ঋতুচর্যা পাঠ্যাংশ

ঋতুচর্যা পদ্যাংশটি একাদশ শ্রেণীর SEMESTER – 2 পাঠ্য হিসেবে নির্দিষ্ট। ঋতুচর্যা পাঠ্যাংশ টি দেবনাগরী ও বাংলা হরফে নিচে দেওয়া হল। বাংলায় সহজ ও সাবলীল কথায় শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে অনুবাদ করা হয়েছে। এই পাঠ থেকে 3 টি 2 নম্বরের প্রশ্নের মধ্যে 2 টির (2 X 2 = 4) উত্তর করতে হবে। উত্তর করতে হবে সংস্কৃত, বাংলা, হিন্দি বা ইংরেজি ভাষায়।

প্রাচীনকাল থেকেই ভারতবর্ষে আয়ুর্বেদ চর্চা প্রচলিত হয়েছিল। আয়ুর্বেদশাস্ত্র পাঠ করলে আয়ু সম্পর্কে জানা যায়। আয়ুর্বেদশাস্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থগুলির মধ্যে অন্যতম হল চরকসংহিতা। চরকসংহিতা গদ্য ও পদ্যে রচিত চিকিৎসা বিষয়ক গ্রন্থ। এই গ্রন্থে বিভিন্ন রোগের বর্ণনা ও চিকিৎসা চিকিৎসাবিজ্ঞানের অন্য ধারা বহন করে , সেটি হল শল্যচিকিৎসার ধারা। চরকসংহিতা চিকিৎসা সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত বিদ্যমান সর্বাপেক্ষা প্রসিদ্ধ গ্রন্থ হলো চরকসংহিতা। চরকের নাম অনুসারে ‘চরকসংহিতা’ এরূপ নামকরণ হয়েছে বলে বোধ হয়। পন্ডিতেরা অনুমান করেন যে, উপলভ্যমান ‘চরকসংহিতা’ কোনো এক ব্যক্তির রচনা নয়। যাই হোক, স্বতন্ত্রভাবে আয়ুর্বেদের প্রথম যে গ্রন্থটি পাওয়া গেছে সেটা হল চরকসংহিতা। বলা হয়, মহর্ষি আত্রেয়ের শিষ্য অগ্নিবেশ প্রথম আয়ুর্বেদ শাস্ত্র বিস্তৃতভাবে রচনা করেন। কিন্তু দীর্ঘকাল চর্চার অভাবে সেই গ্রন্থ বহুলাংশে নষ্ট হয়ে যায়। তারপর চরক সেই লুপ্তপ্রায় অগ্নিবেশের শাস্ত্রের সংস্কার সাধন করেন। এটিই চরকসংহিতা নামে আমাদের কাছে উপলব্ধ।

এই পাঠ্যাংশটি মহর্ষি অগ্নিবেশ রচিত এবং মহর্ষি চরকের প্রতি-সংস্কৃত ‘চরকসংহিতা’ নামক আয়ুর্বেদিক পাঠ থেকে সংকলিত। এই গ্রন্থের “তস্যাশিতীয়ঃ” নামক ষষ্ঠ অধ্যায়ে বিভিন্ন ঋতুতে খাদ্যাভ্যাস সংক্রান্ত নিয়মাবলি ব্যাখ্যা করা হয়েছে অর্থাৎ যে ঋতুতে যা সেব্য বা অসেব্য, তা কারণসহ বর্ণিত হয়েছে এবং স্বাস্থ্যের বিষয়ও বলা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি তার দৈনন্দিন জীবনচর্যায় কিছু পরিবর্তন করে, দীর্ঘ এবং সুস্থ জীবন যাপন করতে সক্ষম হয়। ঋতুচর্যা পদ্যাংশের শ্লোকসমূহে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত এই ছয় ঋতুতে একজন ব্যক্তির কী ধরনের খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা উচিত তা আলোচনা করা হয়েছে। ঋতু অনুসারে ভাগ করলে সম্বৎসরকে ছয় ঋতুতে ভাগ করা যায়। তারমধ্যে শিশির, বসন্ত ও গ্রীষ্ম – এই তিন ঋতু সূর্যের উত্তরায়ণ ও আদনাকাল এবং বর্ষা, শরৎ ও হেমন্ত – এই তিন ঋতু সূর্যের দক্ষিণায়ণ ও বিসর্গকাল। আদানকালে সূর্য পৃথিবী থেকে রসাদি গ্রহণ করে ও বায়ু অতি রুক্ষভাবে প্রবাহিত হয় এবং বিসর্গকালে সূর্য পৃথিবীতে রসাদি বিসর্জন করে ও বায়ু নাতিরুক্ষভাবে প্রবাহিত হয়।

