দানবীরঃ কর্ণঃ থেকে SAQ প্রশ্নোত্তর

দানবীরঃ কর্ণঃ নাট্যাংশটি একাদশ শ্রেণীর SEMESTER – 2 পাঠ্য হিসেবে নির্দিষ্ট। দানবীরঃ কর্ণঃ থেকে SAQ প্রশ্নোত্তর নিচে দেওয়া হল। এই পাঠ থেকে 3 টি 5 নম্বরের প্রশ্নের মধ্যে 2 টির (5 X 2 = 10) উত্তর করতে হবে। উত্তর করতে হবে সংস্কৃত, বাংলা, হিন্দি বা ইংরেজি ভাষায়। এখানে শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে বাংলা ভাষায় প্রশ্নোত্তর দেওয়া হয়েছে।

আমরা যাকে সাহিত্য বলি, সংস্কৃত অলংকার শাস্ত্রে তাই কাব্য নামে চিহ্নিত। রসাত্মক বাক্যে গুণ, অলংকারের মন্ডন ছাড়িয়ে কাব্যের অন্তর্গত রসরূপ সহৃদয় পাঠকের মন আপ্লুত করে।সংস্কৃত সাহিত্যে ‘কাব্যং দ্বিবিধং দৃশ্যং শ্রব্যং চ’ অর্থাৎ কাব্য দুই প্রকার দৃশ্যকাব্য ও শ্রব্যকাব্য। দৃশ্যকাব্যের আধুনিক প্রতিশব্দ নাটক। মঞ্চে অভিনয় দর্শনের মাধ্যমে দৃশ্যকাব্য উপস্থাপিত হয়। এই দৃশ্যকাব্যের অপর নাম রূপক; কারণ এতে পাত্র-পাত্রীর উপর, নাটকীয় চরিত্রের রূপ আরোপ করা হয়।

কালিদাস পূর্ব নাট্যকারদের মধ্যে ভাস অন্যতম। কালিদাস তার ‘মালবিকাগ্নিমিত্রম্’ নাটকে প্রথিতযশা ভাসের নাম উল্লেখ করেছেন। বানভট্টও ভাস নাটকচক্রের খ্যাতির কথা বলেছেন। মহাকবি ভাস নিজের কবিত্বের পরিচয় যত শ্রদ্ধাস্পদ নিজের ব্যক্তিত্ব নিয়ে ততই বিবাদাস্পদ। যাইহোক, 1909 থেকে 1911 খ্রিস্টাব্দে মহামহোপাধ্যায় পন্ডিত তিরুবাগ্রহারম গণপতি শাস্ত্রী মহাশয় দক্ষিণ ভারতের কেরল অঞ্চলে 13 টি নাটকের পান্ডুলিপি আবিষ্কার করেন। ত্রিবেন্দ্রাম সংস্কৃত সিরিজ থেকে ‘ভাসনাটকচক্রম্’ নামে পুস্তকাকারে নাটকগুলি প্রকাশ পায়। 13 খানি নাটকের মধ্যে বেশ কয়েকটি মহাভারতের কাহিনী অবলম্বনে রচিত এবং বেশির ভাগ একাঙ্ক নাটক। ‘কর্ণভারম্’ তাদের মধ্যে অন্যতম একাঙ্ক নাটক। “দানবীরঃ কর্ণঃ” পাঠ্যাংশ মহাভারতের কাহিনী অবলম্বনে রচিত ‘কর্ণভারম্’ একাঙ্ক নাটকের অংশবিশেষ। এর নায়ক হলেন কর্ণ।

সারসংক্ষেপ – দানবীরঃ কর্ণঃ পাঠ্যাংশ এর বিষয়বস্তু। কুরুক্ষেত্র সমরাঙ্গনের সপ্তদশদিবসে অঙ্গরাজ কর্ণ কৌরবপক্ষের সেনাপতি হয়ে অর্জুনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে চলেছেন। মদ্ররাজ শল্য তাঁর সারথি। এমন সময় দেবরাজ ইন্দ্র ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে সেখানে উপস্থিত হয়ে দাতা কর্ণের কাছ থেকে শ্রেষ্ঠ ভিক্ষা প্রার্থনা করলেন। কর্ণ সাথে সাথে প্রার্থীকে প্রণাম জানালে- প্রার্থী ‘দীর্ঘায়ুর্ভব’ বলে কর্ণকে আশীর্বাদ না করে চির যশস্বী হওয়ার আশীর্বাদ করলেন। কর্ণের মনে সন্দেহ জাগল তথাপি দাতা কর্ণ প্রার্থীর প্রার্থনা জানতে চাইলেন। প্রার্থী আগের মতোই ‘মহত্তর ভিক্ষার’ কথা বললে কর্ণ তার সকল প্রকার পার্থিব সম্পদ দান করতে চাইলে প্রার্থী সে সব গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করলেন। অপার্থিব অগ্নিষ্টোম যাগের ফলও কর্ণ প্রার্থীতে দিতে চাইলেন। তাতেও অসম্মতি জানালে নিজ মস্তক দানের ইচ্ছাও প্রকাশ করেন। ব্রাহ্মণ কর্ণের একথা শুনে হায় কি সর্বনাশ বলে বিস্ময় প্রকাশ করলেন।

