সংস্কৃত আত্মনেপদ বিধান

সংস্কৃত ভাষায় কিছু ধাতু পরস্মৈপদী, কিছু ধাতু আত্মনেপদী আবার কিছু ধাতু আছে উভয়পদী। এখানে সংস্কৃত আত্মনেপদ বিধান নিয়ে আলোচনা করবো। সংস্কৃত আত্মনেপদ বিধান এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়।

সংস্কৃত ভাষায় কতকগুলি ধাতু পরস্মৈপদী, কতকগুলি আত্মনেপদী, আবার কতকগুলি উভয়পদী। পাণিনির ধাতুপাঠে অর্থাৎ ধাতুর তালিকায় বিশেষ বিশেষ সংকেতের সাহায্যে কোন্ ধাতু কোন্ পদী তা সাধারণভাবে নির্দেশ করা আছে। এছাড়া কিছু বিশেষ নিয়মও আছে। যেমন-যে সমস্ত ধাতু বা ক্রিয়ার ফল অন্য ব্যক্তি পায়, তাদের পরস্মৈপদী করা হয়। আবার, যে সমস্ত ধাতু বা ক্রিয়ার ফল ব্যক্তি নিজে লাভ করে, তাদের আত্মনেপদী করা হয়। উভয়পদী ধাতুর ক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজে এবং অন্য লোকে একইসাথে ক্রিয়ার ফল লাভ করে। যজ্ একটি উভয়পদী ধাতু। দেখা যায় যে, অনেক সময় উপসর্গ যোগে বা কোনো বিশেষ অর্থে আত্মনেপদী ধাতুর পরে পরস্মৈপদ বিধান হয় বা পরস্মৈপদী ধাতুর পরে আত্মনেপদ বিধান হয়।

সংস্কৃত আত্মনেপদ বিধান কাকে বলে

ভিন্ন ভিন্ন অর্থে অথবা উপসর্গ যোগে অথবা নির্দিষ্ট অবস্থা বিশেষে পরস্মৈপদী ও উভয়পদী ধাতুর আত্মনেপদ রুপ হওয়ার বিধিকে আত্মনেপদ বিধান বলে।

আত্মনেপদবিধান

(1) ভাবকর্মণোঃ অর্থাৎ ভাববাচ্যে ও কর্মবাচ্যে ধাতুর উত্তর আত্মনেপদীহয়। যথা

  • ময়া ভূয়তে।
  • তেন চন্দ্ৰঃ দৃশ্যতে।
  • ভৃত্যন কার্যং ক্রিয়তে।

2) স্বরিতঞিতঃ কর্ত্রভিপ্রায়ে ক্রিয়াফলে অর্থাৎ উভয়পদী ধাতুর ক্ষেত্রে নিজের জন্য ক্রিয়ানুষ্ঠানে আত্মনেপদী এবং পরের জন্য অনুষ্ঠানে পরস্মৈপদী হয়। যথা

  • বিপ্রঃ যজতি (পরের জন্য)।
  • বিপ্রঃ যজতে (নিজের জন্য)।

3) পরিব্যবেভ্যঃ ক্রিয়ঃ অর্থাৎ পরি, বি ও অব পূর্বক ক্রী ধাতু আত্মনেপদী হয়। যথা

  • স পরিক্রীণীতে, অবক্রীণীতে বা।
  • স পুস্তকং বিক্ৰীণীতে।

4) বিপরাভ্যাং জেঃ অর্থাৎ বি বা পরা পূর্বক জি ধাতু আত্মনেপদী হয়। যথা

  • বিজয়তে মহারাজঃ শূদ্রকঃ
  • রাজা বিজয়তে।
  • স পরাজয়তে শত্রুন্।
  • শিষ্য পাঠাৎ পরাজয়তে।

5) আঙো দোহনাস্যহিরণে অর্থাৎ দা ধাতু উভয়পদী। কিন্তু আ-পূর্বক দা ধাতু আত্মনেপদী হয়। যথা

  • ছাত্রঃ আচার্যাৎ বিদ্যাম্ আদত্তে (অর্থাৎ গ্রহণ করে)।
  • অহং ধনং আদাসো।
  • হংস হি ক্ষীরমাদত্তে তন্মিশ্রা বর্জয়ত্যপঃ।

কিন্তু মুখব্যাদান অথবা নিজের অঙ্গ বিস্তার অর্থে পরীষ্মেপদী হয়। যথা— মুখং ব্যাদদাতি সিংহঃ। নদী কুলং ব্যাদদাতি।

আবার পরের অঙ্গ বিস্তার ক্ষেত্রে আত্মনেপদী হতে বাধা নেই । বালকস্য মুখ্ং ব্যাদত্তে।