কোন্ ঋতুতে কোন্ খাবার খেলে বা কেমন জীবনচর্যা অভ্যাস করলে আমরা সুস্থ ও দীর্ঘজীবন লাভ করতে পারি টা জানা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আর এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলি ঋতুচর্যা নামক পাঠ্যাংশে আলোচনা করা হয়েছে।

ঋতুচর্যা পাঠ্যাংশ

ঋতুচর্যা পাঠ্যাংশটি বিষয়ে একনজরে কয়েকটি তথ্য।

পাঠ্যাংশের নামঋতুচর্যা
রচনামহর্ষি অগ্নিবেশ
উৎস গ্রন্থ চরকসংহিতা
অধ্যায় ষষ্ঠ

ঋতুচর্যা (দেবনাগরী ও বাংলা হরফ এবং অনুবাদ)

ঋতুচর্যা পাঠ্যাংশটির শ্লোকগুলি দেবনাগরী ও বাংলা হরফে দেওয়া হল। সাথে সাথে বাংলা ভাষায় শ্লোকগুলির অনুবাদ করা হয়েছে।

হেমন্ত ঋতু

गोरसानिक्षुविकृतीर्वसां तैलं नवौदनम् ।
हेमन्तेऽभ्यस्यतस्तोयमुष्णं चायुर्न हीयते ॥१॥

গোরসানিক্ষুবিকৃতীর্বসাং তৈলং নবৌদনম্।
হেমন্তেহভ্যস্যতস্তোয়মুষ্ণং চায়ুর্ন হীয়তে ।। 1 ।।

বাংলা অনুবাদ:- শীতকালে প্রতিদিন দুগ্ধাদি গব্যরস, গুড়, ঘি, তেল, নবান্ন ও গরম জল সেবন করলে আয়ু ক্ষয় হয় না।


वर्जयेदन्नपानानि वातलानि लघूनि च ।
प्रवातं प्रमिताहारमुदमन्थं हिमागमे ॥२॥

বর্জয়েদন্নপানানি বাতলানি লঘূনি চ।
প্রবাতং প্রমিতাহারমুদমন্থং হিমাগমে।। 2 ।।

বাংলা অনুবাদ:- শীতকালে লঘু ও বায়ুকারক অন্ন পানীয়সমূহ, তাজা হাওয়া, অল্পাহার ও জলে গোলা ছাতু খেতে নেই।


শিশির ঋতু

हेमन्तशिशिरौ तुल्यौ शिशिरेऽल्पं विशेषणम् ।
रौक्ष्यमादानजं शीतं मेघमारुतवर्षजम् ।।३।।

হেমন্তশিশিরৈ তুল্যৌ শিশিরেহল্পং বিশেষণম্।
রৌক্ষ্যমাদানজং শীতং মেঘমারুতবর্ষজম্।। 3 ।।

বাংলা অনুবাদ:- হেমন্ত ও শিশির ঋতুতে আহার বিহারাদি তুল্য হলেও কিছু বিশেষ আছে। বিশেষ এই যে, শিশিরকালে আদানকাল সুলভ হলেও রুক্ষতা বেশি হয়। মেঘ, বায়ু ও বর্ষাজনিত শৈত্য হেমন্তকাল অপেক্ষা কিছু বেশি হয়।


तस्माद्वैमन्तिकः सर्वः शिशिरे विधिरिष्यते ।
निवातमुष्णं त्वधिकं शिशिरे गृहमाश्रयेत् ॥४॥

