঁচটি সিদ্ধান্ত গ্রন্থকে একত্রে ‘পঞ্চসিদ্ধান্তিকা’ বলা হয়।

পৈতামহসিদ্ধান্ত:- পৈতামহসিদ্ধান্ত নামক প্রথম গ্রন্থটিতে মোট বারোটি অধ্যায় এবং পাঁচটি সূত্র আছে। এখানে প্রতিটি বছরকে 365 দিনে এবং প্রতিটি যুগকে 60টি সৌরমাসে ও 61টি চন্দ্রমাসে বিভক্ত করা হয়েছে। দিনরাত্রির হ্রাসবৃদ্ধির কথাও এখানে উল্লিখিত হয়েছে।

বাসিষ্ঠসিদ্ধান্ত:- বাসিষ্ঠসিদ্ধান্তে বারোটি শ্লোক আছে। চন্দ্রের অবস্থান নির্ণয়ের নিয়মাবলী, দিবা-রাত্রির পরিমাণ নির্ণয়ের সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি, চন্দ্র কোন নক্ষত্রের পটভূমিতে অবস্থিত তা নির্ণয়ের সূত্র এখানে উল্লিখিত হয়েছে।

সৌরসিদ্ধান্ত:- ‘পঞ্চসিদ্ধান্তিকা’-র শেষাংশ ‘সৌরসিদ্ধান্ত’ সমস্ত সিদ্ধান্ত গ্রন্থের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। এখানে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সময়কাল নির্ণয়ের বিভিন্ন গণনা পদ্ধতি আছে। সময় পরিমাপ ও ছায়ার দৈর্ঘ্য নির্ণয় করার জন্য এখানে শঙ্কুযন্ত্র, গোলযন্ত্র, জলযন্ত্র, চক্রযন্ত্র প্রভৃতি ব্যবহারের উল্লেখ পাওয়া যায়।

রোমকসিদ্ধান্ত:- রোমকসিদ্ধান্ত প্রধানত পাশ্চাত্য গণিত জ্যোতিষের সারসঙ্কলন। গ্রিক জ্যোতিষী হিপার্কাসের সময় (খ্রি. পৃ. 150 অব্দ) থেকে টলেমীর গণিত জ্যোতিষ রচনাকালের (150 খ্রিঃ) অন্তবর্তীকালে গ্রিক এবং মিশরীয় গণিত জ্যোতিষের কিছু গণনার সূত্র সংগ্রহ করে এটি রচিত। বরাহমিহির এখানে পাশ্চাত্য জ্যোতির্বিজ্ঞানের সময়চক্রকে ভারতীয় পদ্ধতিতে বিন্যস্ত করেছেন।

পৌলিশসিদ্ধান্ত:- পৌলিশসিদ্ধান্ত হলো ‘পঞ্চসিদ্ধান্তিকা’র প্রথম অধ্যায়। এখানে দিনগণনা গণনার পদ্ধতি, অধিমাস ও তিথি বলয়ের সংখ্যা নির্ণয়, রবিপথ ও চান্দ্রপথের ভিন্নতা, সূর্যের বার্ষিক পথ ও চান্দ্রপথের মধ্যে কৌণিক ব্যবধান প্রভৃতি বিষয় আলোচিত হয়েছে। তবে পৌলিশসিদ্ধান্ত নামে প্রাচীন ভারতে একাধিক গ্রন্থের উল্লেখ আছে।

বৃহৎসংহিতা

বরাহমিহিরের রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে বৃহৎসংহিতা সবচেয়ে বড়ো। বৃহৎসংহিতা মূলত ফলিত জ্যোতিষের গ্রন্থ। এটি মূলত শ্লোকে রচিত। তবে দ্বিতীয় অধ্যায়ে কিছু গদ্য রচনা দেখতে পাওয়া যায়। গ্রন্থটিতে 106 টি অধ্যায় আছে। বিষয়-বৈচিত্র্যে গ্রন্থটি বিশ্বকোষ-চরিত্রের। মানুষের আগ্রহের বিভিন্ন বিষয় যেমন, গ্রহের গতি, গ্রহণ, বৃষ্টি, মেঘ, শস্যবৃদ্ধি, স্থাপত্য, বাস্তুবিদ্যা, গন্ধদ্রব্য তৈরি করা, স্ত্রী-পুরুষের লক্ষণ, পারিবারিক সম্পর্ক, রত্ন, মুক্তো, উৎসব প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা আছে বৃহৎসংহিতাতে। এই গ্রন্থে গর্গ, পরাশর, কশ্যপ, ভৃগু, বশিষ্ঠ প্রমুখ শাস্ত্রকারদের নাম ও মতামত উল্লিখিত হয়েছে। এই গ্রন্থের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলি হল বাস্তুবিদ্যা অধ্যায়, প্রতিমালক্ষণ অধ্যায়, বৃক্ষায়ুর্বেদ অধ্যায়, গন্ধযুক্তি অধ্যায় প্রভৃতি।

মূল্যায়ন

বরাহমিহিরকে আধুনিক ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক বলা হয়। বরাহমিহির অনেক অধ্যায়ের আলোচিত বিষয়গুলি তাঁর পূবাচার্যদের গ্রন্থ থেকে সংগ্রহ করেছিলেন। তাই উপসংহার অধ্যায়ে তিনি বলেছেন- “শাস্ত্রমুপসংগৃহীতং নমোহস্তু পূর্বপ্রণেতৃভ্যঃ”। আমি শাস্ত্রগুলিকে সংগ্রহ করলাম। তাই পূর্বাচার্যদের প্রণাম।

“জ্যোতিঃশাস্ত্রসমুদ্রং প্রমথ্য মতি-মন্দরাদ্রিণা ময়া।

লোকস্যালোককরঃ শাস্ত্রশশাঙ্কঃ সমুৎক্ষিপ্তঃ।।“

অর্থাৎ আমি জ্যোতিঃশাস্ত্ররূপ সমুদ্রে বুদ্ধিরূপ মন্দর পর্বত দিয়ে মন্থন করে লোকের আলোককারী শাস্ত্ররূপ চন্দ্রকে তুলে এনেছি।

ধন্যবাদ

আমাদের www.sanskritruprekha.com সাইট Visit করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সংস্কৃতের আরো অনেক তথ্য পাওয়ার জন্য Home Page আসুন। Home Page পৌঁছানোর জন্য CLICK HERE👈

Leave a Comment