ব্রাহ্মণচৌরপিশাচকথা পাঠ্যাংশ

ব্রাহ্মণচৌরপিশাচকথা পাঠ্যাংশ টি একাদশ শ্রেণীর পাঠ্য হিসেবে নির্দিষ্ট। ব্রাহ্মণচৌরপিশাচকথা গদ্যাংশটি দেবনাগরী ও বাংলা হরফে নিচে দেওয়া হল। বাংলায় সহজ ও সাবলীল কথায় অনুবাদ করা হল।

“ব্রাহ্মণচৌরপিশাচকথা” গল্পটি পণ্ডিত বিষ্ণুশর্মা রচিত “পঞ্চতন্ত্র” নামক গ্রন্থের তৃতীয় তন্ত্র ‘কাকোলূকীয়ম্’ থেকে নেওয়া । দাক্ষিণাত্যে মহিলারোপ্য নামক নগরের রাজা অমরশক্তির জড়বুদ্ধিসম্পন্ন পুত্রদের শিক্ষাদানের জন্য বিষ্ণুশর্মা জগতের সমস্ত অর্থশাস্ত্রের সারাংশ আহরণ করে “পঞ্চতন্ত্র” রচনা করলেন। পঞ্চ মানে পাঁচ আর তন্ত্র হল সুসংবদ্ধ রচনা। সুতরাং পঞ্চতন্ত্র মানে হল, পাঁচটি সুসংবদ্ধ রচনা বা তন্ত্র সংবলিত একটি গ্রন্থ। এই পাঁচটি তন্ত্র হল – মিত্রভেদ, মিত্রপ্রাপ্তি, কাকোলুকীয়, লম্বপ্রণাশ এবং অপরীক্ষিতকারক। পাঠককে এক-একটি নির্দিষ্ট নীতিতে উদ্‌বুদ্ধ করার লক্ষ্য নিয়ে এক-একটি তন্ত্র রচনা করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণচৌরপিশাচকথা

ব্রাহ্মণচৌরপিশাচকথা পাঠ্যাংশটি পণ্ডিত বিষ্ণুশর্মা রচিত। পাঠ্যাংশ গল্পটি পঞ্চতন্ত্রের তৃতীয় তন্ত্র, কাকোলূকীয়ম্ তন্ত্রের অষ্টম সংখ্যক কাহিনি।

পাঠ্যাংশের নামব্রাহ্মণচৌরপিশাচকথা
রচনাপণ্ডিত বিষ্ণুশর্মা
উৎস গ্রন্থ পঞ্চতন্ত্র
তন্ত্রতৃতীয়

পাঠ্যাংশ (দেবনাগরী ও বাংলা হরফ এবং অনুবাদ)

অংশ 1

शत्रवोऽपि हितायैव विवदन्तः परस्परम् ।
चौरेण जीवितं दत्तं राक्षसेन तु गोयुगम् ॥

শত্রবোঽপি হিতায়ৈর বিবদন্তঃ পরস্পরম্।
চৌরেণ জীবিতং দত্তং রাক্ষসেন তু গোযুগম্‌ ॥

বাংলা অনুবাদ— শত্রুরাও পরস্পর বিবাদ করলে উপকারই করে, (গল্পে) একটি চোর (ব্রাহ্মণের) প্রাণ বাঁচিয়েছিল এবং একটি রাক্ষস (চুরি হওয়া থেকে) গোরুজোড়াকে বাঁচিয়েছিল।

অংশ 2

अस्ति कस्मिंश्चिदधिष्ठाने दरिद्रो द्रोणर्नामा ब्राह्मणः प्रतिग्रहधनः, सततं विशिष्टवस्त्रानुलेपनगन्धमाल्यालङ्कारताम्बुलादिभोगपरिवर्जितः, प्ररूढकेशश्मश्रुनखरोमोपचितः, शीतोष्णवातवर्षादिभिः परिशोषितशरीरः । तस्य च केनापि यजमानेनानुकम्पया शिशुगोयुगं दत्तम्। ब्राह्मणेन च बालभावादारभ्य याचितघृततैलयवसादिभिः सम्बर्ध्य सुपुष्टं कृतम् ।