তস্মাদ্হৈমন্তিকঃ সর্বঃ শিশিরে বিধিরিষ্যতে।
নিবাতমুষ্ণং ত্বধিকং শিশিরে গৃহমাশ্রয়েৎ।। 4 ।।

বাংলা অনুবাদ:- এই হেতু শিশির ও হেমন্ত দুইকাল তুল্যধর্মী হলেও হৈমন্তিক বিধিসকল শিশির ঋতুতে বিশেষ প্রতিপালনীয়। শিশিরে নির্বাতস্থান এবং অধিকতর উষ্ণ ঘরে বাস করা উচিত।


कटुतिक्तकषायाणि वातलानि लघूनि च ।
वर्जयेदन्नपानानि शिशिरे शीतलानि च ॥५॥

কটুতিক্তকষায়াণি বাতলানি লঘূনি চ।
বর্জয়েদন্নপানানি শিশিরে শীতলানি চ।। 5 ।।

বাংলা অনুবাদ:- শিশিরকালে কটু, তিক্ত, কষায়রস এবং বায়ুকারক লঘু ও শীতল অন্নপান বর্জন করবে।


বসন্ত ঋতু

वसन्ते निचितः श्लेष्मा दिनकृद्भाभिरीरितः ।
कायाग्निं बाधते रोगांस्ततः प्रकुरुते बहून् ।।६।।

বসন্তে নিচিতঃ শ্লেষ্মা দিনকৃদ্ভাভিরীরিতঃ।
কায়াগ্নিং বাধতে রোগাংস্ততঃ প্রকুরুতে বহূন্।। 6 ।।

বাংলা অনুবাদ:- হেমন্তকালের সঞ্চিত শ্লেষ্মা বসন্তকালীন দিবাকরের কিরণে দ্রবীভূত ও পরিচালিত হয়ে কায়াগ্নির বাধা জন্মায় এবং বহুবিধ রোগের উৎপন্ন করে।


तस्माद्वसन्ते कर्माणि वमनादीनि कारयेत् ।
गुर्वम्लस्निग्धमधुरं दिवास्वप्नं च वर्जयेत् ॥७॥

তস্মাদ্বসন্তে কর্মাণি বমনাদীনি কারয়েৎ।
গুর্বম্লস্নিগ্ধমধুরং দিবাস্বপ্নং চ ব্রজয়েৎ।। 7 ।।

বাংলা অনুবাদ:- এই কারণে বসন্তকালে বমনাদি কর্ম সকল করাবে এবং গুরু, অম্ল, স্নিগ্ধ ও মধুর দ্রব্যসকল এবং দিবানিদ্রা ত্যাগ করবে।


গ্রীষ্ম ঋতু

मयूखैर्जगतः स्नेहं ग्रीष्मे पेपीयते रविः।
स्वादु शीतं द्रवं स्निग्धमन्नपानं तदा हितम् ।।८।।

ময়ূখৈর্জগতঃ স্নেহং গ্রীষ্মে পেপীয়তে রবিঃ।
স্বাদু শীতং দ্রবং স্নিগ্ধমন্নপানং তদা হিতম্।। 8 ।।

বাংলা অনুবাদ:- গ্রীষ্মকালে রবির প্রখর কিরণজাল বিস্তার করে জগতের রসপদার্থ শোষণ করে। একারণে এইকালে সুস্বাদু, শীতল, দ্রব ও স্নিগ্ধ অন্ন পানীয় হিতকর।


घृतं पयः सशाल्यन्नं भजन् ग्रीष्मे न सीदति ।
लवणाम्लकदृष्णानि व्यायामं च विवर्जयेत् ॥९॥

ঘৃতং পয়ঃ সশাল্যন্নং ভজন্ গ্রীষ্মে ন সীদতি।
লবণাম্লকটূষ্ণানি ব্যায়ামং চ বিবর্জয়েৎ।। 9 ।।

বাংলা অনুবাদ:- গ্রীষ্মকালে ঘৃত, দুগ্ধ, শালি তণ্ডুলের অন্ন ভোজন করলে ক্লান্ত হয় না। এইসময় লবণ, অম্ল, কটু ও উষ্ণদ্রব্য এবং ব্যায়াম বর্জন করা উচিত।