কর্ণ এবার তার সহজাত কবচকুণ্ডলের কথা বললে ব্রাহ্মণ সাথে সাথে তা গ্রহণে সম্মতি প্রকাশ করলেন। কর্ণের মনে সন্দেহ আবার ঘনীভূত হল- এটা কৃষ্ণের চক্রান্ত কিনা তাও ভাবলেন। কিন্তু দাতার কাছে এরূপ চিন্তা ঠিক নয় ভেবে পরক্ষণেই নিজের কবচকুণ্ডল দানে উদ্যত হলে শল্যরাজ নিষেধ করলেন। তবুও তিনি তা গ্রাহ্য না করে কবচকুণ্ডল ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে ইন্দ্রের হাতে তুলে দিলেন। ইন্দ্রের কাছে আপনি প্রতারিত হলেন শল্যরাজ একথা বললে উত্তরে কর্ণ জানালেন যে-ইন্দ্রকে কৃতার্থ করে তিনিই ইন্দ্রকে বঞ্চিত করেছেন। পরিবর্তে ইন্দ্র কর্ণকে দেবদূতের মাধ্যমে ‘বিমলা’ নামে একাঘ্নী বাণ পাঠিয়ে দিলেন। প্রথমে কর্ণ তা নিতে অস্বীকার করলেও ‘ব্রাহ্মণের দান’ বলে গ্রহণ করেন। প্রার্থীর প্রার্থনা পূরণ করতে নিজের জীবন বিপন্ন জেনেও, সারথির নিষেধ সত্ত্বেও দাতা কর্ণ নিজের শরীর থেকে সহজাত কবচকুণ্ডল হাসিমুখে শত্রুর হাতে তুলে দিচ্ছেন, এরূপ দাতা যে সামান্য দাতা নয়। শ্রেষ্ঠ দাতা সে বিষয়ে কোনোরূপ সন্দেহের অবকাশ থাকতেই পারে না। এরূপ অসামান্য দানের জন্যই কর্ণের গৌরব সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ায় নাটকটির নাম হয়েছে কর্ণভারম্। এটিই ‘দানবীরঃ কর্ণঃ’ নাট্যাংশের বিষয়বস্তু।

দানবীরঃ কর্ণঃ

দানবীরঃ কর্ণঃ পাঠ্যাংশ টি বিষয়ে একনজরে কয়েকটি তথ্য।

পাঠ্যাংশের নামদানবীরঃ কর্ণঃ
রচনাভাস
উৎস গ্রন্থ কর্ণভারম্
কর্ণভারম্ নাটকের অঙ্ক সংখ্যা1 টি
কর্ণভারম্ নাটকের উৎস গ্রন্থমহাভারত

দানবীরঃ কর্ণঃ SAQ প্রশ্ন ও উত্তর

দানবীরঃ কর্ণঃ থেকে SAQপ্রশ্নোত্তর নিম্নে দেওয়া হল।

1)সংক্ষেপে কর্ণের চরিত্র অঙ্কণ করো। অথবা কর্ণের চরিত্রের মহত্বের পরিচয় দাও।

উত্তর : মহাকবি ভাস রচিত “কর্ণভারম্” নাটকের ‘দানবীরঃ কর্ণঃ’ নাট্যাংশে অন্যতম বিতর্কিত চরিত্র হল কর্ণ চরিত্র, স্বভাবদীপ্তিতে ভাস্বর ও মহাবীর। শৌর্যে তিনি অগ্রগণ্য, সমরেও তিনি অনবদ্য। কর্ণ চরিত্র এক মহাকাব্যিক গৌরবে মোড়া, যেখানে একাধারে দানশীলতা, আত্মত্যাগ, ধর্মনিষ্ঠা এবং বীরত্বের সমাহার ঘটেছে।