অস্তি কস্মিংশ্চিদধিষ্ঠানে দরিদ্রো দ্রোণনামা ব্রাহ্মণঃ প্রতিগ্রহধনঃ, সততং বিশিষ্টবস্ত্রানুলেপনগন্ধমাল্যালঙ্কারতাম্বুলাদিভোগ পরিবর্জিতঃ, প্ররূঢ়কেশশ্মশ্রুনখরোমোপচিতঃ, শীতোষ্ণবাতবর্ষাদিভিঃ পরিশোষিতশরীরঃ। তস্য চ কেনাপি যজমানেনানুকম্পয়া শিশুগোযুগম্ দত্তম্। ব্রাহ্মণেন চ বালভাবাদারভ্য যাচিতধৃততৈলযবসাদিভিঃ সম্বর্ধ্য সুপুষ্টং কৃতম্।

বাংলা অনুবাদ— কোনো এক দেশে দ্রোণ নামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ বাস করত। সে ভিক্ষা করে অর্থ সঞ্চয় করত। তাই সে সবসময় ভালো কাপড়, লেপন, গন্ধদ্রব্য, মালা, অলংকার, পান প্রভৃতি ভোগ্যবস্তু থেকে বঞ্চিত ছিল। প্রচুর চুল, দাড়ি, নখ, লোমে সে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। শীত, গ্রীষ্ম, ঝড়, বৃষ্টি প্রভৃতিতে তার শরীর শুকিয়ে গিয়েছিল। তার কোনো এক যজমান তাকে দয়া করে দুটি বাছুর দিয়েছিল। ব্রাহ্মণ ছোটো থেকেই তাদেরকে ভিক্ষা করে আনা ঘি, তেল, ঘাস ইত্যাদি খাইয়ে হৃষ্টপুষ্ট করে তুলল।

অংশ 3

तच्च दृष्ट्वा सहसैव कश्चित् चौरश्चिन्तितवान्-“अहमस्य ब्राह्मणस्य गोयुगमिदमपहरिष्यामि” इति निश्चित्य निशायां बन्धनपाशं गृहीत्वा यावत्प्रस्थितस्तावदर्धमार्गे प्रविरलतीक्ष्णदन्तपङ्क्तिः, उन्नतनासावंशः, प्रकटरक्तान्तनयनः उपचितस्नायुसंततिर्नतगात्रः, शुष्ककपोलः, सुहुतहुतवहपिङ्गलश्मश्रुकेशशरीरः कश्चिदृष्टः । दृष्ट्रा च तं तीव्रभयत्रस्तोऽपि चौरोऽब्रवीत्— “को भवान्” ? इति ।

তচ্চ দৃষ্ট্বা সহসৈব কশ্চিচ্চৌরশ্চিতিবান্ — “অহমস্য ব্রাহ্মণস্য গোযুগমিদমপহরিষ্যামি” ইতি নিশ্চিত্য নিশায়াং বন্ধনপাশং গৃহীত্বা যাবৎপ্রস্থিতস্তাবদধমার্গে প্রবিরলতীক্ষ্ণদত্তপঙ্ক্তিঃ, উন্নতনাসাবংশঃ, প্রকটরক্তান্তনয়নঃ, উপচিতস্নায়ুসন্ততিনতগাত্রঃ, শুষ্ককপোলঃ, সুহুতহুতবহপিঙ্গলশ্মশ্রুকেশশরীরঃ কশ্চিদ্ দৃষ্টঃ। দৃষ্ট্বা চ তং তীব্রভয়ত্রস্তোঽপি চৌরোহব্রবীৎ — “কো ভবান্”? ইতি।

বাংলা অনুবাদ— তা দেখে হঠাৎই কোনো এক চোর চিন্তা করল—“আমি এই ব্রাহ্মণের গোরু দুটিকে চুরি করব।” এইরকম মনস্থির করে রাত্রে একটা বাঁধার দড়ি নিয়ে যখন যাচ্ছিল তখন মাঝপথে সে একজনকে দেখতে পেল। তার অতি বিরল ধারালো দাঁতের সারি, নাকের হাড় উঁচু, চোখের কোণগুলি অত্যন্ত রক্তবর্ণ, শিরাগুলো বেরিয়ে এসেছে, গায়ের চামড়া বসে গেছে, গাল শুকিয়ে গেছে। তার চুল ও দাড়ির রং অনেক আহুতি দেওয়া আগুনের মতো করে পিঙ্গল। তাকে দেখে চোর প্রচণ্ড ভয়ে সন্ত্রস্ত হয়েও বলল — “আপনি কে?”