বর্ষা ঋতু

भूवाष्पान्मेघनिस्यन्दात् पाकादम्लाज्जलस्य च ।
वर्षास्वग्निबले क्षीणे कुप्यन्ति पवनादयः ॥१०॥

ভূবাষ্পান্মেঘনিস্যন্দাৎ পাকাদম্লাজ্জলস্য চ।
বর্ষাস্বগ্নিবলে ক্ষীণে কুপ্যন্তি পবনাদয়ঃ।। 10 ।।

বাংলা অনুবাদ:- বর্ষাকালে ভূমি হতে বাষ্প উঠতে থাকে, মেঘ হতে বারিবর্ষণ হতে থাকে এবং জল অম্লপাক হয়। তার উপর অগ্নিবল ক্ষীণ হওয়াতে ত্রিদোষেরই প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।


व्यक्ताम्ललवणस्नेहं वातवर्षाकुलेऽहनि ।
विशेषशीते भोक्तव्यं वर्षास्वनिलशान्तये ॥११॥

ব্যক্তাম্ললবণস্নেহং বাতবর্ষাকুলেহহনি।
বিশেষশীতে ভোক্তব্যং বর্ষাস্বনিলশান্তয়ে।। 11 ।।

বাংলা অনুবাদ:- বর্ষাকালে বায়ু ও বর্ষা দ্বারা দিবস আকুল হলে, বিশেষতঃ বর্ষজনিত শীতের দিনে বর্ষাকালের বায়ুপ্রকোপ শান্ত করার জন্য প্রচুর অম্ল, লবণ ও স্নেহরস বিশিষ্ট দ্রব্য ভোজন করবে।


শরদ্ ঋতু

वर्षाशीतोचिताङ्गानां सहसैवार्करश्मिभिः।
तप्तानामाचितं पित्तं प्रायः शरदि कुप्यति ॥१२॥

বর্ষাশীতোচিতাঙ্গানাং সহসৈবার্করশ্মিভিঃ।
তপ্তানামাচিতং চিত্তং প্রায়ঃ শরদি কুপ্যতি।। 12 ।।

বাংলা অনুবাদ:- বর্ষাকালের সঞ্চিত পিত্ত শরৎকালে প্রকুপিত হয়। বর্ষাকালের শীতোচিত দেহ শরদাগমে হঠাতই সূর্যরশ্মি দ্বারা সন্তপ্ত হওয়াতে শরৎকালে পিত্ত প্রকোপ হয়।


तथान्नपानं मधुरं लघु शीतं सतिक्तकम् ।
पित्तप्रशमनं सेव्यं मात्रया सुप्रका‌ङ्क्षितैः ॥१३॥

তথান্নপানং মধুরং লঘু শীতং সতিক্তকম্।
পিত্তপ্রশমনং সেব্যং মাত্রয়া সুপ্রকাঙ্ক্ষিতৈঃ।। 13 ।।

বাংলা অনুবাদ:- এই কারণে শরৎকালে মধুর, লঘু, শীতল, তিক্ত ও পিত্ত প্রশমনকারী অন্নপান যথামাত্রায় ক্ষুধাকালে সেবন করা কর্তব্য।


शारदानि च माल्यानि वासांसि विमलानि च।
शरत्काले प्रशस्यन्ते प्रदोषे चेन्दुरश्मयः ॥१४॥

শারদানি চ মাল্যানি বাসাংসি বিমলানি চ।
শরত্কালে প্রশস্যন্তে প্রদোষে চেন্দুরশ্ময়ঃ।। 14 ।।

বাংলা অনুবাদ:- শরৎকালে শারদীয় পুষ্পের মালা ধারণ, নির্মল বস্ত্র পরিধান এবং সন্ধ্যাকালে চন্দ্রকিরণ সেবন করা হিতকর।

ধন্যবাদ

ঋতুচর্যা পাঠ্যাংশ তথা আমাদের www.sanskritruprekha.com সাইট Visit করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সংস্কৃতের আরো অনেক তথ্য পাওয়ার জন্য Home Page আসুন। Home Page পৌঁছানোর জন্য CLICK HERE👈

Leave a Comment