6) সমোহকূজনে অর্থাৎ কূজন অর্থাৎ শব্দ করা ভিন্ন অর্থে সম-ক্রীড়্ ধাতু আত্মনেপদী হয়। যথা

  • বালকাঃ সংক্রীড়তে (খেলা করে)।
  • কিন্তু, সংক্রীড়তি পক্ষী (শব্দ করে)।
  • সংক্রীড়তি চক্রম্।

কিন্তু ক্রীড়োঽনুসংপরিভ্যশ্চ সূত্র অনুসারে অনু, সম্, পরি বা আঙু পূর্বক ক্রীড়্ ধাতু আত্মনেপদী। যথা

  • বালকাঃ অনুক্রীড়ন্তে সংক্রীড়ন্তে পরিক্রীড়ন্তে আক্রীড়ন্তে বা ।

7) উদোহনুর্ধ্বকর্মণি অর্থাৎ উর্ধ্বচেষ্টা ভিন্ন অর্থে উৎ পূর্বক স্থা ধাতু আত্মনেপদী হয়। কিন্তু উঠা অর্থে পরস্মৈপদী হয়। যেমন

  • যোগী মুক্তৌ উত্তষ্ঠতে ( মুক্তি বিষয়ে চেষ্টা অর্থে)।
  • রাজা আসনাৎ উত্তিষ্ঠতি (উঠছে)।

8) সমবপ্রবিভ্যঃ স্থঃ অর্থাৎ সম্, অব, প্র, বি উপসর্গ যোগে স্থা ধাতু আত্মনেপদী হয়। যেমন

  • শঠস্য বাক্যে ন কোহপি সন্তিষ্ঠতে।
  • অলসা এব গৃহে অবতিষ্ঠন্তে।
  • রামঃ বনং প্রতস্থে।
  • ধনিনঃ দরিদ্রেভ্যঃ বিতিষ্ঠন্তে।

আবার প্রকাশনস্থেয়াখ্যয়োশ্চ অর্থাৎ মনের ভাব প্রকাশ করা অর্থে স্থা ধাতু আত্মনেপদী হয়। যেমন
গোপী কৃষ্ণায় তিষ্ঠতে।

9) উপান্মন্ত্রকরণে অর্থাৎ মন্ত্র দ্বারা স্তুতি করা অর্থে উপ পূর্বক স্থা ধাতু আত্মনেপদী হয়। যেমন—

  • গায়ত্র্যা সূর্যমুপতিষ্ঠতে।
  • দ্বিজা মন্ত্রৈঃ সবিতারং সন্ধ্যাত্রয়ম্ উপতিষ্ঠন্তে।

মন্ত্র দ্বারা স্তুতি না করা বোঝালে আত্মনেপদ হয় না। যথা— নারী ভর্তারম্ উপতিষ্ঠতি যৌবনেন।

10) উপাদ্দেবপূজা-সঙ্গতিকরণ-মিত্রকরণ-পথিষু অর্থাৎ দেবপূজা, মিলন ও বন্ধুত্ব করা অর্থে এবং ‘পথ’ শব্দ কর্তা হলে উপ-পূর্বক স্থা ধাতুর আত্মনেপদী হয়। যেমন—

  • বিপ্রঃ নারায়ণম্ উপতিষ্ঠতে (পূজা করছে)।
  • গঙ্গা, যমুনাম্ উপতিষ্ঠতে (মিলিত হচ্ছে)।
  • সাধুঃ সাধূন্ উপতিষ্ঠতে (বন্ধুত্ব করছে)।
  • অয়ং পন্থাঃ বারাণসীম্ উপতিষ্ঠতে (গেছে)।

11) উদ্‌বিভ্যাং তপঃ অর্থাৎ নিজের অঙ্গ কর্ম হলে বা বাক্যে কোনো কর্ম না থাকলে উৎ-পূর্বক ও বি-পূর্বক তপ্ ধাতুর আত্মনেপদ হয়। যেমন—
নিজের অঙ্গ কর্ম হলে—সঃ পাণিম্ উত্তপতে/বিতপতে (গরম করছে)। কর্ম না থাকলে—সূর্যঃ উত্তপতে/বিতপতে (দীপ্ত হচ্ছে)।

12) আঙো যম-হনঃ অর্থাৎ নিজের অঙ্গ কর্ম হলে বা বাক্যে কোনো কর্ম না থাকলে আ-পূর্বক যম্ ও হন্ ধাতু আত্মনেপদী হয়। যেমন—