অংশ — 4

स आह—”सत्यवचनोऽहं ब्रह्मराक्षसः । भवानप्यात्मानं निवेदयतु” । सोऽब्रवीत् —”अहं क्रूरकर्मा चौरः, दरिद्रब्राह्मणस्य गोयुगं हर्तुं प्रस्थितोऽस्मि ।

अथ जातप्रत्ययो राक्षसोऽब्रवीत् —”भद्र! षष्ठाह्णकालिकोऽहम्। अतस्तमेव ब्राह्मणमद्य भक्षयिष्यामि। तत्सुन्दरमिदम्।
एककार्यावेवावाम्” ।

স আহ — “সত্যবচনোঽহং ব্রহ্মরাক্ষসঃ। ভবানপ্যাত্মানং নিবেদয়তু”। সোব্রবীৎ — “অহং ক্রূরকর্মা চৌরঃ, দরিদ্রব্রাহ্মণস্য গোযুগং হতুং প্রস্থিতোহস্মি”।

অথ জাতপ্রত্যয়ো রাক্ষসোহব্রবীৎ — “ভদ্র! ষষ্ঠাহ্ণকালিকোহহম্। অতস্তমেব ব্রাহ্মণমদ্য ভক্ষয়িষ্যামি। তৎসুন্দরমিদম্। এককার্যাবেবাবাম্”

বাংলা অনুবাদ— সে বলল — “আমি সত্যবচন নামে এক ব্রহ্মরাক্ষস । আপনিও নিজেকে জানান অর্থাৎ আপনিও নিজের পরিচয় দিন।” সে বলল —“আমি ক্রূরকর্মা নামে এক চোর। দরিদ্র ব্রাহ্মণের গোরু দুটো চুরি করতে যাচ্ছি।”

তখন চোরের কথায় বিশ্বাস হওয়াতে রাক্ষস বলল—“মহাশায়, আমি ষষ্ঠ ভোজনকালে কেবল ভোজন করি। অতএব সেই ব্রাহ্মণকে আজ আমি খাব। তাহলে এটা ভালোই হল যে, আমরা দুজনে একই কাজ করতে যাচ্ছি।”

অংশ 5

अथ तौ तत्र गत्वैकान्ते कालमन्वेषयन्तौ स्थितौ ।

प्रसुप्ते च ब्राह्मणे तद्भक्षणार्थ प्रस्थितं राक्षसं दृष्ट्वा चौरोऽब्रवीत्— “भद्र! नैष न्यायः । यतो गोयुगे मयाऽपहते पशात्त्वमेनं ब्राह्मणं भक्षय “।
सोऽब्रवीत्—”कदाचिदयं ब्राह्मणो गोशब्देन वुध्येत तदानर्थकोऽयं
ममारम्भः स्यात्”।

অথ তৌ তত্ৰ গত্বৈকান্তে কালমন্বেষয়ন্তৌ স্থিতৌ।

প্রসুপ্তে চ ব্রাহ্মণে তদ্ভক্ষণার্থং প্রস্থিতং রাক্ষসং দৃষ্ট্বা চৌরোহব্রবীৎ — “ভদ্র! নৈষ ন্যায়ঃ । যতো গোযুগে ময়াহপহৃতে পশ্চাত্ত্বমেনং ব্রাহ্মণং ভক্ষয়”।

সোহব্রবীৎ — “কদাচিদয়ং ব্রাহ্মণো গোশব্দেন বুধ্যেত তদানর্থকোহয়ং মমারম্ভঃ
স্যাৎ”।

বাংলা অনুবাদ— তারপর তারা দুজনে সেখানে গিয়ে গোপনে সুযোগের অপেক্ষা করতে লাগল।

ব্রাহ্মণ ঘুমিয়ে পড়লে তাকে খেতে উদ্যত রাক্ষসকে দেখে চোরটি বলল—”মহাশায়, এটা অন্যায়। কারণ, আমি গোরু দুটো চুরি করার পর আপনার এই ব্রাহ্মণকে খাওয়া উচিত।”

সে বলল—“যদি কখনও গোরুর ডাকে এই ব্রাক্ষ্মণ জেগে ওঠে, তাহলে তো আমার অনর্থক হয়ে যাবে।”

অংশ 6

चौरोऽप्यब्रवीत्—”तवापि यदि भक्षणायोपस्थितस्यान्तरे एकोऽप्यन्तरायः स्यात्, तदाहमपि न शक्नोमि गोयुगमपहर्तुम्। अतः प्रथमं मयापहृते गोयुगे पश्चात्त्वया ब्राह्मणो भक्षयितव्यः”।