দানশীল কর্ণ :— কর্ণের দানের মহত্ব এমন এক আকাশের মতো, যার কোনো সীমা নেই। যিনি নিজের জীবন দিয়ে দানের মহিমা প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর আদর্শ বাণী হল “হুতং চ দত্তং চ তথৈব তিষ্ঠতি।” তাই ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে ইন্দ্র যখন কবচ ও কুণ্ডল প্রার্থনা করেন, কর্ণ জানতেন এটা তাঁর মৃত্যুর কারণ হবে। তবু তিনি দ্বিধাহীনভাবে তা দান করেছেন। আবার দানের প্রতিদান তিনি নিতে চাননি “ধিগ্ দত্তস্য ন প্রতিগৃহ্ণামি”। তাঁর এই মহানুভবতা অন্য সকলের থেকে আলাদা করে তোলে। আজও দাতা কর্ণ হিসেবে কর্ণ চরিত্র প্রবাদবাক্যে স্থান লাভ করেছে।

বিনয়ী কর্ণ :— আদর্শ রাজা কর্ণের বিনয়ী সদ্ গুণটি বিকশিত হয়েছে। যুদ্ধে অবতীর্ণ হবেন সেই মুহূর্তে ব্রাহ্মণ ভিক্ষার্থীবেশে এলে বিনয়ের সঙ্গে তাঁকে নিজেই আহ্বান করেছেন। ব্রাহ্মণকে প্রণাম জানানোর মাধ্যমে তাঁর ভক্তি এবং বিনয়ী গুণটি প্রকাশিত হয়েছে “ভবন্তমহমেব নমস্করোমি।”

দৃঢ়প্রতিজ্ঞ কর্ণ :— কর্ণের প্রতিশ্রুতি ছিল অটল ও অক্ষয়। শল্যরাজ তাঁকে সতর্ক করে কবচ-কুণ্ডল দিতে নিষেধ করেন। কিন্তু কর্ণ তাঁর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে চাননি। প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য তিনি নিজের প্রাণ পর্যন্ত উৎসর্গ করতে প্রস্তুত ছিলেন। এই একনিষ্ঠতা এবং আত্মত্যাগ তাঁকে এক অনন্য বীর করে তুলেছে, যিনি নিজের আদর্শের জন্য মৃত্যুকেও হাসিমুখে গ্রহণ করেছেন।

রাজা কর্ণ :— কর্ণ প্রকৃতপক্ষে একজন রাজা ছিলেন। ‘প্রজাপালনমাত্রবুদ্ধ্যা’ এই ব্যাকাং শটিতে তার রাজাদর্শ উদ্ভাসিত। কেবল উপাধিতে নয়, বরং গুণাবলিতে। প্রজাদের প্রতি তাঁর অঙ্গীকার ছিল অটুট, এবং তিনি জানতেন যে গুণই একজন রাজার প্রকৃত পরিচয়। তাঁর বিশ্বাস ছিল, “মানুষের দেহ ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু তার গুণাবলি চিরকাল থেকে যায়।” কর্ণ নিজের গুণের দ্বারা অমর হয়ে থাকতে চেয়েছেন।

বীর কর্ণ :— কর্ণের বীরত্বের প্রতি আত্মপ্রত্যয়ের পরিচয় পাওয়া যায়। যখন তিনি প্রার্থী ইন্দ্রকে “জিত্বা পৃথিবীং দদামি” অর্থাৎ তিনি বাহুবলে সসাগরা ধরিত্রী জয় মত বীরত্বের অধিকারী হিসেবে আত্মবিশ্বাস রাখেন।

কর্ণের চরিত্র যেন এক মহাজাগতিক আলোকবর্তিকা। যাঁর দানশীলতা, ব্রাহ্মণভক্তি, প্রতিশ্রুতি পালনে দৃঢ়তা, রাজোচিত গুণাবলি এবং বীরত্ব তাঁকে মানবিক গুণাবলির সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে দিয়েছে। ইন্দ্রের আশীর্বাদে সাগরের মত, সূর্যের ও চন্দ্রের মত, হিমালয়ের মত তাঁর যশ চির অম্লান হয়ে আছে। কর্ণ চরিত্রগুণে দেবতাকে ম্লান করে দিয়েছেন।

2) “वञ्चितः खलु भवान्” ভবান্ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? তিনি কী সত্যি বঞ্চিত হয়েছিলেন?

উত্তর : মহাকবি ভাস রচিত “কর্ণভারম্” নাটকের ‘দানবীরঃ কর্ণঃ’ নাট্যাংশে ভবান্ বলতে অঙ্গরাজ কর্ণকে বোঝানো হয়েছে।

অনুরূপ পাঠ

ঋতুচর্যা থেকে SAQ প্রশ্নোত্তর এর মতো একইধরণের বিষয় জানতে নিম্নের LINK এ CLICK করো ।

Leave a Comment