  • নিজের অঙ্গ কর্ম হলে—বালকঃ হস্তম্ আযচ্ছতে (এগিয়ে দিচ্ছে)।
  • বৃদ্ধঃ স্বমস্তকম্ আহতে (আঘাত করছে)।
  • কর্ম না থাকলে—বৃক্ষ আযচ্ছতে (বিস্তীর্ণ হচ্ছে)
  • শিশুঃ আহতে (আঘাত করছে)।

13) স্পর্ধায়ামাঙঃ অর্থাৎ স্পর্ধাপূর্বক আহ্বান বোঝালে আ-পূর্বক হ্বে ধাতুর আত্মনেপদ হয়। কিন্তু সাধারণ আহ্বানে পরস্মৈপদী হয়। যেমন—

  • স্পর্ধাপূর্বক আহ্বানে— মল্লো মল্লম্ আহ্বয়তে (যুদ্ধ করতে ডাকছে)।
  • সাধারণ আহ্বানে— পিতা পুত্রম্ আহ্বয়তি (ডাকছে)।

14) আঙ্ উদ্‌গমনে অর্থাৎ জ্যোতিষ্ক পদার্থের অর্থাৎ চন্দ্র, সূর্য ইত্যাদির ঊর্ধ্বগমন বোঝালে আ-পূর্বক ক্রম্ ধাতুর আত্মনেপদ হয়। জ্যোতিষ্ক ভিন্ন অন্য পদার্থ বোঝালে পরস্মৈপদ হয়। যেমন—

  • জ্যোতিষ্ক পদার্থের ঊর্ধ্বগমন— রবিঃ আক্রমতে (উদিত হচ্ছে)।
  • জ্যোতিষ্ক ভিন্ন পদার্থের ঊর্ধ্বগমন— ধূমঃ হর্ম্যতলাৎ আক্রামতি।

15) কর্তৃস্থে চাশরীরে কর্মণি অর্থাৎ কর্ম কর্তার মধ্যস্থিত হলে এবং আকারবিহীন হলে বি-পূর্বক নী ধাতুর আত্মনেপদ হয়। কিন্তু অন্যরকম হলে পরস্মৈপদী হয়। যেমন—

  • জ্ঞানী ক্রোধং বিনয়তে (সম্বরণ করছেন)।
  • পিতা পুত্রস্য ক্রোধং বিনয়তি (ক্রোধটি কর্তার মধ্যে নেই, তাই আত্মনেপদ হয়নি)।

16) বেঃ পাদবিহরণে অর্থাৎ পাদবিহরণ মানে পা ফেলা অর্থে বি-পূর্বক ক্রম্ ধাতুর আত্মনেপদ হয়। অপর কোনো অর্থে আত্মনেপদ হয় না, পরস্মৈপদী হয়। যেমন—

  • পা ফেলা অর্থে— অশ্বঃ বিক্রমতে (পা ফেলেছে)।
  • অন্য অর্থে— সন্ধিঃ বিক্রামতি (ভেঙে যাচ্ছে)।

17) ভী-স্ম্যো-হেতুর্ভয়ে অর্থাৎ প্রযোজক কর্তা যদি ভয় ও বিস্ময়ের কারণ হয়, তাহলে ণিজন্ত ভী ও স্মি ধাতু আত্মনেপদী হয়। যেমন—

  • সর্পঃ শিশুং ভীষয়তে।
  • জটিলঃ শিশুং বিস্মাপয়তি।

18) ভুজহনবনে অর্থাৎ অবন মানে রক্ষা করা। রক্ষা বা পালন ভিন্ন অর্থে ভুজ্ ধাতু আত্মনেপদী হয়। কিন্তু পালন অর্থে পরস্মৈপদী হয়। যেমন—

  • পালন ভিন্ন অর্থে— বালিকা অন্নং ভুঙ্ক্তে।
  • পালন অর্থে— রাজা রাজ্যং ভুনক্তি।

19) জ্ঞা-শ্রু-স্মৃ-দৃশাং সনঃ অর্থাৎ সন্ প্রত্যয়ান্ত জ্ঞা, শ্রু, স্মৃ ও দৃশ্ ধাতুর উত্তর আত্মনেপদ হয়। যেমন—

  • ছাত্রঃ শিক্ষকং প্রশ্নং জিজ্ঞাসতে।
  • শিষ্যঃ গুরুং শুশ্রূষতে।
  • পুত্রঃ পিতরং সস্মূর্ষতে।
  • বালকঃ চন্দ্রং দিদৃক্ষতে।

20) অপহ্নবে জ্ঞঃ অর্থাৎ অস্বীকার করা অর্থে অপ পূর্বক জ্ঞা ধাতুর উত্তর আত্মনেপদ হয়। যেমন—