इत्थं चाहमहमिकया तयोर्विवदतोः समुत्पन्ने द्वैधे प्रतिरववशाद्ब्राह्मणो जजागर ।

अथ तं चौरोऽब्रवीत्—”ब्राह्मण ! त्वामेवायं राक्षसो भक्षयितुमिच्छति” इति ।

राक्षसोऽप्याह—”ब्राह्मण ! चौरोऽयं गोयुगं तेऽपहर्तुमिच्छति” ।

एवं श्रुत्वोत्थाय ब्राह्मणः सावधानो भूत्वेष्टदेवतामन्त्रध्यानेनात्मानं राक्षसादुद्गूर्णलगुडेन च चौराद्गोयुगं ररक्ष ।

চৌরোহপ্যব্রবীৎ — “তবাপি যদি ভক্ষণায়োপস্থিতস্যান্তরে একোহপ্যন্তরায়ঃ স্যাৎ, তদাহমপি ন শক্নোমি গোযুগমপহতুম্। অতঃ প্রথমং ময়াপহৃতে গোযুগে পশ্চাত্ত্বয়া ব্রাহ্মণো ভক্ষয়িতব্যঃ”।

ইত্থং চাহমহমিকয়া তয়োর্বিবদতোঃ সমুৎপন্নে দ্বৈধে প্রতিরববশাদ্ ব্রাহ্মণো জজাগর।

অথ তং চৌরোহব্রবীৎ — “ব্রাহ্মণ! ত্বামেবায়ং রাক্ষসো ভক্ষয়িতুমিচ্ছতি” ইতি।

রাক্ষসোহপ্যাহ — “ব্রাহ্মণ! চৌরোহয়ং গোযুগং তেহপহতুমিচ্ছতি”।

এবং শ্রুত্বোত্থায় ব্রাহ্মণঃ সাবধানো ভূত্বেষ্টদেবতামন্ত্রধ্যানেনাত্মানং রাক্ষসাদুদগূর্ণলগুড়েন চ চৌরাদ্ গোযুগং ররক্ষ।

বাংলা অনুবাদ

চোরও বলল—“যদি আপনারও খেতে যাওয়ার সময় কোনো বিঘ্ন ঘটে, তাহলে আমিও আর গোরু দুটো চুরি করতে পারব না। সুতরাং আগে আমি গোরু দুটো চুরি করে নেওয়ার পর আপনি ব্রাক্ষ্মণকে খাবেন।”

এইভাবে আমি আগে, আমি আগে করতে করতে বিবদমান তাদের দুজনের মধ্যে মারামারি শুরু হলে তাদের কোলাহলে ব্রাহ্মণ জেগে উঠল।

তারপর চোরটি ব্রাহ্মণকে বলল — “ব্রাহ্মণ, তোমাকেই এই রাক্ষস খেতে চায়।”

রাক্ষসও বলল—‘’ব্রাহ্মণ, এই চোর তোমার গোরু দুটোকে চুরি করতে চায়।”

একথা শুনে ব্রাক্ষ্মণ উঠে এক মনে ইষ্টদেবতার মন্ত্র জপ করে রাক্ষসের থেকে নিজেকে বাঁচাল, আর, উদ্যত লাঠি দিয়ে চোরের থেকে গোরু দুটোকে রক্ষা করল।

অনুরূপ পাঠ

একাদশ শ্রেণীর অন্যান্য পাঠ্যাংশগুলি জানতে নিম্নের link এ click করুন।

ব্রাহ্মণচৌরপিশাচকথা থেকে জিজ্ঞাস্য

ব্রাহ্মণচৌরপিশাচকথা পাঠ্যাংশ ব্রাহ্মণচৌরপিশাচকথা পাঠ্যাংশ।

1) ব্রাহ্মণচৌরপিশাচকথা গল্পের রচয়িতা কে ?

উত্তর- বিষ্ণুশর্মা

2) ব্রাহ্মণচৌরপিশাচকথা গল্পের উৎস গ্রন্থের নাম কী ?

উত্তর- পঞ্চতন্ত্র।

3) পঞ্চতন্ত্র গল্পগ্রন্থের কোন্ তন্ত্র থেকে পাঠ্যাংশটি নেওয়া ?

উত্তর- তৃতীয় তন্ত্র।

ধন্যবাদ

মহাভারতের ছোট প্রশ্নোত্তর তথা আমাদের www.sanskritruprekha.com সাইট Visit করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সংস্কৃতের আরো অনেক তথ্য পাওয়ার জন্য Home Page আসুন। Home Page পৌঁছানোর জন্য CLICK HERE👈

আমদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে CLICK HERE👈 

Leave a Comment