উদ্দ্যেশ্য ও বিধেয়

বাক্যের মূলতঃ দুটি অংশ — উদ্দ্যেশ্য ও বিধেয়। বিশেষণ প্রভৃতির দ্বারা উদ্দ্যেশ্য ও বিধেয় উভয়েই পরিবর্ধিত হয়ে সুবৃহত বাক্যে পরিণত হয়। এই অধ্যায়ে উদ্দ্যেশ্য ও বিধেয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। সপ্তম, অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এছাড়াও স্নাতক ও স্নাতকোত্তর , WBSSC(SLST) পরীক্ষার্থীদের এই অধ্যায় কন্ঠস্থ করতে হবে।

উদ্দ্যেশ্য এবং বিধেয় কাকে বলে

যার সম্পর্কেঅর্থাত্ যাকে উদ্দেশ্য বা লক্ষ করে বাক্যে কিছু বলা হয়, তাকে উদ্দেশ্য এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে যা কিছু বলা হয়, তাকে বিধেয় বলে। যেমন—রামঃ গচ্ছতি। এখানে ‘রামঃ’ উদ্দেশ্য এবং ‘গচ্ছতি’ বিধেয়।

বিশেষ্য ও সর্বনাম পদই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। উদ্দেশ্য পদে প্রথমা বিভক্তি হয়। কর্তৃবাচ্যের বাক্যে কর্তা এবং কর্মবাচ্যের বাক্যে কর্ম উদ্দেশ্য হয়। উদ্দেশ্য অংশে কর্তা ও তার বিশেষণাদি থাকে, আর বিধেয় অংশে ক্রিয়া, কর্ম প্রভৃতি কারক এবং ক্রিয়াবিশেষণ প্রভৃতি পদ থাকে। বিধেয় পদ সবসময় উদ্দেশ্যের পরে ব্যবহৃত হয়।

সাধারণতঃ বিশেষ্য, বিশেষণ ও ক্রিয়া পদ বাক্যের বিধেয় পদ হয়। যখন বিশেষণ পদ বিধেয় হয়, তখন তার লিঙ্গ, বিভক্তি ও বচন উদ্দেশ্য পদ অনুসারে হয়ে থাকে। এইরূপ বিধেয় পদকে বলে বিধেয়-বিশেষণ অর্থাৎ যখন বিশেষণ পদ বিশেষ্যের পরে বসে, তখন একে বিধেয়-বিশেষণ বলে। যথা—নদ্যাঃ জলং চঞ্চলম্। জয়ন্তস্য পুত্রঃ বিদ্বান্ , কন্যা চ বিদুষী।

বিশেষ্য পদ বিধেয় হলে তার সঙ্গে কেবল উদ্দেশ্যের বিভক্তির সমতা থাকে। আর বিধেয়-পদের লিঙ্গ ও বচন নিজ অর্থ ও প্রয়োগ অনুযায়ী হয়। যথা—অহিংসা পরমো ধর্মঃ। দুর্বলস্য বলং রাজা। বিদ্যা রূপং কুরূপাণাম্ । প্রাসঙ্গিক শ্লোকটি হলো-

উদ্দেশ্যে চ বিধেয়ে চ বিভক্তিষু সমা ভবেৎ।

কদাচিজ্জায়তে তত্র বৈষম্যং লিঙ্গ-সংখ্যয়োঃ।।

উদ্দেশ্য এবং বিষেয়-বিশেষণঃ- উদ্দেশ্য-পদের বিশেষণ উদ্দেশ্য-পদের বিশেষ্য এবং বিধেয়-পদের বিশেষণ বিধেয়-পদের বিশেষ্য অনুসারে হয়ে থাকে। যথা— তৎ তস্য কিমপি দ্রব্যম্ যো হি যস্য প্রিয়ো জনঃ। কতকগুলি পদ আছে, যারা বিধেয়-বিশেষণ রূপে ব্যবহৃত হয়েও নিজের লিঙ্গ ও বচন পরিত্যাগ করে না। এই পদগুলিকে অজহল্লিঙ্গ’ বিশেষণ পদ বলে। এখানে আমরা অজহল্লিঙ্গ সম্পর্কে আরও কিছু জেনে নিই। ‘জহৎ’ অর্থাৎ যে ত্যাগ করে। তা হলে অজহল্লিঙ্গ শব্দের অর্থ হবে, যে শব্দ নিজ লিঙ্গ ত্যাগ করে না। এই প্রসঙ্গে বলা হয়েছে—

“শরণম্ আস্পদং মূলং প্রমাণং ভাজনং পদম্।
পাত্রং মিত্রং স্থানং জ্ঞেয়ং ক্লীবৈকবচনে সদা।।”

প্রমাণম্, পদম্, মূলম্ , নিদানম্ , শরণম্ , অস্পদম্ , ভাজনম্, পাত্রম্ ইত্যাদি অজহল্লিঙ্গ। যথা—অবিবেকঃ/পরমাপদাং পদম্। পুত্রঃ/ স্নেহভাজনম্ জনকস্য। রাজা/ প্রজানাং শরণম্। ইমে বালকাঃ/বিবাদস্য কারণম্। সম্পদঃ /অনর্থস্য মূলম্।

ঊনবিংশতি হতে সংখ্যাবাচক শব্দগুলি অজহল্লিঙ্গ। এরা নিজ নিজ লিঙ্গ পরিত্যাগ না করেও যে-কোন বিশেষ্যের বিশেষণ রূপে ব্যবহৃত হয়। যথা—বিংশতিঃ বালকাঃ, বিংশতিঃ বালিকাঃ বিংশতি ফলানি।

উদ্দ্যেশ্য এবং বিধেয়বিষয়ক একটি তালিকা

উদ্দ্যেশ্য ও বিধেয়

উদ্দ্যেশ্য বিধেয়
নরঃগচ্ছতি
কালিদাসঃনিপুণঃ কবিঃ
অর্জুনস্যমিত্রম্ হরিঃ
বলাকাঃসুখিনঃ ভবন্তি
ধার্মিকাঃসুখিনঃ ভবন্তি
বালিকাঃগৃহং গচ্ছন্তি
বালিকাচন্দ্রং পশ্যতি
কৃষকাঃক্ষেত্রং গচ্ছন্তি
শিশবঃদুগ্ধং পিবন্তি
দেবাঃসোমরসং অপিবন্

উদ্দ্যেশ্য ও বিধেয় কিছু জিজ্ঞাস্য

1) বাক্যের কয়টি অংশ ও কী কী?

দুটি–উদ্দ্যেশ্য ও বিধেয়।

2) উদ্দেশ্য পদে কোন্ বিভক্তি হয়?

প্রথমা বিভক্তি।

3) উদ্দেশ্য অংশে কী থাকে?

কর্তা ও তার বিশেষণাদি থাকে।

4) বিধেয় অংশে কী থাকে?

ক্রিয়া, কর্ম প্রভৃতি কারক এবং ক্রিয়াবিশেষণ প্রভৃতি পদ থাকে।

Leave a Comment