  • বালকঃ শতং অপজানীতে ( অস্বীকার করে)।

21) উদশ্চর সকর্মাৎ অর্থাৎ উৎ পূর্বক চর্ ধাতু সকর্মক হলে, তাতে আত্মনেপদ হয়। যেমন—

  • দুর্জনঃ ধর্মম্ উচ্চরতে (লঙ্ঘন করেছে)।
  • ছাত্রঃ গুরুবাক্যং উচ্চরতে (লঙ্ঘন করেছে)।

কিন্তু সকর্মক হলে আত্মনেপদী হয় না, পরস্মৈপদী হয়। যেমন—

  • গৃহাৎ ধূমঃ উচ্চরতি (উপরে উঠে)।

22) সমস্তৃতীয়াযুক্তাৎ অর্থাৎ করণকারকে তৃতীয়া বিভক্তি যুক্ত সম্ পূর্বক চর্ ধাতুর উত্তর আত্মনেপদ হয়। যেমন—

  • রাজা রথেন সঞ্চরতে (ভ্রমণ করছেন)।
  • ক্বচিৎ পথা সঞ্চরতে সুরানাম্।

কিন্তু করণকারকে তৃতীয়া বিভক্তি যুক্ত পদের যোগ না থাকলে আত্মনেপদ হয় না, পরস্মৈপদী হয়। যেমন—

  • পিতা পুত্রেন সঞ্চরতি।
  • রাজা উদ্যানে সঞ্চরতি।
  • সিংহঃ বনে সঞ্চরতি ।

23) উপাদ্ যমঃ স্বকরণে অর্থাৎ বিবাহ বা স্বীকার করা অর্থে উপ পূর্বক যম্ ধাতুর উত্তর আত্মনেপদ হয়। যেমন—

  • বরঃ কন্যাম্ উপযচ্ছতে।
  • রামঃ সীতাম্ উপযেমে।

24) প্রোপাভ্যাং সমর্থাভ্যাম্ অর্থাৎ আরম্ভ করা অর্থে প্র ও উপ পূর্বক ক্রম ধাতুর আত্মনেপদী হয়। যেমন—

  • ছাত্রঃ পঠিতুম্ উপক্রমতে (আরম্ভ করছে)।

কিন্তু আরম্ভ না বোঝালে আত্মনেপদ হয় না, পরস্মৈপদী হয়। যেমন—

  • স উপক্রামতি (দীক্ষাদান দ্বারা নিজেকে আচার্য্য করা)

25) বৃত্তি-সর্গ-তায়নেয়ুক্রমঃ অর্থাৎ অপ্রতিবন্ধ, উৎসাহ এবং বৃদ্ধি অর্থে ক্রম ধাতুর উত্তর আত্মনেপদী হয়। যেমন—

  • বৃত্তি— ধর্মশাস্ত্রে তস্য বুদ্ধি ক্রমতে (অপ্রতিহত হয়)।
  • সর্গ— ছাত্রঃ অধ্যয়নায় ক্রমতে (উৎসাহিত হচ্ছে)।
  • বৃদ্ধি— সতাং শ্রী ক্রমতে (বৃদ্ধি পাচ্ছে)।

আত্মনেপদ বিধান থেকে জিজ্ঞাস্য

সংস্কৃত আত্মনেপদ বিধান সংস্কৃত আত্মনেপদ বিধান সংস্কৃত আত্মনেপদ বিধান সংস্কৃত আত্মনেপদ বিধান সংস্কৃত আত্মনেপদ বিধান সংস্কৃত আত্মনেপদ বিধান সংস্কৃত আত্মনেপদ বিধান সংস্কৃত আত্মনেপদ বিধান।

1) আত্মনেপদ বিধান কী?

ভিন্ন ভিন্ন অর্থে অথবা উপসর্গ যোগে অথবা নির্দিষ্ট অবস্থা বিশেষে পরস্মৈপদী ও উভয়পদী ধাতুর আত্মনেপদ রুপ হওয়ার বিধিকে আত্মনেপদ বিধান বলে।।

2) অব- স্থা ধাতু কোন্ পদী হয়?

আত্মনেপদ ।

3) ক্রী ধাতু কখন আত্মনেপদ হয়?

পরি, বি ও অব পূর্বক ক্রী ধাতু আত্মনেপদী হয়।।

ধন্যবাদ

সংস্কৃত আত্মনেপদ বিধান তথা আমাদের www.sanskritruprekha.com সাইট Visit করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ🙏🙏🙏। সংস্কৃতের আরো অনেক তথ্য পাওয়ার জন্য Home Page আসুন। Home Page পৌঁছানোর জন্য CLICK HERE👈

আমদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে CLICK HERE 👈 

Leave a Comment